‘কষ্ট দিয়ে থাকলে ক্ষমা চেয়ে নেব’

কষ্ট দিয়ে থাকলে

অনেকে মনে করেন এ মুহূর্তে তিনি বলিউডের এক নম্বর অভিনেত্রী। অথচ ইন্টারভিউ নিতে গিয়ে মনে হল আলিয়া ভাটের সঙ্গে প্রজাপতির তুলনা করলে মোটেও ভুল হবে না। ছোটখাটো চেহারা। স্বভাবে ছটফটে। স্থির হয়ে বসতে পারেন না একদণ্ডও।

সাক্ষাৎকারের সময় কথা বলতে বলতে প্রায়ই হাতের আঙুলগুলো নাড়াচাড়া করেন, পা নাচান, পায়ের পাতা নাড়তে থাকেন আর মাঝে মাঝেই মোবাইলে খুটুরখুটুর। কে বলবে এই ছটফটে দুষ্টু মেয়েটাই ক্যামেরার সামনে বাঘিনী!

তাঁর ঠোঁটের কোণে সর্বক্ষণ লেগে থাকা দুষ্টুমিষ্টি হাসি আর গালের টোল দর্শক হৃদয়ে ছোরা মেরে ঘায়েল করে দিতে বাধ্য। এক কথায় আলিয়াকে বোঝাতে গেলে একটাই শব্দ মাথায় আসে-মিষ্টি!

‘গালি বয়’ রিলিজের আগে যে আলিয়াকে দেখলাম, তাঁর মুখেও হাসি। আসন্ন ফিল্ম নিয়ে সে রকম টেনশন নেই। কঙ্গনা রানাওয়াত বিতর্কের রেশও নেই। কঙ্গনা প্রসঙ্গে বরং মিষ্টি হেসে বললেন, “কঙ্গনা খুব সাহসী আর স্পষ্টবক্তা। আমি তো ইচ্ছে করে ওকে কষ্ট দিতে কিছু করিনি। আমার কোনও আচরণ যদি ওকে কষ্ট দিয়ে থাকে, তাহলে আমি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা চেয়ে নেব।” শুধু তাই নয়।

আলিয়া আরও জুড়ে দেন, “আমি তো বরাবর বলেছি কঙ্গনা একজন অসাধারণ অভিনেত্রী। মানুষ হিসেবেও ওর তুলনা হয় না। জানি না এই পরিস্থিতি কেন তৈরি হল। আসলে আমি শুটিং নিয়ে এত ব্যস্ত ছিলাম যে অন্য কোনও দিকে মন দিতে পারিনি। আমি কিন্তু কাউকে কষ্ট দিতে চাই না।”

অথচ এই কঙ্গনাই বলেছেন, আলিয়া নাকি ‘মেরুদণ্ডহীন’, ‘করণ জোহরের হাতের পুতুল’! নিজেকে শর্ট টেম্পার্ড বলেন। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আচরণে আলিয়া বরাবরই অত্যন্ত ভদ্র। তাঁর মধ্যে কোনও নায়িকাসুলভ ‘ঘ্যাম’ নেই। নতুন ফিল্ম নিয়ে সকাল থেকে পরপর সাক্ষাৎকার দিতে দিতে দৃশ্যতই ক্লান্ত। তবু মিডিয়ার প্রত্যেককে হাসিমুখে “অওর ক্যায়া হাল হ্যায়?” জিজ্ঞেস করতে ভোলেন না।

আলিয়ার সঙ্গে আরও একবার কথা বলে মনে হল, যেন পাশের বাড়ির মেয়েটার সঙ্গে বসে গল্প করছি। কে বলবে, এই আলিয়াকেই বলিউডের এক নম্বর হিরোইন হিসেবে দেখতে শুরু করেছেন অনেকে! বলিউডের রানি হওয়ার মতো মারকাটারি সুন্দরী হয়তো তিনি নন।

কিন্তু অভিনয় দক্ষতা দিয়ে ক্ল্যাসিক্যাল রূপের অভাব একেবারে ঢেকে দিয়েছেন বলি-পাড়ার ‘পটাকা কুড়ি’। আলিয়া বুঝিয়ে দিয়েছেন শুধু রূপ থাকলেই হয় না, এক নম্বর নায়িকা হতে গেলে অভিনয় জিনিসটাকে গুলে খেতে হয়।

‘হাইওয়ে’, ‘উড়তা পঞ্জাব’, ‘রাজি’, ‘ডিয়ার জিন্দেগি’-র মতো একাধিক ছবিতে আলিয়া প্রমাণ করেছেন যে তাঁকে যে চরিত্রই দেওয়া হবে, তা-ই অসাধারণ অভিনয় দক্ষতায় ফুটিয়ে তুলবেন। বিশেষত গত বছর ‘রাজি’র পর থেকে পরিচালকেরা তাঁকে রীতিমতো সমীহ করছেন। ফিল্ম সমালোচকদের মুখও আপাতত বন্ধ। বক্স অফিসের রেকর্ড?

ওটা বলছে, এই মুহূর্তে আলিয়া ভাট বলিউডের একজন অত্যন্ত ব্যাঙ্কেবল স্টার। হবেন না-ই বা কেন? বেশির ভাগ অভিনেত্রী যেখানে বড় ব্যানার বা হাই-প্রোফাইল কো-স্টার দেখে ছবি সাইন করেন, আলিয়া সেখানে পরপর ‘হটকে’ ফিল্মে নানা ধরনের চরিত্র বেছে চলেছেন। ছবি বাছাইয়ের সময় কী কী মাথায় রাখেন?

আলিয়ার স্পষ্ট জবাব, “গল্প আর চরিত্রটা কীভাবে সাজানো হয়েছে সেটা আমার কাছে খুব গুরুত্ব রাখে। অনেক সময় দেখি চরিত্র হয়তো অসাধারণ, কিন্তু গল্পটা ততটা জমাটি হল না। সেটা আমার পছন্দ হয় না।”

সহ-অভিনেতা কারা, দেখেন না? আলিয়ার পাল্টা, “কেন দেখব? পরিচালক কাকে কোন চরিত্রের জন্যে বাছলেন, কে ছবির গানে সুর দিল, এ সব তখনই দেখব যখন ছবির প্রযোজনা করব। না হলে এসব নিয়ে মাথা ঘামাবার কোনও প্রয়োজন নেই।”

কাল ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে মুক্তি পেতে চলা ‘গালি বয়’-তে প্রথমবার আলিয়ার হিরো রণবীর সিং। মিস্টার দীপিকা পাড়ুকোনের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? “কী সাংঘাতিক এনার্জি রণবীরের! সব সময় সবাইকে মাতিয়ে রাখছে। আমিও বেশ এনজয় করেছি। যেমন অসাধারণ অভিনয়, তেমনি ভাল মানুষ রণবীর। ওর মধ্যে একটা পজিটিভ এনার্জি রয়েছে। নিজের মন ভাল না থাকলেও দর্শকের মুখে হাসি ফোটানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে যায়।”

‘গালি বয়’—তে বেশ অন্য রকম চরিত্রে দেখা যাবে আলিয়াকে। পর্দার ‘সাফিনা’র সঙ্গে বাস্তবের আলিয়ার কতটা মিল রয়েছে? অভিনেত্রীর কথায়, “আমি পুরোপুরি ও রকম নই তবে আমার চরিত্রেরও একটা টাপোরি দিক রয়েছে। সেটা এই ফিল্মে কাজ করতে গিয়েই বুঝেছি। আর তাই কাজটা খুব উপভোগ করেছি। আসলে আমার ডিএনএ-তে একজন মুম্বইকর বাস করে, তাই সাফিনার চরিত্রের সঙ্গে আমি খুব ভাল রিলেট করতে পেরেছি। শি ইজ আ নো-ননসেন্স গার্ল। যা বলার মুখের উপর বলে দেয়। নিজের কাজটা করিয়ে নিতে জানে। ওর এই অ্যাটিটিউড আমাকে মুগ্ধ করেছে। যদিও সাফিনার অনেক ত্রুটি রয়েছে।”

সাফিনার ত্রুটি রয়েছে। আলিয়ারও কি কোনও ত্রুটি আছে? “না। আমার মাথার মধ্যে সব সময় ঘোরে যে আমাকে সঠিক হতে হবে, ভাল হতে হবে। সেটা মাঝে মাঝে খুবই বিরক্তিকর। তার চেয়ে আমার মধ্যে একটু ভুলত্রুটি থাকলে ভালই হত!”

আসন্ন ফিল্মে কো-স্টার রণবীর সিং হলেও এ মুহূর্তে অন্য রণবীর নিয়ে আলিয়ার দিকে বেশি প্রশ্ন ছুটে আসছে! বলিউডের সবচেয়ে ‘হট’ নায়কের গার্লফ্রেন্ড তিনি। রণবীর কাপুর-আলিয়া ভাটের প্রেম প্রকাশ্যে অনেক মেয়ের হৃদয় ভেঙেছে ঠিকই। কিন্তু এই সম্পর্কে যে আলিয়া বেশ সুখী, তা তাঁর চোখেমুখে পরিষ্কার। রণবীরের প্রেমে তিনি এতটাই মজে যে, ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ শুটিংয়ের সময় নিজের ডায়ালগ ভুলে গিয়েছিলেন! অয়ন মুখোপাধ্যায়ের ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ ফিল্মে প্রথমবার একসঙ্গে দেখা যাবে বলিউডের সবচেয়ে আলোচিত কাপলকে। মহেশ ভাটের কন্যা আর ঋষি কাপুরের পুত্র কবে ছাদনাতলায় বসবেন, তা এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। তবে বি-টাউনে জোর গুঞ্জন, পরের বছরই নাকি বিয়েটা সেরে ফেলবেন তাঁরা। আপাতত প্রচুর বিয়ের নিমন্ত্রণ পাচ্ছেন। কিন্তু সব ক’টায় যাওয়া হচ্ছে না।

আরএম-০৭/১৪/০২ (বিনোদন ডেস্ক, তথ্যসূত্র: সংবাদপ্রতিদিন)