রাজনীতি দূষিতকরণে দলবদলানো তারকারাই সেরা

রাজনীতি দূষিতকরণে

রাজনীতির মঞ্চ আর রঙ্গমঞ্চ, দুইয়ের ব্যবধান বিস্তর। রাজনীতি যারা করেন তাদের সামনে থাকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য, দলীয় আদর্শ আর জনসেবার অঙ্গীকার। শোবিজে যারা কাজ করছেন তারাও মানুষকে বিনোদিত করার মধ্য দিয়ে পরোক্ষভাবে জনসেবাই করেন। চলচ্চিত্র বা নাটকে যারা অভিনয় করেন তাদের সবসময়ই দেখা যায় ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে নিজেদের উপস্থাপন করতে।

একেক চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে তারা পাল্টে ফেলেন রূপ ও চেহারা, সেটাই স্বাভাবিক। অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে তখনই, যখন শোবিজ তারকারা রাজনীতিতে আসেন। তাদের দেখা যায়, খুব দ্রুত চরিত্র পাল্টে ফেলতে। তারা ভুলে যান, রাজনৈতিক অঙ্গন রঙ্গমঞ্চ নয় মোটেও।

স্বাধীনতার পর থেকেই দেখা যাচ্ছে , যখন যে দল ক্ষমতায় আসে সেই দলের সঙ্গে তারকাদের ঘণিষ্ঠতা গড়ে তোলার প্রবণতা। দলের কর্মীবাহিনীর সঙ্গে না থাকে তাদের যোগাযোগ, দলের নীতি আদর্শ সম্পর্কেও তারা খুব একটা অবগত থাকেন না। দলীয় দু-একটা কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে ওইসব তারকারা চেহারা দেখান এবং আদায় করে নেন নানারকম সুবিধা। ক্ষমতা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাদের ভোলও পাল্টে যায়।

১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তনের পর একসময় বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী অনেকশিল্পীকেই ঘোর জাতীয়তাবাদী হয়ে উঠতে দেখা যায়। জিয়ার শাসনামলে এইসব শিল্পীদের জন্য বরাদ্দ ছিল বিভিন্ন ক্যাটাগরির জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। বিদেশে সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দলে তারাই জায়গা পেতেন। এফডিসি, শিল্পকলা একাডেমি আর বিটিভিতে তল্পিবাহক শিল্পীদের পুনর্বাসন করা হতো। এরশাদের আমলে দেখা যেত বিলাসী প্রেসিডেন্টের মনোজ্ঞ আয়োজনে যোগ দিচ্ছেন জিয়ার নামে জিকির তোলা জাতীয়তাবাদী শিল্পীরা।

নব্বুইয়ের পর বিএনপির অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থা জাসাসে যুক্ত হতে লাইন দাঁড়ান অসংখ্য তারকাশিল্পী।

১৯৯৬ এর নির্বাচনের আগে যাদের কোনোদিন আওয়ামী লীগে খুঁজে পাওয়া যায়নি, তাদের অনেকেই বঙ্গবন্ধু শিল্পী গোষ্ঠীতে নাম লেখাতে দেখা যায়।

২০০১ সালে হাওয়া ভবনের সুনজর পেতে অনেক শিল্পীই অঘোষিত প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন। সেনা সমর্থিত ওয়ান-ইলিভেনের সরকারের সঙ্গেও ভোল পাল্টে অনেক শিল্পী ঘণিষ্ঠতা গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন।

যাদের কখনো আওয়ামী লীগের কোনো অনুষ্ঠানে খুঁজে পাওয়া যায়নি, ২০০৮ সালে দল ক্ষমতায় আসার পর ধীরে ধীরে সরকারী দলের সঙ্গে ঘণিষ্ঠতা গড়ে তুলতে তৎপর হন তারা। তাদের মধ্যে সিংহভাগই এককালে জাসাসে জড়িত ছিলেন।

২০১৪ হয়ে ২০১৮ সাল অবধি এধারাই চালু আছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে সর্বাধিক সংখ্যক তারকা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান। তবে সেভাবে পাত্তা পাননি তারা। সেখান থেকে শিক্ষা না নিয়েই এবার দুই ডজন অভিনেত্রী তৎপর হয়েছেন ক্ষমতাসীন সংরক্ষিত মহিলা আসনের জন্য। তারা বুঝতেও চাননি সংরক্ষিত আসনটি দলের ত্যাগী ও আলোকিত নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকে। আবার এইসব তারকা অভিনেত্রীদের অনেকেই পূর্ববর্তী ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।

বিশ্লেষকদের মতে, রাজনীতি করতে হলে নীতি ও আদর্শের প্রতি অবিচল থাকা জরুরী। আদর্শ বিবর্জিত ব্যক্তিদের থেকে রাজনৈতিক দলগুলো যতোটা দূরে থাকবে ততই মঙ্গল। এমনই অনেক স্বনামধন্য তারকা আছেন যারা একসময় বিএনপির ঘনিষ্ঠ ছিলেন। কিন্তু এখন বিএনপির দুঃসময়ে তারা দলটির নামও মুখে নেন না।

টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে তারা সোচ্চার। তারা আওয়ামী লীগের দুঃসময়েও যে পাশে থাকবে না সেটা নিশ্চিত। শোবিজ তারকাদের রাজনৈতিক পল্টিবাজির পরিচয় পাওয়া যায় কিছু ছবিতে।

আরএম-২৩/২১/০১ (বিনোদন ডেস্ক, তথ্যসূত্র: পূর্বপশ্চিম)