৭০ বছরে নায়কের চতুর্থ বিয়ে, মেয়ের চেয়ে বয়সে ছোট স্ত্রী

৭০ বছরে

মডেলিং, সিনেমা, টেলিভিশন, থিয়েটার, বেতার। বিভিন্ন মাধ্যমে তার ক্যারিয়ার বিস্তৃত ভারত, আমেরিকার পাশাপাশি ইউরোপেও। বিনোদনে সুদর্শন পুরুষদের মধ্যে অন্যতম, কবীর বেদী।

ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়, তার জন্ম ১৯৪৬ সালের ১৬ জানুয়ারি, অবিভক্ত ভারতের লাহোরে। তার বাবা পেয়ারে লাল সিং বেদী ছিলেন লেখক ও দার্শনিক। মা, ফ্রিডা বেদীর জীবনও বেশ অভিনব। তিনি ব্রিটিশ নাগরিক। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে তার অবদান গভীর। শেষ জীবনে বৌদ্ধ সন্ন্যাসী হয়ে গিয়েছিলেন তিনি।

কবীরের স্কুল ছিল নৈনিতালের নামী প্রতিষ্ঠান শেরউড কলেজ। স্নাতক হন দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজ থেকে। অভিনয়ে হাতেখড়ি থিয়েটারে। ওথেলো থেকে তুঘলক— সব ভূমিকায় তিনি ছিলেন অপ্রতিরোধ্য।

বলিউডে তার প্রথম ছবি, ১৯৭১ সালে, ‘হালচাল’। এখনও পর্যন্ত অভিনয় করেছেন ষাটটিরও বেশি ভারতীয় ছবিতে। ‘তাজমহল: অ্যান ইটারনাল লাভ স্টোরি’ ছবিতে শাহজাহানের ভূমিকায় কবীর বেদীর অভিনয় প্রশংসিত হয়েছিল। এছাড়া ‘কচ্চে ধগে’, ‘খুন ভরি মাং’, ‘ম্যায় হু না’ ছবিতেও তিনি অনবদ্য।

ভারতে হিন্দি ও দক্ষিণী ভাষার ছবির পাশাপাশি চুটিয়ে অভিনয় করেছেন বিদেশি ছবিতেও। জেমস বন্ড সিরিজের ‘অক্টোপুসি’-তে তিনি খলনায়কের সহকারী। বলিউডে তাকে শেষ বার দেখা গিয়েছে ২০১৮ সালে, ‘জানে কিঁউ দে ইয়ারোঁ’ এবং ‘সাহেব, বিবি অউর গ্যাংস্টার থ্রি’ ছবিতে।

সুদর্শন চেহারা এবং ব্যারিটোন কণ্ঠের জন্য টেলিভিশনেও দাপটের সঙ্গে কাজ করেছেন কবীর বেদী। ভারতের পাশাপাশি মার্কিন ও ইতালীয় টেলিসিরিজে কবীর বেদীর কাজ উল্লেখযোগ্য। হিন্দি, ইংরেজির মতো তিনি ইতালীয় ভাষাতেও সমান সাবলীল। ব্যারিটোন কণ্ঠস্বরের জন্য কবীর বেদী একজন প্রতিষ্ঠিত ডাবিং শিল্পী। ভারতীয় বিজ্ঞাপনেও তার কণ্ঠ খুবই জনপ্রিয়।

কাজের মতো কবীর বেদীর ব্যক্তিগত জীবনও বর্ণময়। ১৯৬৯ সালে তিনি বিয়ে করেন প্রতিমা বেদীকে। দাম্পত্য ভেঙে যায় ১৯৭৪-এ। মনে করা হয়, পারভীন ববির সঙ্গে সম্পর্কই কবীর-প্রতিমার বিচ্ছেদের কারণ।

কবীর-প্রতিমার মেয়ে পূজা বলিউড ইন্ডাস্ট্রির পরিচিত মুখ। পূজার ভাই সিদ্ধার্থ আত্মঘাতী হন বিদেশে উচ্চশিক্ষার সময়। তিনি স্কিত্‌জোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন। ১৯৯৭ সালে তিনি আত্মহত্যা করেন মাত্র বাইশ বছর বয়সে।

তবে পারভীনের সঙ্গে কবীরের সম্পর্কও স্থায়ী হয়নি। যে সময়ে প্রতিমার সঙ্গে তার বিয়ে ভেঙেছিল, সেই সময়েই তিনি পারভীনের সঙ্গে সম্পর্কও শেষ করে দিয়েছিলেন।

পারভীনের সঙ্গে ব্রেক আপের পরে কবীর বেদীর সঙ্গে আলাপ মার্কিন মডেল সুজান হাম্পফ্রে-এর। আমেরিকায় মডেলিং করতে গিয়ে দু’জনের আলাপ। সুজানকে বিয়ে করেন ১৯৮০ সালে। তবে কবীরের দ্বিতীয় বিয়েও দীর্ঘস্থায়ী ছিল না। ভেঙে যায় ১৯৯০ সালে।

কবীর-সুজানের ছেলে অ্যাডামের জন্ম ১৯৮১-তে। ইন্দো-মার্কিন বিনোদন দুনিয়ায় অ্যাডাম বেদী অভিনয় ও মডেলিং-এ পরিচিত মুখ।

১৯৯১ সালে লন্ডনে কবীরের সঙ্গে আলাপ নিক্কি মুলগাওকরের। বয়সে কুড়ি বছরের ছোট, রেডিও ও টেলিভিশনের সঞ্চালিকা নিক্কি-কে ১৯৯২ সালে বিয়ে করেন কবীর। তেরো বছর পরে ২০০৫ সালে ভেঙে যায় তাদের দাম্পত্য।

তৃতীয় ডিভোর্সের পরে এগারো বছর বিয়ে করেননি কবীর। ২০১৬ সালে, নিজের সত্তরতম জন্মদিনের ঠিক দু’দিন আগে তিনি বিয়ে করেন পারভীন দুসাঞ্জকে। কবীরের থেকে পারভীন বয়সে ছাব্বিশ বছরের ছোট। কবীর-প্রতিমার মেয়ে পূজার থেকে তিনি বয়সে তিন বছরের ছোট।

সত্তর বছর পূর্তির জন্মদিনের পার্টিতে কবীর প্রকাশ্যে আনেন তার চতুর্থ বিয়ের কথা। পার্টিতে বেশির ভাগ অতিথিই জানতেন না এই বিয়ে নিয়ে। অতিথি অভ্যাগতদের সঙ্গে কবীর বেদী আলাপ করিয়ে দেন স্ত্রী পারভীনের সঙ্গে। তবে বাবার এই সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি কবীর বেদীর মেয়ে পূজা। সোশ্যাল মিডিয়ায় শুভেচ্ছা জানালেও শোনা যায়, বাবা-মেয়ের সম্পর্কের ফাটল আর জোড়া লাগেনি।

আরএম-০৩/১২/০৯ (বিনোদন ডেস্ক)