তারকাদের একুশ ভাবনা

তারকাদের

আজ মহান একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। মাতৃভাষা দিবসের মাস ফেব্রুয়ারি এলেই আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি সেই ভাষা সংগ্রামীদের, যাদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ১৯৫২ সালের ঢাকার শান্ত রাজপথ। বাঙালির জীবনে যা অবিস্মরণীয় ও চিরভাস্বর দিন। বাঙালির জাতিসত্তা বিকাশের সংগ্রামের সূচনা সেদিন ঘটেছিল। মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় পথ বেয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়ে তা চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে।

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। তাই এই মাস বাঙালির কাছে বিশেষ করে তরুণ সমাজের কাছে প্রেরণার প্রতীকে পরিণত হয়েছে।

একবিংশ শতাব্দীর এ যুগেও একুশ যেন তরুণদের শেখায় আত্মমর্যাদাশীলতা, মাথানত না করা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও যাবতীয় গোঁড়ামি আর সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে শুভবোধের অঙ্গীকার। বায়ান্নর সেই আন্দোলনের অনুপ্রেরণায়ই বাঙালি জাতি শক্তি পায় সংকটে মাথা উঁচু করে মোকাবেলা করার। এ যুগের সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার অনুপ্রেরণা দেয় একুশ।

একুশের চেতনা ও বাংলা ভাষা নিয়ে কথা বলেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের নামকরা সব তারকা শিল্পীরা। তদের কথাগুলো আজকে আমাদের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল-

ওমর সানি- বাংলা ভাষা তো আমাদের প্রাণের ভাষা। কন্তিু আমরা তো আসলে শুধু ভাষার মাসইে বাংলা ভাষাটাকে একটু গুরুত্ব দেই। আমরা আমাদের সন্তানদেরকে পড়াই ইংলশি মিডিয়ামে, ইউরোপ, আমেরিকায়। পড়াই ঠিক আছে কিন্তু তার সাথে সাথে বাংলা ভাষাটাও যেনো তারা ভালো করে বলতে ও লিখতে পারে এ ব্যাপারওে আমাদরে লক্ষ্য রাখা উচিত বলে আমি মনে করি। বাংলা ভাষাটা যেন আমাদের প্রাণের ভাষা হয়,মাতৃভাষা হয় এবং সারা বছরই যেন বাংলা ভাষার প্রচলনটা থাকে এ ব্যাপারে আমাদের সকলের লক্ষ্য রাখতে হবে।

সাইমন সাদিক- ২১ শে ফেব্রুয়ারি মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। জাতি হিসাবে এই দিনটি একদিকে যেমন আমাদের শোকের অপরদিকে তেমনি গর্বেরও। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি ভাষা সৈনিকদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি আমাদের মায়ের ভাষা। ভাষা শহিদদের আত্মত্যাগের সেই অর্জন শুধু আমাদের মাতৃভাষার প্রাপ্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলনা বরং সেটাকে ছাপিয়ে পরবর্তীতে আমাদের মধ্যে স্বাধীন সত্বার এক নতুন স্বপ্নবীজ গ্রথিত হয়েছিল। শুধু তাই নয়, সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদানের পথের সাহস ও প্রেরণাও যুগিয়েছিল ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের এই মহিমা। যারই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের আলো বাতাসে বেঁচে আছি। আমি চাইব আমরা সবাই বাংলা ভাষাটাকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসব। পৃথিবীর যে প্রান্তেই যাই না কেন বাংলা যেন আমাদের মাঝে সবসময় থাকে।

সজল- শুধুমাত্র প্রভাতফেরীতে অংশগ্রহণ করে এবং পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বাংলাভাষা ও ভাষা শহীদদের প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শন হয়না।বরং তাদের চেতনাকে বুকে ধারণ করে নিজেদেরকে দেশের জন্য উৎসর্গ করার মানসিকতা তৈরী করতে হবে। বাংলা ভাষাকে বিকৃতির কবল থেকে মুক্ত করতে হবে। আকাশ সংস্কৃতির মাঝে বিলীন না হয়ে,ব্যক্তিগত ও জাতীয় জীবনের সকল স্তরে বাংলাদেশী সংস্কৃতির লালন ও চর্চা করতে হবে।

নিরব হোসাইন- পৃথিবীতে কেবল একটি জাতি এবং একটি ভাষাই আছে,যারা মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছে।এমন জাতির একজন হতে পেরে আমি খুবই গর্ববোধ করছি। তবে দু:খের বিষয় হল যে, আজো অনেকে এই দিন পালন করে হিন্দী গান বাজিয়ে, হৈচৈ করে। আমাদের শ্রদ্ধা দেখানোর মাধ্যম হল করপোরেট। একদিনের জন্য নামীদামি ব্র্যান্ডের সাদা-কালো জামাকাপড় পড়ে, টাকা দিয়ে ফুল কিনে শহীদ মিনারে অর্পণ। দায়সারা হয়ে গেলেই আনন্দ করা শুরু হয় সিনেপ্লেক্সে গিয়ে বন্ধু-বান্ধবীর সাথে সিনেমা দেখা। সব মিলিয়ে দিন শেষ তো সব শেষ। তখন এই চেতনার কোন চেতনা থাকেনা। তাই আমি বল আসুন সবাই মিলে আমাদের বাংলা ভাষাটাকে ভালবাসি আমাদের এই সুন্দর দেশটাকে ভালবাসি। তাহলেই ভাষা শহীদদের এই আত্মত্যাগ সার্থকতা পাবে।

শ্যামল মাওলা– ছোটবেলায় আমি যে খানে থাকতাম সেখানে আমাদের কোয়ার্টারের চারপাশে অনকে ফুল বাগান ছিল এবং ফেব্রুয়ারি মাসে সে বাগানের ফুলগুলো ফুটে থাকতো। একুশে ফেব্রুয়ারির আগের দিন রাতের বেলা আমরা সবাই মিলে সেই বাগান থেকে ফুল নিয়ে এসে ফুলের তোড়া বানাতাম। সেই তোড়া নিয়ে আমরা বন্ধুরা মিলে শহীদ মনিারে যেতাম। আমি যেভাবে আমার ভাষাটাকে ভালবাসি আমি চাইব আমার সন্তান বা আমার বন্ধুটিও যেন ঠিক সেই ভাবে আমাদের এই বাংলা ভাষাটাকে মনে প্রাণে ভালবাসে।

অপু বিশ্বাস- ফেব্রুয়ারি আমাদের ভাষার মাস। আমাদের ভাষার জন্যে যারা জীবন দিয়েছেন তাদের প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। আমরা যেহেতু বাঙালি বাংলা ভাষাটা আমাদের মাতৃভাষা এ ভাষার প্রতি যেন আমরা সকলেই শ্রদ্ধা জানাই এটা আমার কামনা। আমরা যত র্স্মাটই হই,যতই আমাদের কালচারকে নতুনভাবে উপস্থাপন করি না কেনো যে মানুষগুলো আমাদের এই ভাষার জন্যে বুকের তাজা রক্ত ঝরিয়েছিলেন তাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে যেন আমরা ভাবি আমরা বাঙালি এবং বাঙলা আমাদের মাতৃভাষা।

রেসি- আজ মাতৃভাষা দবিস। একুশে ফেব্রুয়ারীর এই দিনটির জন্যই আমরা আজকে মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলতে পারছি। আমরা থাইল্যান্ড,চায়নাতে গিয়ে দেখি তারা ইংরেজিতে কথা না বলে তাদের মাতৃভাষায় কথা বলে। আমাদের দেশে অনকে আর্টিষ্ট আছেন যারা বাংলা ইংলিশ মিলিয়ে ভাষাটাকে বাংলিশ বানিয়ে ফেলেন। আমি মনে করি বাংলাকে শুদ্ধভাবে বলা ও চর্চা উচিত এবং যতটুকু পারা যায বাংলা বলা উচিত আমাদের সকলের। দেশের বাইরে গেলে ইংরেজি বলতইে হয়। আমাদের দেশের অনেক নতুন নতুন স্টার শিল্পী আছেন, তারা বাংলা ইংলিশ মিলিয়ে কি যে বলেন তা আসলে কিছুই বোঝা যায় না।

আজমেরী হক বাঁধন- একুশে ফেব্রুয়ারী আমাদের বাঙ্গালীদের জন্য গর্বের একটা বিষয়। এই দিনটিকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এটি আমাদের জন্যে অনেক গর্বের ব্যাপার। ভাষার জন্যে যারা জীবন দিয়েছেন তাদের প্রতি অনেক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা আজকের এই দিনে। আমার মনে হয় প্রতিটা মানুষেরই তার মাতৃভাষায় কথা বলতে পারা উচতি। আমরা এই অধিকারটা রক্ত দিয়ে র্অজন করেছি বলে এটা আমাদরে জন্যে আলাদা একটি ব্যাপার। ভাষাটা যেহেতু আমাদের মায়ের সাথে সম্পর্কিত তাই এটি আমাদের জন্য অবশ্যই আলাদা। আমার মনে হয় যে বছরের প্রতিটা দিনই আমাদের সচতেনভাবে আমাদের ভাষাকে ভালোবাসা উচতি। শুধু একদনিরে জন্য যেন না হয় ব্যাপারটা। আমি অনকেদনি থেকেই একটা ব্যাপার দেখছি যে, আমাদের আশেপাশের অনকেরে মাঝেই এই ব্যাপারটা কাজ করে যে, নিজে বাঙালি হয়ওে তার সন্তান হয়তো বাংলায় কথা বলতে পারেনা বা লিখতে পারেনা। এ নিয়ে আবার অনেককে র্গববোধ করতেও দেখেছি। নিজের ভাষাটা ভালোভাবে না বলতে ও লিখতে না পারাটা কখনো গর্বের বিষয় হতে পারে না বরং এটা অনেক বড় একটা লজ্জার বিষয়।

শারমিন জোহা শশী– ভাষার জন্য যে মায়ের নাড়ি ছেড়া ধন পরে ছিল রাজপথে, সেই মায়ের হারিয়ে যাওয়া সন্তানের সাধ আমরা কিভাবে দেব? উপনিবেশবাদ,পুঁজিবাদি ও সাম্রাজ্যবাদ আমাদের আজ মুষ্ঠিবদ্ধ করে ফেলেছে। সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে নিজেকে ভুলে যাচ্ছি। বেশি আধুনিক সাজতে গিয়ে অবজ্ঞা করছি আমাদের কৃষ্টি কালচারকে। এ ব্যাপারে আমাদের সবারই প্রয়োজন সচেতনতা।

তানজিন তিশা- আমাদের এই স্বাধীনতা পরবর্তী প্রজন্মের অনেক শিল্পীদের নিয়ে বলতে শুনি যে, আমাদের বাংলা ভাষাটা কি সেটা আমরা ভুলে যাচ্ছি। আমরাও মাঝে মাঝে সেটা অনুভব করি। আমি আমাদের এই প্রজন্মের সকলের জন্য বলতে চাই যে আমাদেরও উচিত বাংলা ভাষার জন্যে কিছু করা এবং আমাদের শুদ্ধ বাংলা ভাষার র্চচা করা। আর আমাদের এই ভাষার জন্যে যারা জীবন দিয়েছেন আজকের এই দিনে তাদের প্রতি জানাই অনেক শ্রদ্ধা।

আরএম-১৩/২১/০২ (বিনোদন ডেস্ক, তথ্যসূত্র: পূর্বপশ্চিম)