শাবানার চোখে দেশের সেরা নায়ক কারা জানেন?

শাবানার চোখে

প্রায় ২০ বছর ক্যামেরা বন্ধ। শুটিংয়ের বাতিও গিয়েছিল নিভে। সিনেমার প্রিয় মুখ, প্রিয় নায়িকা শাবানা এখন পুরোপুরি পারিবারিক মানুষ। তাঁর সঙ্গী এখন নাতি-নাতনিরা। প্রবাসে তাঁদের সঙ্গে আড্ডা দিয়েই সময় কাটে শাবানার। সম্প্রতি তিনি বেড়াতে এসেছিলেন বাংলাদেশে। প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপে স্মরণ করলেন নানা স্মৃতির কথা। জানালেন, তাঁর চোখে নিজের সময়ের সেরা নায়ক কে।

তখন ছিল সোনালি দিন

সেদিন ছিল সিনেমার সুদিন। তখন শাবানারাই রাজত্ব করতেন রুপালি পর্দায়। সেই দিনগুলো স্মরণ করে তিনি বললেন, ‘এফডিসির কোনো ফ্লোর তখন ফাঁকা থাকত না। ববিতা, কবরীসহ বেশ কয়েকজন নায়িকা তখন বেশ জনপ্রিয়। আমাদের দেখা হতো কম। কারণ, সবাই তখন কাজ নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত থাকতাম। পাশাপাশি ফ্লোরে শুটিং হলেও দেখা করার সুযোগ হতো কম। সবার মধ্যে ভালো কাজের প্রতিযোগিতা যেমন ছিল, তেমনি ছিল ভালো সম্পর্কও।’

সেই সোনালি দিন নেই এখন। তবু এই সময়ে কার ছায়ায় নিজের ছবি দেখেন শাবানা? তিনি বলেন, ‘আমাদের পরে মৌসুমী, শাবনূর তো ভালো কাজ করেছে। পূর্ণিমাও ভালো কাজ করত, ছিল পপিও। এখন সম্ভবত কাজ কম করে। এদের সঙ্গেই আমার পরিচয়। নতুনদের কাউকে চিনি না।’

তাঁর মাঝে বেগম রোকেয়ার ছবি

নারীজাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার জীবনীভিত্তিক ছবি হবে। পরিচালক সুভাষ দত্ত রোকেয়ার চরিত্রে বেছে নিয়েছিলেন শাবানাকে। পরে আর সেই ছবির কোনো অগ্রগতি হয়নি। শাবানা বলেন, ‘নানা কারণে ছবিটি শেষ হয়নি। ছবিটির জন্য ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে শুটিংয়ের অনুমতিও নেওয়া হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ছবিটি আর হয়নি। আমিও সিনেমা ছেড়ে বিদেশে চলে গেলাম। পরিচালক বলতেন, আমার আদলটা নাকি বেগম রোকেয়ার সঙ্গে বেশি যায়। আমি চলে আসার পরে বলেছিলাম অন্য কাউকে নিয়ে সিনেমাটা শেষ করতে। কিন্তু পরিচালক সেটা করেননি। তিনি শাবানাকে ছাড়া বেগম রোকেয়া বানাবেন না।’

সমিতিচর্চার সময় কোথায়?

সিনেমা কমে গেলেও এফডিসিতে সরব নানা রকম সমিতি। শাবানাদের সময়ে কাজের বাইরে অন্য কিছু করার সুযোগই পাওয়া যেত না। এমনকি তিনি ‘সমিতি’ বিষয়টির সঙ্গে পরিচিতও নন। তিনি বললেন, ‘এফডিসিতে সমিতিচর্চার সঙ্গে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমাদের সময়ে সমিতিচর্চার সময় কোথায়? তখন সবাই কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। কত ভালো কাজ উপহার দেওয়া যায়, সেটা নিয়েই চলত প্রতিযোগিতা।’

শুটিংয়ের দিনগুলো মিস করি

অতীত নস্টালজিক করে দেয় শাবানাকে। একটি ছবি শেষ হতে না–হতেই আরেকটির প্রস্তুতি নিতে হতো। কী সুন্দর ছিল দিনগুলো! শাবানা বলেন, ‘মানুষ অতীত জীবনের সুন্দর সময়গুলোকেই বেশি মিস করে। কত সুন্দর সময় গেছে আমাদের। মাসের ৩০ দিন ক্যামেরার সামনে কাটাতাম। একটি ছবি শেষ করে পরের দিনের শুটিংয়ের জন্য প্রস্তুতি নিতাম। সঙ্গে ছিল মানুষের অফুরন্ত ভালোবাসা। দেশের রাস্তায় মানুষ আমাকে দেখে এখনো আনন্দ পায়। এটা দেখলে মনটা আনন্দে ভরে যায়।’

তাঁর চোখে সেরা যাঁরা

আলমগীর, বুলবুল আহমেদ, রাজ্জাক, ফারুক—সেই সময়ের তারকা অভিনেতাদের সঙ্গে অভিনয় করেছেন শাবানা। এই সময়ে এসে কাকে এগিয়ে রাখবেন তিনি? শাবানার উত্তর ছিল, ‘আমি যাঁদের সঙ্গে কাজ করেছি, তাঁরা সবাই সেরা। আলমগীর ভাই ও রাজ্জাক ভাইয়ের সঙ্গে বেশি ছবি করেছি। তা ছাড়া ফারুক ভাই, সোহেল রানা ভাই ও জাফর ইকবালের সঙ্গেও অভিনয় করেছি। এঁদের মধ্যে কাকে এগিয়ে রাখব? সবাই তো সেরা।

এখনকার ঢাকার ছবির খবর কি জানেন শাবানা? জানালেন, ছবি খুব একটা দেখা হয় না। চলচ্চিত্রের পুরোনো মানুষদের কাছ থেকে টুকটাক খবর নেন। তিনি বলেন, ‘শুনেছি সিনেমায় লগ্নি করা প্রযোজকের টাকা এখন সেভাবে ফিরে আসে না। আমাদের সময়ে ১ হাজার ২০০ হল থাকলেও এখন নাকি ৬০টিতে নেমেছে। এটা শুনে খুব খারাপ লেগেছে। কোথায় হল বাড়বে, তা না। আরও কমছে।’

আরএম-১১/২৯/০১ (বিনোদন ডেস্ক, তথ্যসূত্র ও ছবি: প্রথম আলো)