আইয়ুব বাচ্চুর শেষ গান ও একটা স্বপ্নের গল্প (ভিডিওসহ)

আইয়ুব বাচ্চুর

আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া সর্বশেষ গানটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘ছায়াশরীরী’ নামের একটি মিশ্র অ্যালবামে। তার গাওয়া গানটির নাম অনুসারেই অ্যালবামটির নাম করণ করা হয়েছিল। ২০১৬ সালের ঈদুল ফিতরের বেশ আলোচিত ছিল অ্যালবামটি। ওই বছরই ১২ নভেম্বর জিসিরিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করা হয় গানটির ভিডিও।

আলো আঁধারীরর ঘেরা টোপে ঢাকা, হিসেবের খাতাটা যদিওবা ফাঁকা, ভুলে গেছে একজন কেবা ছিল প্রিয়জন, বুকভরা কান্নাটা তবু পুষে রাখা, দুঃখ কষ্ট অনেক জ্বালা হারতে নয় আর রাজি, ছায়া শরীরী একটা মানুষ জীবন রাখে বাজি। এমনই কথার গানটি লিখেছিলেন এম এস রানা। গানটির সুরকার ছিলেন জিয়া খান আর গানটির সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন চিরকুট ব্যান্ডের পাভেল।

এর আগে ২০১৪ সালে প্রকাশ হয় আইয়ুব বাচ্চুর ‘জীবনের গল্প’ নামে একটি গানের ভিডিও।
জীবনের গল্প গানের পরে ‘ছায়াশরীরী’ গানটিতে কণ্ঠ দেওয়ার পেছনেও কয়েকটি কারণ ছিল তার। গানটির সুরকারকে ভালোবেসেই এই গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। বেশির ভাগ সময়ই নিজের সুর ও সংগীতে গান করতেন তিনি। শেষ গানটি গাওয়ার আগের ৯ বছর অন্য কোনো সুরে গান করেননি এই ছয়তারের জাদুকর।

রুপালি গিটারের মালিক হারিয়ে গেছেন মাত্র ৫৬ বছর বয়সে। ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর সকালে সবাইকে কাঁদিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন তিনি। দেখতে দেখতেই বছর পেরিয়ে গেল। আজ আইয়ুব বাচ্চুকে হারিয়ে ফেলার সেই দিন।

এই দিনে আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন সুরকার জিয়া খান। জিয়া খান বললেন,‘প্রিয় মানুষকে হারানোর কষ্ট কখনই ভোলা যায় না। আমরা প্রতিনিয়তই বাচ্চু ভাইকে মিস করি। তার অনেক বড় একটা গুনছিল উনি মানুষকে বুকে টেনে নিতে পারতেন খুব সহজেই।

বাচ্চু ভাইকে ঘিরে অনেক স্মৃতি। তার সর্ব শেষ স্টেজ শো তে আমিও উপস্থিত ছিলাম। রাতে গানের শো করে এসে, পরের দিন তার মৃত্যুর সংবাদ শুনতে হবে কখনোই কল্পনাও করিনি। খুব মনে পড়ে ‘ছায়াশরীরী’ গানটি আমি প্রথম যখন বাচ্চু ভাইয়ের স্টুডিওতে গেলাম, খুব মন দিয়ে গানটি শুনলেন তিনি। আমার সুরের প্রশংসা করলেন। গানটি গাইলেন।

টেলিভিশন শোতে গিয়েও এই গানটির কথা বলেছেন। আমার কথা বলেছেন। ভীষণ উদার মনের মানুষ ছিলেন তিনি। তার গুণের কথা বলে আসলে শেষ করা যাবে না। তিনি এখন আমাদের থেকে অনেক দূরে। তার জন্য অনেক দোয়া করি। সারাদেশের কোটি কোটি মানুষের দোয়া পেয়েছেন তিনি। পরপারেও অনেক ভালো থাকুন বাচ্চু ভাই।’

জিয়া খান জানালেন, আইয়ুব বাচ্চুর জীবন নিয়ে বেশ বড় আয়োজনে একটা গান করছেন তিনি। প্রায় ২৫জন শিল্পী গানটিতে কণ্ঠ দিবেন। গানটির মধ্যে কিছু আবৃত্তিও থাকবে। আর বড় পরিসরে গানটির ভিডিও নির্মাণ করা হবে। গানটি ভিডিওতে দেখা যাবে আইয়ুব বাচ্চু কাছের মানুষদের ও দেশের জনপ্রিয় বেশ ক’জন মুখকে।

জিয়া খান বলেন, ‘আমার সুরে আইয়ুব বাচ্চু ভাই গান গাইবেন সেই ভাবনাটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো ছিলো। বাচ্চু ভাই ‘ছায়া শরীরী’ গানটি গেয়ে আমার সেই স্বপ্ন পূর্ণ করে গেছেন। এখন তার সংগীত জীবনকে একটা গানে তুলে ধরার পরিকল্পনা করেছি। গানটি লেখা ও সুর তৈরি হয়ে গেছে। শিগগিরিই বাকি কাজ শেষ করবো। গানটিতে থাকবে বেশ কিছু চমক।’

১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রাম শহরের এনায়েতবাজার এলাকায় জন্মগ্রহন করেন আইয়ুব বাচ্চু। ১৯৯১ সালে জন্ম নেওয়া ‘এলআরবি’ ব্যান্ড দলের লিড গিটারিস্ট এবং ভোকাল ছিলেন। এর আগে তিনি প্রায় ১০ বছর সোলস ব্যান্ডের সঙ্গে লিড গিটারিস্ট হিসেবে যুক্ত ছিলেন। সংগীত জগতে তার যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৮ সালে ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডের মাধ্যমে।

গুণী এই শিল্পী তার শ্রোতা-ভক্তদের কাছে এবি নামেও পরিচিত। আইয়ুব বাচ্চু মূলত রক ঘরানার কণ্ঠের অধিকারী হলেও আধুনিক গান, ক্লাসিক্যাল সংগীত এবং লোকগীতি দিয়েও শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন। গত বৃহস্পতিবার সকালে (১৮ অক্টোবর ২০১৮) না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি। শনিবার (২০ অক্টোবর ২০১৮) বিকেলে চট্টগ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশে শেষ নিদ্রায় শায়িত হন তিনি।

আরএম-১৭/১৮/১০ (বিনোদন ডেস্ক)