বালি দ্বীপের রানী এখন আইরিন

শোবিজে পথচলার একদশক পূর্ণ করেছেন মডেল ও অভিনেত্রী আইরিন সুলতানা। ২০০৮ সালে একটি বিউটি কনটেস্টের বিশেষ খেতাব জয় করে শুরু হয় এই গ্ল্যামার গার্লের পথচলা। শুরুতে র‌্যাম্প মডেল হিসেবে গড়ে তোলেন পরিচিতির প্রথম বলয়। এরপর ফটোজনিক চেহারার এই সুন্দরী মডেলিংয়ে এসে অল্পসময়েই আলোচনায় উঠে আসেন। অতঃপর ছোটপর্দায় অভিনয়ে অভিষেক হয়, তখন থেকেই বড় পর্দার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকেন।

চলচ্চিত্রে শুরুটা ভালো না হলেও হালে ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করেছে। লাস্যময়ী এই অভিনেত্রীর অর্ধডজন ছবি এখন মুক্তির অপেক্ষায় আছে। ইদানিং বড়পর্দার পাশাপাশি নিউ মিডিয়া ওয়েব সিরিজেও সময় দিচ্ছেন। বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপের রানী হয়ে দুটি ওয়েব শুটিংয়ে অংশ নিচ্ছেন।

র‌্যাম্প মডেল আইরিনকে চলচ্চিত্রে জায়গা করে নিতে অনেক কসরত করতে হয়েছে। সব ধরনের নাচ শিখেছেন, মারপিটেও তালিম নিতে হয়েছে। ঢালিউডের সেনসেশন হয়ে আবিভূর্ত হতে দেহবল্লরী মেলে ধরতেও সংকোচ করেননি। হ্যাঁ, ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে উদার হয়ে বহু ফটোশ্যুটে অংশ নিয়ে সময়ে সময়ে তুমুল আলোড়ন তুলেছেন ঠিকই,তবে ঢালিউডে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি । কিভাবে পারবেন? প্রস্তুতির নানা পর্ব ডিঙ্গিয়ে সেলুলয়েডের পর্দায় অভিষেকের আগেই একাধিক হোঁচট ভেঙ্গে দেয় মন আইরিনের ।

শুরুতে বেশকয়েকটি সিনেমার শুটিংয়ে অংশ নিলেও আইরিন অভিনীত ‘প্রিয়তমা তুমি দাঁড়ি, আমি কমা’, ‘এ কেমন প্রেমের গল্প‘, `সেই তুমি’ এইসব চলচ্চিত্র কোনোটাই শেষমেষ মুক্তির আলো দেখেনি। কোনোটা হঠাৎ করেই মাঝপথে প্যাক আপ হয়ে গেছে, কোনোটার সবকাজ শেষ হলেও প্রযোজকে অনিহাতে রিলিজ পায়। এমন কি প্রথম দিকের এমন দু’একটা চুক্তি অনুযায়ী প্রাপ্য সম্মানীও তাকে দেওয়া হয়নি।

সত্যিকার অর্থে নায়িকা আইরিন বড়পর্দায় প্রথম ব্রেক দেন পরিচালক দেবাশীষ বিশ্বাস, তার পরিচালনায়‘ভালোবাসা জিন্দাবাদ’ ছবির মাধ্যমে। ২০১৩ সালের নভেম্বরে মুক্তি পাওয়া এ ছবিতে আ্ইরিনের বিপরীতে নায়ক ছিলেন আরেফীন শুভ। চলচ্চিত্রের মন্দ সময়ে মুক্তি পাওয়া মিস্টি প্রেমের পরিচ্ছন্ন এ ছবিটি ব্যবসায়িক সাফল্য পায়নি। আবার একটু ভড়কে গিয়ে থমকে যান একটু যেন থমকে যান এই অনিন্দ্য সুন্দরী। ফের পুরোদমে মডেলিংয়ে মন দেন।

পোকা নামক একটা জিনিস চলচ্চিত্রে আছে। অদৃশ্য ওই পতঙ্গের কামড়ে আবারও তাকে ফিরে আসতে হয় পারফর্মিং মিডিয়ার সেরা প্লাটফর্মে। দুই বছর বিরতির পর অভিনয় করেন পর পর দুটি ছবিতে। ২০১৫ সালে মুক্তি পায় আইরিন অভিনীত আলভী আহমেদের ‘ইউটার্ন’ এবং সাইফ চন্দনের ‘ছেলেটি আবোল তাবোল মেয়েটি পাগল পাগল’ নামক দুটি ছবি। কিন্তু এবারও বৃহস্পতি মুখ তুলে দেখলো না, এই নায়িকার চলচ্চিত্রে স্থায়ী হওয়ার তীব্র আকাঙ্খা। তাই ব্যবসায়িক সাফল্য পেলো না কোনোটাই। এফডিসিতে নিয়মিত আসা-যাওয়া রাস্তাটা ‘তেরা-ব্যাঁকাই’ রয়ে যায়।

চলচ্চিত্রে আইরিনের ভাগ্য পাল্টে দেয় এস এ হক অলীকের ‘এক পৃথিবী প্রেম’ ছবিটি। আনকোরা নায়ক আসিফ নুরের বিপরীতে অভিনয় করলেও আইরিন অভিনীত এই ছবিটি বক্সঅফিসে ক্লিক করে। শিল্পীর ভেতরের মেধাটুকু বের করে আনতে এসএ অলীক দক্ষতার পরিচয় দেন। এ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর আইরিনের নামের আগে জুড়ে যায় ‘নায়িকা’ শব্দটা। দেশীয় চলচ্চিত্রের বাজে সময়েও প্রতিমাসেই তাকে লম্বা সময দিতে হচ্ছে কোনো কোনো ছবির শুটিংয়ে। অনেক বাঁধাবিঘ্ন ডিঙিয়ে রূপালী জগতের ‘গ্রিনকার্ডটা’ বগলদাবা করতে হয়েছে লাস্যময়ী এই নায়িকাকে।

‘যদি লক্ষ্য থাকে অটুট বিশ্বাস হৃদয়ে’- এই গানটি যেন খাপে খাপ মিলে যায় আইরিনের ক্যারিয়ারের সঙ্গে। এ প্রসঙ্গে স্টাইলিস্ট এই নায়িকা বলেন, আমার জায়গা থেকে আমি সবসময় মনে করি সঠিক রাস্তায় ছিলাম এবং আছি। শুরুর দিকে নানা কারণে মন ভাঙলেও আমি লক্ষ্য হারাইনি। অবশ্য এখনই বলা যাবে না যে লক্ষ্যে পৌছে গেছি। আরও বহু পথ পাড়ি দিতে হবে জানি। লক্ষ্য একটাই, নিজেকে একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে গড়ে তোলা। এ গড়ার শুরু আছে, শেষ নেই। কাজের মধ্য দিয়ে শিখছি প্রতিদিন, শেখার মাধ্যমে নিজেকে একটু একটু করে গড়ছি ।

আইরিন বললেন, বর্তমানে যে ছবিগুলো মুক্তি অপেক্ষায় রয়েছে কিংবা কাজ করছি সেগুলো দর্শকদের কাছে ভালো লাগবে বলে আমি বিশ্বাস করি। তিনি জানান, বর্তমানে তার অভিনীত হাফ ডজন চলচ্চিত্র মুক্তির অপেক্ষায় আছে। এগুলো হলো- দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ‘আকাশমহল’, ওয়াহিদুজ্জামান ডায়মন্ডের ‘শেষ কথা’, গাজীউর রহমানের ‘এই তুমি সেই তুমি’, শফিকুল ইসলাম সোহেলের ‘ভোলা’, অরণ্য পলাশের ‘গন্তব্য’, বুলবুল জিলানীর ‘রৌদ্রছায়া’, অনন্য মামুনের ‘আহারে জীবন’, কাজী আমিরুল ইসলাম শোভার ‘সেভ লাইফ’, সাইফ চন্দনের ‘টার্গেট’ ইত্যাদি। প্রতিটি ছবিতেই দর্শক আমাকে নতুনরূপে দেখতে পাবেন। গল্প প্রধান এ ছবিগুলো নিয়ে আমি দারুণ আশাবাদী। এসব ছবির বেশির ভাগই মুক্তি পাবে এ বছর। এগুলোর মাধ্যমে আমার অভিনয় ক্যারিয়ার সুসংহত হবে বলে আশা করছি। এছাড়া শিগগিরই আরও কয়েকটি ছবিতে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হচ্ছি।

ছোটপর্দা নাটকে অনেকদিন ধরে অনুপস্থিত আইরিন ইদানিং ঝুঁকেছেন নিউ মিডিয়া ‘ওয়েব সিরিজে’। অনলাইনের এ মাধ্যমটি আগামী দিনে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে ভেবেই বোধহয় চলচ্চিত্রের পাশাপাশি ওয়েব সিরিজের শুট্যিংয়ে দিচ্ছেন। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই তিনি উড়াল দিয়েছেন ইন্দোনেশিয়ায়। বালি দ্বীপসহ দেশটির বিভিন্ন দ্বীপে সৈকত নাসির পরিচালিত ‘ট্র্যাপড’ আর অনন্য মামুনের‘পার্টনার’ ওয়েব সিরিজের শুটিং করছেন আইরিন। এর মধ্যেই আরেকটি ওয়েব সিরেজে যুক্ত হয়েছেন। অনন্য মামুন পরিচালিত ‘ধোকা’ নামের এই সিরিজটির শুটিং হবে দেশে। ইন্দোনেশিয়া থেকে আইরিন ঢাকায় ফিরবেন ২১ ফেব্রুয়ারি।

ওয়েব সিরিজে অভিনয় প্রসঙ্গে আইরিনের ভাষ্য, বর্তমানে অনেক ভালো মানের ওয়েব সিরিজ তৈরি করছেন আমাদের দেশের নির্মাতারা। এগুলোর যথেষ্ট দর্শক চাহিদা রয়েছে। এসব দিক বিবেচনা করে ওয়েব সিরিজে অভিনয়ের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়েছি। চমৎকার কিছু গল্পের ওয়েব সিরিজে আমি কাজ করছি। ইন্দোনেশিয়ার মনোরম সব লোকেশনে এগুলোর শুটিং চলছে। আমার প্রত্যাশা, কাজগুলো দেখে দর্শক মুগ্ধ হবেন।

এসএ্ইচ-১৮/১১/১৯ (বিনোদন ডেস্ক)