নির্মাণাধীন ছবির ভবিষ্যৎ কী?

নির্মাণাধীন ছবির

সম্প্রতি সিনেমাহল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেয়, সিনেমা ব্যবসা মন্দার কারণে আগামী ১২ এপ্রিল থেকে সংগঠনের আওতাধীন সব সিনেমাহল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হবে।

মূলত বিদেশি ছবি আমদানির সহজ নীতিমালা ও দেশীয় ছবি নির্মাণ বাড়াতে সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে এ ঘোষণা দেয়া হয়েছে বলে সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন। হল মালিকদের দাবি, দেশীয় ছবির সংকটে ঢাকাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি।

ছবি আমদানির জন্য সাফটা চুক্তির যে নীতিমালা রয়েছে সেটা আরও সহজ করতে হবে। প্রয়োজনে হলিউড ছবির পাশাপাশি বলিউডের হিন্দি ও উপমহাদেশের অন্যান্য দেশের ছবি মুক্তির প্রথম দিনই বাংলাদেশে প্রদর্শনের সুযোগ করে দিতে হবে।

অনেকের মতে সিনেমাহল মালিকদের এ দাবি মূলত ভারতীয় হিন্দি ছবি আমদানি করে ভারতে মুক্তির দিনেই বাংলাদেশে প্রদর্শন করা। এর আগেও এমন দাবি তারা সরকারের কাছে উত্থাপন করেছিল। কিন্তু সফল হয়নি। এবার অনির্দিষ্টকালের জন্য হল বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়ে মূলত পুরনো দাবিকেই তারা নতুন করে উত্থাপন করেছেন। এসব দাবির পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ও মধুমিতা মুভিজের কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘হলে সিনেমা নেই।

দেশে ছবি হচ্ছে না। বিদেশের ছবিও সহজভাবে আনা যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে অনেক হল মালিক এ ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু আমরা যারা আছি তাদের হলগুলো সচল রাখতে আমাদের দাবিগুলো পর্যালোচনা করতে সরকারের সুদৃষ্টি খুব প্রয়োজন। আমরা দেশে সিনেমা নির্মাণ বাড়ানোর উদ্যোগ চাই। সেই সঙ্গে বিদেশি ছবি আমদানি করতে সহজ প্রক্রিয়াও চাই।’

হল মালিকদের দাবি একেবারেই অযৌক্তিক নয়। কারণ গত পাঁচ বছরে ক্রমান্বয়ে দেশি ছবি নির্মাণ ও মুক্তির হার কমেছে। সেটি গত বছর এসে ঠেকেছে ৪৫-এ। মাত্র ৪৫টি ছবি দিয়ে পুরোট একটি বছর কীভাবে সিনেমাহল মালিকরা ব্যবসা করবেন সেটা সত্যিই ভাবনার বিষয়। অন্যদিকে যে ৪৫টি ছবি মুক্তি পেয়েছে সেগুলোর মধ্যে মানসম্মত বা দর্শক দেখার মতো ছবি ১০টিও নেই।

এর প্রভাব পড়ছে সিনেমাহলের ওপর। হল মালিকরা ব্যবসা গুটিয়ে হল বন্ধ করে দিয়ে অন্য ব্যবসায় মনোযোগ দিচ্ছেন। যারা এখনও ধারদেনা করে হল টিকিয়ে রেখেছেন তারাই বেঁচে থাকার তাগিদে বিদেশি ছবির প্রতি যুক্তি দেখিয়ে হল বন্ধ করে দেয়ার আল্টিমেটাম দিয়েছেন।

এদিকে হল বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, শিল্পী সমিতিসহ আরও কয়েকটি সংগঠন। হল বন্ধ করে দেয়া হলে তারা আন্দোলনে যাবেন বলেও গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। কিন্তু কেন আন্দোলনে যাবেন সেটাও স্পষ্ট করে বলতে পারেননি অনেক শিল্পী। তাদের মতে, সিনেমাই তো নেই, হল মালিকরা কী করবেন? কারও কারও ব্যক্তিস্বার্থ ও দলাদলিতে ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা একেবারেই তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে, সেটা কী এসব সংগঠনের নেতারা ভেবে দেখেছেন?

সিনেমাহল বন্ধ হয়ে গেলে মুক্তিপ্রতীক্ষিত ও নির্মাণাধীন ছবিগুলোর অবস্থা কী হবে? এমন প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে চিত্রপুরীতে। কেউ কেউ বলছেন, সিনেমাহল আদপে বন্ধ হবে না। এসব আল্টিমেটাম আসলে হিন্দি ছবি প্রদর্শনের অনুমতি আদায়ের জন্য। আবার কেউ কেউ বলছেন, সিনেমাহলগুলো আসলেই বন্ধ করে দেয়া উচিত। কারণ, দেশি বস্তাপচা ছবি প্রদর্শন করার চেয়ে হল বন্ধ থাকাই উত্তম। যদি একান্তই খোলা রাখতে হয়, তাহলে বিদেশি ছবি দিয়েই হল মালিকরা বেঁচে থাকুক।

দেশি শিল্পী, কলাকুশলীরা যেদিন নিজেদের যোগ্য মনে করে উন্নতমানের ছবি তৈরি করতে পারবেন সেদিন দেশি ছবি চলবে সিনেমাহলে। এসব যুক্তির বাইরেও কিছু প্রশ্ন থেকে যায়। অনেকে না মানলেও বছরব্যাপী ছবি মুক্তি দেয়ার একটি শিডিউল থাকে। হল বন্ধ করে রাখা হলে মুক্তিপ্রতীক্ষিত সেসব ছবি মুক্তির তারিখ নিয়ে জটিলতায় পড়বে। এরপর নতুন আরেকটি সংকট তৈরি হবে। তাছাড়া সামনেই রোজার ঈদের মতো বড় উৎসব রয়েছে।

তাই সব ধরনের সংকট এড়াতে এখনই হল সংক্রান্ত জটিলতার অবসান ঘটাতে সরকারকে এগিয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছেন সিনেবোদ্ধারা।

আরএম-০৯/১৫/০৩ (বিনোদন ডেস্ক)