ভাগ্যই আমাকে শাকিব খানের নায়িকা বানিয়েছে : জাহারা মিতু

ভাগ্যই আমাকে

‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ ২০১৭’ সুন্দরী প্রতিযোগিতায় প্রথম রানার আপ হয়েছিলেন ফাতেমা তুজ জাহারা মিতু। এই প্রতিযোগিতা তাকে সবার কাছে পরিচিত করে। পরে বেশকিছু নাটকে ও মিউজিক ভিডিওতে অভিনয় করেন তিনি।

তবে ছোট পর্দায় খেলা বিষয়ক নানা অনুষ্ঠান ও টক শো উপস্থাপনা করে প্রশংসিত হন। আসেন আলোচনায়। উপস্থাপিকা হিসেবে যখন বেশ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন তখন পেয়ে গেলেন শাকিব খানের বিপরীতে নায়িকা হওয়া সুযোগ।

বদিউল আলম খোকন পরিচালিত ‘আগুন’ সিনেমায় শাকিবের বিপরীতে অভিনয় করবেন তিনি। সোমবার রাজধানীর একটি পাঁচ তারা হোটেলে ছবির মহরত হয়েছে। ২ আগস্ট, শনিবার থেকে শুরু হবে এর শুটিং। জাগো নিউজের কাছে ছবিটির সঙ্গে যুক্ত হওয়া থেকে শুরু করে ক্যারিয়ারের নানা দিক তুলে ধরেছেন মিতু-

প্রশ্ন : এই ছবির সঙ্গে কীভাবে যুক্ত হলেন?

জাহারা মিতু : সবাই জানে আমি খেলার অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছেছি। বাংলাদেশ ও ওয়েস্টেন্ডিজের খেলা চলছিলো সেদিন। একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসলো আমার ফোনে। প্রথমে রিসিভ করতে পারিনি। পরে যখন ধরলাম ওপার থেকে একজন পরিচয় দিলেন তার নাম খোরশেদ। আমার সঙ্গে সিনেমা নিয়ে কথা বলতে চায়।

আমি খুব ভদ্রভাবেই বললাম, আমি আপাতত সিনেমায় অভিনয় করতে চাই না। দুই থেকে আড়াই বছর পরে সিনেমায় আসার ইচ্ছে। এই কথা বলেই ফোনটা রেখে দিয়েছি। ভদ্রলোক আধাঘন্টা পরে আবারও ফোন দিলেন। আমাকে বললেন, এই ছবির সংশ্লিষ্ট সবাই আমাকে এই ছবিতে রাখতে চাচ্ছেন। আমার বেশি আগ্রহ না দেখে উনি বললেন, এই ছবিটি পরিচালনা করবেন বদিউল আলম খোকন ও ছবিতে আমার নায়ক থাকবেন শাকিব খান। এই দুইটা কথা শোনার পর আমি ভাবতে শুরু করলাম।

যেহেতু ছোটবেলা থেকেই বদিউল আলম খোকন ভাইয়ের নাম শুনেছি। অন্যদিকে শাকিব খান ছবির নায়ক হচ্ছেন ভাবলাম দুই বছর পরে না, এখনই সাহস করে ছবির কাজ শুরু করা যেতে পারে।

প্রশ্ন : শুধু নায়ক আর পরিচালকের নাম শুনেই ছবি করতে রাজি হলেন। ছবির গল্প ও চরিত্রটা দেখতে চাইলেন না?

জাহারা মিতু : সেটা তো পরে দেখেইছি। আসলে দুজন সফল মানুষের সঙ্গে কাজ করতে পারলে নিজেকেও সফল করার সুযোগ পাওয়া যায়। সেটাই ভেবেছি আগে। পরে দেখেছি গল্প ও আমার চরিত্রটাও বেশ চমৎকার।

প্রশ্ন : শুরুতেই শাকিব খানের বিপরীতে নায়িকা হওয়ার সুযোগ পেলেন। কেমন বোধ করছেন?

জাহারা মিতু : আমি ভীষণ নার্ভাস ফিল করছি। আমার মনে হয় আমি কখনো কোনো কিছুতেই নার্ভাস থাকি না। আমি ভুল করলেও খুব আত্মবিশ্বাসের সাথে করি। কিন্তু এই প্রথম কোনো কাজ করতে গিয়ে মনে হচ্ছে আমি নার্ভাস। কারণ বড় পর্দায় আসার কোনো পরিকল্পনা ছিলো না। পরিকল্পনা ছাড়া আমি কিছু করি না। হঠাৎ কোনো পরিকল্পনা ছাড়া কীভাবে যে এই ছবিতে যুক্ত হয়ে গেলাম বুঝতেই পারিনি। বুঝতে পারছি আমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে দর্শকের প্রত্যাশা পূরণে।

প্রশ্ন : আপনার চরিত্রটি কেমন এই ছবিতে?

জাহারা মিতু : যে গল্পটি শুনে ছবিটিতে সাইন করেছিলাম সেই গল্পটি আর নেই। বরং তার চেয়েও চূড়ান্ত গল্পটিতে আমার চরিত্রটিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। প্রথমে আমার সাংবাদিকের ক্যারেক্টার ছিলো। সেটা নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এখন আমাকে ইউনিভার্সিটির একজন ছাত্রীর চরিত্রে দেখা যাবে। যে কী না একটা পার্ট টাইম চাকরিও করে।

কিছু মেয়ে থাকে যারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। এরকম একটা দুরন্ত মেয়ের ভূমিকায় দর্শক দেখবেন আমাকে। আপাতত এতটুকুই বলছি। এর বেশি বলা সম্ভব না।

প্রশ্ন : একটা সিনেমায় অভিনয়ের পূর্বে নানা রকম প্রস্তুতি নিতে হয়। এই ছবির জন্য নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করেছেন?

জাহারা মিতু : সাংবাদিক চরিত্রটির কথা শুনে আমি অনেকগুলো ফিল্ম দেখছিলাম। বিশ্বকাপের পর আর কোনো কাজ আমি হাতে নেইনি। ছবির জন্য নিজেকে তৈরি করছিলাম। সাংবাদিক হওয়ার জন্য নিজেকে তৈরি করছিলাম। পরে যখন চেঞ্জ করা হলো ক্যারেক্টার তখন প্রস্তুতিতেও পরিবর্তন এসেছে।

এখন অভিনয়টা ভালো করে রপ্ত করার চেষ্টা করছি বিভিন্ন সিনেমা দেখে। একেক জন তো একেক রকম ভাবে ক্যারেক্টার প্লে করে। একজন স্টুডেন্ট কিন্তু অনেক রকম হতে পারে। কারণ পৃথিবীর কোনো মানুষের সঙ্গে কোনো মানুষের মিল নেই। এগুলো মাথায় নিয়েই নিজেকে তৈরি করছি।

আর ফিটনেসের জন্য নতুন করে কিছু আপাতত করতে হচ্ছে না। এই ক্যারেক্টারের জন্য ফিটনেস ঠিক ঠাক আছে। আমাকে মাথায় রেখেই হয় তো নির্মাতা গল্পটি নতুন করে সাজিয়েছেন।

প্রশ্ন : দেশের নাম্বার ওয়ান নায়কের বিপরীতে সব অভিনেত্রীরাই নায়িকা হতে চায়। আপনারও এমন ইচ্ছে ছিলো শাকিব খানের সঙ্গে কাজ করার?

জাহারা মিতু : একদমই না। কারণ মিডিয়াতে যে আমি আসবো সেই ইচ্ছেই আমার ছিলো না। মানুষ স্বপ্ন দেখে, কিন্তু স্বপ্নই আমাকে দেখে ফেলেছে। এটা হচ্ছে বাস্তব কথা। তবে আমি যেহেতু উপস্থাপনায় ছিলাম সিনেমা নিয়ে একটা ভাবনা মনের মধ্যে ছিলো। কারণ মিডিয়ার সবচেয়ে বড় মাধ্যম ফিল্ম।

আর ফিল্মে এ যুগের সবচেয়ে বড় নাম শাকিব খানের সঙ্গে সুযোগ পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার। তাই সুযোগটা চলে আসায় আর ভেবে দেখিনি। আমি মনে করি ভাগ্য আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে।

আমি অনেক বেশি লাকি, যার সঙ্গে কাজ করতে বাংলাদেশের মেয়েরা আগ্রহ নিয়ে বসে থাকে তার সঙ্গেই সিনেমার শুরুটা করতে পারছি। কোটি মানুষের স্বপ্নের পুরুষের নায়িকা হয়ে তার সঙ্গে পর্দা ভাগ করার সুযোগটা অনেক বড় ভাগ্যের ব্যপার।

প্রশ্ন : শাকিব খান অভিনীত সিনেমা দেখেছেন কয়টা?

জাহারা মিতু : সত্যি কথা বলতে আমি টেলিভিশন থেকে একটু দূরেই থাকতাম। আমি খুব বেশি পড়ালেখায় আগ্রহী ছিলাম সবসময়। সেদিক থেকে সিনেমা আমার খুব কম দেখা হয়েছে। কিন্তু ঈদ মানেই তো শাকিব খান। ঈদের সময় যখন ফিল্ম দেখতাম বাসার সবাই মিলে, তখন শাকিব খানের ছবিই দেখা হতো। কারণ প্রায় সব চ্যানেলেই শাকিব খানের ছবি চলে।

সর্বশেষ শাকিব খানের ‘শুভা’ ছবিটি দেখেছি। কয়েক দিন আগেই ছবিটি দেখেছি। এখানে তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন পূর্ণিমা আপু। কমার্শিয়াল ধাঁচের চেয়ে একটু আলাদা ছিলো এই ছবিটি। বেশ চমৎকার অভিনয় ছিলো সেখানে।

প্রশ্ন : এরমধ্যে নিশ্চয় শাকিব খানের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। নতুন নায়িকা হিসেবে অভিনয়ের কোনো টিপস দিয়েছেন শাকিব?

জাহারা মিতু : খুব অল্প আলাপ হয়েছে। তবে এতটুকু বলতে পারি খুব কম আলাপের মধ্যে একজন নতুন মানুষকে কীভাবে ওয়েলকাম করা যায় সেটা তার কাছে শিখেছি। এতবড় সুপারস্টার হয়েও তিনি তার পাশে আমার জায়গা করে দিচ্ছেন এটা অনেকে বড় পাওয়া আমার। তার ব্যবহার মুগ্ধ হবার মতোই।

আরএম-১৮/৩০/০৭ (বিনোদন ডেস্ক, তথ্যসূত্র: জাগোনিউজ)