দিনে দশ বলে রাতে বিশ দিলে ভালো হবে না

দিনে দশ বলে

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু গতকাল আক্ষেপ করে বলেছিলেন, দেশে এমন শিল্পীও আছেন, যাঁরা সকাল ১০টায় কল টাইম থাকলেও সেটে যান তিন দিন পর। ওই তিন দিন যে তিনি যাবেন না, সেটিও কাউকে জানানোর প্রয়োজন মনে করেন না।

দীর্ঘ সময় ধরে ঢাকায় চলচ্চিত্র নির্মাণে যে অনিয়ম আর অপচয় হয়ে আসছে, দিন দিন তা বেড়েই চলেছে। এর ফলে চলচ্চিত্রের এই মন্দা অবস্থা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না। সেসব অনিয়ম ও অপচয় রোধে এবার সোচ্চার হয়েছে চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো।

সম্প্রতি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নেতা কামাল মো. কিবরিয়াকে আহ্বায়ক করে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন সংগঠনের সমন্বয়ে একটি কমিটি করা হয়। কমিটির নাম রাখা হয় ‘চলচ্চিত্র নির্মাণ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি’। গতকাল এ কমিটি সংবাদ সম্মেলন করে নীতিমালাসমূহ উপস্থাপন করে। সেখানে খোরশেদ আলম খসরু শিল্পীদের হুঁশিয়ার করে আরো বলেন, ‘এখন থেকে নিয়ম না মানলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রশ্নোত্তর-পর্বে শিল্পীদের পারিশ্রমিক নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নিজের মত প্রকাশ করেন পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে চলচ্চিত্রের যে অবস্থা তাতে বাংলাদেশের শিল্পীদের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক হতে পারে ১০ লাখ টাকা।’

তবে পরিচালক গুলজারের ওই মতের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন অভিনয়শিল্পী। এ ব্যাপারে চিত্রনায়ক রিয়াজ বলেন, ‘আসলে একজন শিল্পী কত টাকা পাবেন, সেটা নির্ভর করে তাঁর বাজারদরের ওপর। তাঁর ছবি কতটা ব্যবসা করছে। দর্শক তাঁর ছবি কতটা দেখছে। তিনি কত ভালো অভিনয় করেন। এখন যদি প্রযোজক তাঁর ছবিতে কোটি টাকা ব্যবসা করেন, তখন শিল্পী কেন বেশি টাকা পাবে না? চলচ্চিত্র নির্মাণ-সংক্রান্ত নীতিমালা অবশ্যই প্রয়োজন। তা যদি চলচ্চিত্রের ভালোর জন্য হয়, তবে আমি সব মেনে কাজ করতে রাজি।’

রিয়াজ আরো বলেন, ‘দিনের বেলায় ১০ লাখ বলে রাতের আঁধারে যদি প্রযোজক শিল্পীকে ২০ লাখ টাকা দিয়ে আসেন, তবে সেটা ভালো হবে না। তা ছাড়া শুধু টাকা কমালেই হবে না। ছবির মান বাড়াতে হবে। এখনো যদি আশির দশকের ধ্যানধারণা নিয়ে ছবি নির্মাণ করা হয়, তবে আগামীতে ১০ লাখ কেন, ১০ হাজার টাকাও কেউ দিতে পারবে না। আমাদের উচিত ভালো মানের কাজ দিয়ে নতুন করে বাজার তৈরি করা।’

চিত্রনায়ক বাপ্পী বলেন, ‘আমাদের চলচ্চিত্রের যে অবস্থা তাতে নীতিমালা অনেক বেশি প্রয়োজন। চলচ্চিত্র নির্মাণ-সংক্রান্ত নীতিমালায় যা বলা হয়েছে, আমি তাকে স্বাগত জানাই। আর ১০ লাখ টাকার যে বিষয়টি, সেটি আসলে শিল্পীর যোগ্যতার ওপর নির্ভর করে। আমি শুনেছি, গুলজার স্যার বলেছেন সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা হতে পারে। আসলে ভালো মানের ছবি পেলে আমি এমনিতেই টাকার বিষয়টি মুখ্য মনে করি না। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে, যে কারণে একটু ছাড় তো দেওয়াই উচিত।’

চিত্রনায়ক সিয়াম আহম্মেদ বলেন, ‘আমি আসলে বিএফডিসির কোনো সংগঠনের সদস্য নই। যে কারণে তারা কে কী নীতিমালা করল, সেটি আমার দরকার নেই। আমি আমার মতো কাজ করে যাব।’

চিত্রনায়ক নিরব বলেন, ‘আমি তো এত টাকা নিই না। আমি মনে করি, ১০ লাখ টাকা ধরা হয়েছে ৭০-৮০ লাখ টাকা বাজেটের ছবির হিসাব করে। এখন শাকিব ভাই ৫০-৬০ লাখ টাকা নিচ্ছে। আবার ভারতে কোটি টাকা নিচ্ছে। এখন একজন শিল্পী যদি একটি ছবির জন্য চার মাস কাজ করে, তবে এক ধরনের পারিশ্রমিক। আর যদি এক মাসে ছবি শেষ হয়ে যায়, সেটা আরেক রকম হতে হবে। তবে কে কত পাবে, সেটা সেই শিল্পী নিজের কাজ দিয়ে তৈরি করবে।’

চিত্রনায়ক সাইমন বলেন, ‘প্রকাশ্যে শিল্পীদের পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে দেওয়া বিব্রতকর। আলোচনার মাধ্যমে পারিশ্রমিক কম-বেশি হতে পারে। যেহেতু চলচ্চিত্রের অবস্থা তেমন ভালো না, তাই যেকোনো ধরনের ছাড় দিতে প্রস্তুত। আসলে, কে কত পারিশ্রমিক পাবেন তা নির্ভর করে অনেক বিষয়ের ওপর। যেমন—সিনেমার ধরন, প্রযোজনা, তারকার জনপ্রিয়তা ইত্যাদিসহ নানা বিষয়।’

গতকাল সংবাদ সম্মেলনে কমিটির আহ্বায়ক কামাল মো. কিবরিয়া লিপু বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী মাসের ১ তারিখ থেকে চলচ্চিত্রের শুটিং হবে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। মাঝখানে এক ঘণ্টা নামাজ ও খাবারের বিরতি। কোনো শিল্পী যদি সময়মতো শুটিংয়ে না আসেন, তবে তাঁকে সেদিনকার শুটিংয়ের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সকাল ৮টায় শুটিংয়ে উপস্থিত থাকতে হবে শিল্পী ও কলাকুশলীদের।’

লিপু আরো বলেন, ‘এককালীন টাকা নিতে পারবেন না শিল্পীরা। প্রথমে সাইনিং ২৫ শতাংশ। তার পর কাজের অগ্রগতি অনুযায়ী বাকি টাকা পাবেন। পোশাকের জন্য কোনো টাকা পাবেন না শিল্পী। গল্পের চরিত্র অনুযায়ী পোশাক তৈরি করবেন প্রযোজক। শিল্পীর পছন্দ হলে কাজের পর টাকার বিনিময়ে তিনি তা নিয়ে নিতে পারেন।’

খোরশেদ আলম খসরু বলেন, ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির সভাপতি আমি, আমার কাজ হচ্ছে প্রযোজক-পরিবেশকদের স্বার্থ রক্ষা করা। চলচ্চিত্র নির্মাণ বা প্রদর্শন পুরো কাজটিই আসলে প্রযোজকের টাকা দিয়ে করা হয়। কেউ এক ঘণ্টা দেরি করে শুটিংয়ে আসলে বা ছবিটি মুক্তি পাওয়ার সময় হল থেকে টাকা না পেলে সমস্যা আমাদের। এমনও শুনেছি, কলকাতায় শুটিংয়ের সময় আমাদের দেশের এক নায়ক এক ঘণ্টা দেরি করে গিয়েছিলেন। পরিচালক সেদিন তাঁকে নিয়ে শুটিং করেননি। এর পরেরে দিন নায়ক নাকি ৬টা থেকে সেটে গিয়েছিলেন। এটা সম্ভব হয়েছে নীতিমালার কারণে।’

খসরু আরো বলেন, চলচ্চিত্রের প্রয়োজনে তাঁরা সুন্দর নীতিমালা তৈরি করবেন এবং তার সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করবেন।

আরএম-১৩/২৩/১০ (বিনোদন ডেস্ক, তথ্যসূত্র: এনটিভি অনলাইন)