বিনোদন জগতের বিভিন্ন প্রজন্মের তারকাদের বিচ্ছেদের কাহিনী

বিনোদন জগতের

সংগীতশিল্পী হৃদয় খান ও অভিনেত্রী সুজানার ভাঙনের সুর মুছতে না মুছতেই নতুন করে বেজে উঠলো তারকা দম্পতি নাদিয়া ও শিমুলের বিচ্ছেদের গান। বেশিরভাগক্ষেত্রেই দেখা যায়, ভালোবেসেই ঘর বাঁধেন তারকা দম্পতিরা। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে বিয়ের পর বিপরীতমুখী অবস্থানে চলে যান তারা। কেউ হয়তো সর্বোচ্চ চেষ্টা চালান সুজানার মতো। প্রিয় তারকাদের প্রেম-বিয়ে কিংবা আনন্দের খবর নিয়ে যেমন ভক্তদের আগ্রহ আছে তেমনি তাদের বিচ্ছেদের খবরও জানতে চান অনেকে। খবর : জাগোনিউজ২৪

তাদের জন্য দেশি শোবিজে বিভিন্ন প্রজন্মের তারকাদের বিচ্ছেদের কাহিনী নিয়ে এই বিশেষ আয়োজন-

জহির রায়হান-সুমিতা দেবী : কাসুন্দি ঘাঁটলে দেখা যায় একাত্তরের নিখোঁজ বরেণ্য চলচ্চিত্র পরিচালক জহির রায়হান সুমিতা দেবীর বিচ্ছেদের খবর। তাদের ডিভোর্স হয়েছিল নায়িকা সুচন্দাকে জহির রায়হান বিয়ে করেছিলেন বলে।

আলমগীর-রুনা লায়লা : নায়ক আলমগীর ও গীতিকার খোশনুরের ডিভোর্স হয় বরেণ্য শিল্পী রুনা লায়লার সঙ্গে আলমগীরের প্রেমের কারণে। একই কারণে সংসার ভেঙেছিল সংগীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলী ও শিল্পী সালমা আলীরও।

হুমায়ুন ফরিদী-সুবর্ণা মুস্তাফা : নাট্যমঞ্চে একসঙ্গে অভিনয় করতে গিয়ে পরিচয় অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদী ও সুবর্না মুস্তাফার। সেখান থেকেই তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়। ফরিদী তার প্রথম স্ত্রী মিনুর সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করে ১৯৮৪ সালে অভিনেত্রী সুর্বনা মুস্তফাকে বিয়ে করেন। এই দম্পতি দীর্ঘ ২৪ বছর একসঙ্গে সংসার করেন। ২০০৮ সালে হুট করেই সুবর্ণা ডিভোর্স দেন হুমায়ুন ফরিদীকে। তাদের ঘরে কোনো সন্তান নেই। বিচ্ছেদের পর হুমায়ূন ফরিদী আর সংসারের পথ না মাড়ালেও নাট্য পরিচালক বদরুল আনাম সৌদকে বিয়ে করেন সুবর্ণা। নিজের চাইতে ১৪ বছরের ছোট সৌদের সাথেও সুবর্ণার বিচ্ছেদ হয়েছে বলে গুঞ্জন শোনা যায় আজকাল।

নকীব খান-সামিনা চৌধুরী : জনপ্রিয় শিল্পী সুরকার ও সংগীত পরিচালক নকীব খান বিয়ে করেছিলেন সংগীতশিল্পী সামিনা চৌধুরীকে। মতের অমিল হওয়ায় সামিনা চৌধুরী ডিভোর্স দেন নকীব খানকে। বিয়ে করেন অনুষ্ঠান নির্মাতা এজাজ খান স্বপনকে।

কুমার বিশ্বজিৎ-রুনা : আরেক জনপ্রিয় শিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ বিয়ে করেছিলেন মডেল অভিনেত্রী রুনাকে। ভেঙে যায় তাদেরও সংসার। রুনা বেছে নেন প্রবাস জীবন।

ইলিয়াস কাঞ্চন-দিতি : বাংলা চলচ্চিত্রের অসম্ভব জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন ও জনপ্রিয় নায়িকা দিতি ভালোবসে বিয়ে করেছিলেন একে অপরকে। সন্তানদের কথা চিন্তা করেই নাকি তারা একে অপরের হয়েছিলেন। কিন্তু বেশি দিন টিকেনি এ সংসার। যে সন্তানদের কথা চিন্তা করে তারা এক হয়েছিলেন সেই সন্তানরা একে অপরকে এক পরিবারের ভাবতে পারেননি। পিতা মাতারা আর কি করবেন!

আফসানা মিমি-গাজী রাকায়েত : একটি নাট্যদলে কাজ করতে গিয়ে আফসানা মিমির পরিচয় হয় নির্মাতা-অভিনেতা গাজী রাকায়েতের সঙ্গে। পরিচয়ের পর সখ্য। সময়ের ব্যবধানে সেই সখ্য গড়ায় প্রেমে। অতঃপর বিয়ে। কিন্তু বিয়েটা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ১৯৯৬ সালে বিচ্ছেদ ঘটে আফসানা মিমি-গাজী রাকায়েতের।

শমী কায়সার-রিঙ্গো : ১৯৯৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের চিত্রনির্মাতা রিঙ্গোকে বিয়ে করেন শমী কায়সার। বিয়ের স্থায়িত্ব ছিল দুই বছর। নানা কারণে তাদের মধ্যে দূরত্ব বেড়ে সেই বিয়ে ভেঙে যায়। এরপর শমী আবার বিয়ে করেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরাফাত নামের এক শিক্ষককে।

পার্থ বড়ুয়া-শ্রাবন্তী : ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন সোলসখ্যাত ব্যান্ড তারকা পার্থ বড়ুয়া এবং অভিনেত্রী শ্রাবন্তী। খুব বেশিদিন সেই প্রেম স্থায়ী হয়নি তাদের।

জেনি-অমিতাভ রেজা : বিজ্ঞাপন নির্মাতা অমিতাভ রেজাকে বাবা-মায়ের অমতে ভালোবেসে বিয়ে করেন অভিনেত্রী জেনি। দীর্ঘ প্রেমের বিয়ে হলেও তাদের সংসার বেশিদিন টেকেনি।

রুমানা-আনজাম মাসুদ : লালবাগের হাঁসমার্কা কেশ তেলের বিজ্ঞাপন দিয়ে রুমানা সবার দৃষ্টি কাড়েন। এরপর বিজ্ঞাপন নির্মাতা-অভিনেতা আনজাম মাসুদকে প্রেম করে বিয়ে করেন। কিন্তু ভালোবাসার রঙ মেশানো সেই বিয়ে বেশিদিন টেকেনি। একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ এনে বিচ্ছেদের পথ বেছে নেন।

জেমস-রথি : জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা জেমস ভালোবেসে বিয়ে করেন অভিনেত্রী রথিকে। কিন্তু তাদের এ সংসার বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। জেমস প্রেমে মজে গিয়েছিলেন প্রবাসী এক তরুণীর প্রেমে। আর এতেই ভেঙে যায় তাদের সংসার।

রবি চৌধুরী-ডলি সায়ন্তনী : সংগীতশিল্পী রবি চৌধুরী ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন সংগীতশিল্পী ডলি সায়ন্তনীকে। কিন্তু তাদের ভালোবাসার সংসার শেষ পর্যন্ত টেকেনি।

তারিন-সোহেল আরমান : চলচ্চিত্র নির্মাতা আমজাদ হোসেনের ছেলে অভিনেতা ও পরিচালক সোহেল আরমানের সঙ্গে প্রেম করে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন অভিনেত্রী তারিন। বাবা-মায়ের অজান্তে পালিয়ে গিয়ে ২০০১ সালে তারিন বিয়ে করেন সোহেলকে। ঘটনাটি গোপন রাখার চেষ্টা করলেও পরে জানাজানি হয়ে যায়। সে বিয়ে খুব আলোচিত হয়। তার চেয়েও দ্বিগুন আলোচিত হয় বছর ঘুরতে না ঘুরতেই এই দম্পতির সংসার ভাঙনে।

তাজিন-এজাজ মুন্না : অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ ছোট পর্দার পরিচালক এজাজ মুন্নাকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। তাদের সংসারও টেকেনি বেশিদিন। এজাজ মুন্না বিরুদ্ধে তাজিন মাদকাসক্তি ও পরনারী আসক্তির অভিযোগ তোলায় তাদের সংসারে ফাটল ধরে। তাজিনের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে মুন্না লাক্স তারকা ও অভিনেত্রী মমকে বিয়ে করেন। আর তাজিন বিয়ে করেন এক মিউজিশায়নকে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তাজিন দ্বিতীয় সংসারে ভালো থাকলেও এজাজ মুন্নার সংসার ভাঙনের গুঞ্জন আজকাল সর্বত্রই। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে চিত্র নির্মাতা শিহাব শাহীনের সাথে নাকি পরকীয়ায় মজেছেন মুন্নার দ্বিতীয় স্ত্রী লাক্স তারকা মম।

বিজরী-ইমন : অভিনেত্রী বিজরী বরকত উল্লাহ ও সঙ্গীত পরিচালক শওকত আলী ইমন একে অপরকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। তাদের ঘরে ফুটফুটে সুন্দর এক কন্যা সন্তান জন্ম হয়। কিন্তু তাদের এ বিয়ে বেশিদিন টেকেনি। ডিভোর্স হয় তাদের। বিজরী পরে বিয়ে করেন অভিনেতা ইন্তেখাব দিনারকে। অন্যদিকে ইমন পরবর্তীতে একাধিক সম্পর্কে জড়ালেও নতুন করে এখনো আর কাউকে বিয়ে করেননি।

জয়া-ফয়সাল : অভিনেত্রী জয়া মডেল ফয়সালের সঙ্গে প্রেম করে বিয়ে করেন। বিয়ের পর ধানমন্ডিতে প্রেমের সোপান হিসেবে একটি ফাস্টফুডের দোকান খুলতেও দেখা যায় তাদের। সুখেই চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু হঠাৎ অজানা কিছু বিষয় নিয়ে মনোমালিন্যের ঝড় বইতে শুরু করে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। স্বামী ফয়সাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তাকে ডিভোর্স লেটার পাঠান জয়া।

অপি করিম-উজ্জ্বল : অভিনেত্রী অপি করিম ২০০৭ সালে জাপান প্রবাসী কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার তাসির আহমেদকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর কিছুদিন ভালোই ছিলেন তারা। তারপর হঠাৎ তাদের বিচ্ছেদের গুঞ্জন ওঠে। অপির মিডিয়ায় ব্যস্ততা এবং মিডিয়ার লোকদের সঙ্গে মেলামেশাকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না তাসির। অন্যদিকে তাসিরের বিরুদ্ধেও আগে আরো একটি বিয়ে করাসহ নানা অভিযোগ তোলেন অপি। ফলে বছর না গড়াতেই তাদের সংসার ভেঙে যায়। এরপর অপি প্রেমে পড়েন নাট্য পরিচালক মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের। তারা বিয়েও করেন। কিন্তু সেই বিয়েও বেশিদিন টেকেনি। তাদেরও বিচ্ছেদ হয়ে যায়।

অপূর্ব-প্রভা : ছোট পর্দার অভিনয় শিল্পী অপূর্ব ও প্রভা ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু প্রভা বিয়ের আগে রাজিব নামক এক ছেলের সঙ্গে প্রেম ও অবাদ মেলামেশায় জড়িয়েছিলেন। অপূর্বর সঙ্গে প্রভার বিয়ের কিছুদিন পরে রাজিব ও প্রভার কিছু ভিডিও চিত্র ফাঁস হলে, অপূর্ব ডিভোর্স দেন প্রভারে। বিচ্ছেদের পর অপূর্ব নতুন সংসার বাঁধেন নাজিয়া হাসান অদিতির সঙ্গে। এর কিছুদিন পর মাহমুদ শান্ত নামের একজনকে বিয়ে করেন প্রভা।

হিল্লোল-তিন্নি : মিডিয়াপাড়ায় হিল্লোল-তিন্নির বিয়ে বেশ আলোচিত ছিল। এটাও ছিল ভালোবাসার বিয়ে। তিন্নি ধর্মান্তরিত হয়ে মা-বাবাকে ছেড়ে হিল্লোলের কাছে চলে আসেন। এই দম্পত্তির ঘর আলো করে আসে এক কন্যা সন্তান। তবে এই তারকা দম্পত্তির সংসারও টেকেনি। তিন্নির প্রতি মাদক ও পরপুরুষের আসক্তির অভিযোগ তোলেন হিল্লোল। এ নিয়ে দু’জনই দু’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ-পাল্টা-অভিযোগ তোলেন। এক সময়ের গ্লামার গার্ল তিন্নি এখন চিকিৎসকের পরামর্শে রেস্টে আছেন। হিল্লোল আরেক মডেল অভিনেত্রী নওশীনের সঙ্গে নতুন করে সংসার পেতেছেন।

মোনালিসা-ফাইয়াজ শরীফ : জনপ্রিয় মডেল, অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী মোজেজা আশরাফ মোনালিসা ২০১২ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ফাইয়াজ শরীফের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। একই বছরের ম্যাজিক ডে ১২.১২.১২তে ঢাকার একটি রেস্টুরেন্টে মোনালিসা ও ফাইয়াজের বিবাবহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উভয় পরিবারের ঘনিষ্ঠজনেরা উপস্থিত ছিলেন। বিয়ের মাত্র দুই তিনদিন পরই শুরু হয় দু’জনের মধ্যে ভুল বুঝাবোঝি। শেষমেষ বিচ্ছেদেই রক্ষা! প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন মোনালিসার প্রেম ছিলো সঙ্গীত তারকা হাবিব ওয়াহিদের সাথে।

হৃদয়-সুজানা : হৃদয় খান প্রায় চার বছর ধরে প্রেম করে গত বছরের ১ আগস্ট বিয়ে করেন সাত বছরের বড় সুজানাকে। পত্র-পত্রিকা আর টিভির সামনেও স্বগর্বে নিজের প্রেমের কথা, ভালোবাসার কথা বলেছেন হৃদয় খান। কিন্তু হৃদয় খানের অনেক সাধনার বিয়ে বছর ঘুরার আগেই ভাঙনের মুখে পড়েছে। কারণ, পারস্পরিক সমঝোতা না হওয়া। গত ৬ এপ্রিল বিচ্ছেদ হয় হৃদয়-সুজানার।

নাদিয়া-শিমুল : শিমুল-নাদিয়া ২০০৩ সালে পরস্পরের প্রেমে পড়েন। দীর্ঘদিন প্রেমের পর ২০০৮ সালে তারা বিয়ে করেন। তবে ২০১৪ সালের মাঝামাঝিতে তাদের বিচ্ছেদের গুঞ্জন ওঠে। কিন্তু গণমাধ্যমের কাছে বরাবরই তা গোপন রেখেছেন। সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন নাদিয়া। এই দম্পতির কোনো সন্তান নেই।

আরএম-০২/১৩/০৭ (বিনোদন ডেস্ক)