কেমন আছে বাংলাদেশের অশ্লীল নায়ক-নাকিয়ারা?

কেমন আছে

নব্বইয়ের দশকের পর পরই অশ্লীলতার কালো থাবা এসে পড়ে বাংলা চলচ্চিত্রে। ওই যুগে রমরমা অবস্থা ছিলো নায়িকা মুনমুন, ময়ূরী, পলি, সাহারা, নাসরিন। নায়কদের মধ্যে সোহেল খান, শাহিন আলম, আলেকজান্ডার বো, মেহেদি। বর্তমানে কোথায় এরা, কি অবস্থায় আছেন? এমন কৌতূহল অনেকের মধ্যেই আছে।

অশ্লীলতার অভিযোগে এদের অনেকের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন যখন কঠোর হয়ে ওঠে তখনই ধীরে ধীরে তাঁদের ক্যারিয়ারে ভাটা পড়তে শুরু করে। তাদের নিয়ে যেসব প্রযোজক ছবি বানাতেন তারা প্রশাসনের ভয়ে ব্যবসা গুটিয়ে অন্যদিকে সরে যান।

অশ্লীল তারকাদের খোঁজ খবর:

মুনমুন:

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুনমুন আশুলিয়ায় নিজের বাড়িতেই থাকেন। সংসার করার স্বপ্ন নিয়ে দুবার বিয়ে করেন। দুই ঘরে তার দুটি ছেলে সন্তানও আছে। তবে দুই স্বামীই তাকে ত্যাগ করেছেন। বর্তমানে তিনি সিনেমায় আবার ব্যস্ত হচ্ছেন। এই মুহূর্তে তিনি ‘পদ্মার প্রেম’ সিনেমায় অভিনয় করছেন। গত ৫ এপ্রিল থেকে মানিকগঞ্জে শুরু হয়ে প্রথম লটের কাজ শেষ হয়েছে। জানা যায়, বেশ কিছু সিনেমার কাজ হাতে আছে তাঁর। মুক্তির অপেক্ষায় আছে দুটি সিনেমা।

ময়ূরী:

এককালের ঢাকাই সিনেমার আবেদনময়ী ও সমালোচিত অভিনেত্রী ছিলেন ময়ূরী। অশ্লীলতার অভিযোগে অভিযুক্ত নায়িকাদের শীর্ষে মুনমুনের পরেই ময়ূরীর নাম নেয়া যায়। চলচ্চিত্রের জুনিয়র শিল্পী সেতুর মেয়ে ময়ূরী। একটা সময় এ অভিনেত্রী স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় বেশকিছু অশ্লীল সিনেমায় অভিনয় করেছেন। দেশীয় চলচ্চিত্র সুস্থ ধারায় ফিরলে অনেকটাই অন্তরালে চলে যান এ অভিনেত্রী। চলচ্চিত্র সম্পর্কে কথা বলতে না চাইলেও শেষ পর্যন্ত এতোটুকু জানান তিনি চলচ্চিত্রে আর ফিরবেন না। তৃতীয় সংসারে তিনি বেশ ভালোই আছেন। বর্তমানে ধর্মকর্ম ও দুই মেয়েকেই বেশি সময় দিচ্ছেন এ নায়িকা।

পলি:

পলির ক্যারিয়ারে সুস্থ ধারার সিনেমা নেই বললেই চলে। পলি এখন গুলশানে নিজের ফ্ল্যাটে থাকেন। দুটি যমজসহ তার চার সন্তান রয়েছে। পলি অভিনীত প্রায় ১১৩টি ছবি মুক্তি পেয়েছে।

সাহারা:

সাহারা পরবর্তীতে ভালো ছবির সঙ্গে যুক্ত হন। শাকিব খানের সঙ্গে জুটি হয়ে বেশকিছু হিট ছবি উপহার দেন। ২০১৩ সাল পর্যন্ত নিয়মিত অভিনয় করেছেন। ওই বছরের শেষদিকে এক প্রযোজককে গোপনে বিয়ে করে চলচ্চিত্র ছাড়েন।

নাসরিন:

নাসরিন নিয়মিত অভিনয় করে যান। ২০১৩ সালে বিয়ে করে নাসরিনও সংসারী হন। এফডিসির অনুষ্ঠানে তাকে নিয়মিত দেখা যায়।কিছুদিন আগে এক টিভি অনুষ্ঠানেও দেখা গেছে তাকে।

অশ্লীলতার দায়ে অভিযুক্ত শাপলা এবং ঝুমকাও বিয়ে করে সংসার করছেন বলে জানা গেছে।

মেহেদি:

স্বর্ণময় অভিষিক্ত মেহেদি একসময় অশ্লীল চলচ্চিত্রের বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। মেহেদির আসল নাম নাজমুল হক শামীম। ১৯৭৩ সালে মাস্টার শামীম নামে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনের `জন্ম থেকে জ্বলছি` ছবিতে প্রথম কাজ করেন। তবে নায়ক হিসেবে অভিষিক্ত হন তোজাম্মেল হক বকুলের `পাগল মন` ছবির মাধ্যমে। মুনমুন, ময়ুরীর, ঝুমকার সঙ্গে জুটি হয়ে অসংখ্য অশ্লীল সিনেমায় কাজ করেন। তবে মেহেদি-ঝুমকা জুটি বেশ পরিচিতি পায়। মেহেদি বলেন, এ কাতারে আমার নাম উচ্চারিত হয়, এটা আমি জানি। আমি আলোচনায় নেই বলে শুধু আমাকেই দায়ী করবেন? আমাদের দ্বারা এসব করিয়েছে কে? তারা আজ কোথায়? তারা তো ঠিকই আছে। আমরা কি নিজেদের ইচ্ছাতে অভিনয় করি? আমরা নিজেদের ইচ্ছাতে অভিনয় করিনি। আমাদের পরিচালক ছিলেন, তাদের নির্দেশনায় আমরা শুট করেছি। তারা এখনো সিনেমা করছে।’

মেহেদি বিএ পাশ করেন ঢাকার হাবিবুল্লাহ বাহার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে। পারিবারিকভাবে অঢেল সম্পত্তি রয়েছে বলে জানা যায়। বনেদি পরিবারের ছেলে মেহেদিদের পুরান ঢাকায় ব্যবসা রয়েছে। রয়েছে পেট্রোল পাম্প। বিয়ে করেছেন পুরান ঢাকার মেয়ে ফারজানাকে। স্ত্রী গৃহিনী। মেহেদি-ফারজানার ঘরে রয়েছে দুই সন্তান। ছেলে মাজহারুল হক, মেয়ে মেহজাবিন হক ইশরাতের বয়স দশ হয়নি।

শাহীন আলম:

সে যুগের যে সকল নায়কের নাম উচ্চারিত হয় তাদের মধ্যে শাহীন আলম অন্যতম। ১৯৮৬ সালের নতুন মুখের সন্ধানের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পান শাহীন আলম। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের আগে তিনি মঞ্চ নাটকে কাজ করতেন। বর্তমানে তিনি পুরোদস্তুর কাপড়ের ব্যবসায়ী। ঢাকার গাউসিয়াতে তার নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সকাল সন্ধ্যা সেখানেই কর্মমুখর সময় কাটে তার। জানা যায়, তার শিক্ষাগত যোগ্যতা বিকম, হিসাব বিজ্ঞান, জগন্নাথ কলেজ, ঢাকা।

ভালগার নায়কদের মধ্যে সোহেল ছিল অন্যতম। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট একজনের কাছে জানা যায়, সোহেল এখন কার্যত পথে পথে ঘুরে। আয় রোজগারের কোন পথেই তিনি নেই। প্রিন্স, বিপ্লব, আরবাজের অবস্থাও একই রকম। কালেভদ্রে তাদের এফডিসিতে দেখা যায়। সে সময়কার নায়ক থেকে ভিলেন বনে গিয়ে ব্যস্ত থাকতে চেয়েছেন আলেকজান্ডার বো ও অমিত হাসান। কিন্তু খুব বেশি ব্যস্ততা নেই। ড্যানি সিডাক ব্যস্ত হয়েছেন রাজনীতিতে।

এই দায় আছে মিশা সওদাগর, ডিপজল, শিবা শানু, ইলিয়াস কোবরা, চিতাদেরও। ভালগার নায়ক-নায়িকাদের পাশাপাশি চুটিয়ে অশ্লীল দৃশ্যে অভিনয় করতেন তাঁরা। বর্তমান সময়ে অবশ্য এদের মধ্যকার কয়েকজন নিজেকে সাধু বলতে চান।

আরএম-০৯/১৬/০৮ (বিনোদন ডেস্ক)