মুখোমুখি সামিরা-শাবনূর

মুখোমুখি

ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহ। আত্মহত্যা করেছেন তিনি। পিবিআইয়ের তদন্তে এমনটাই উঠে এসেছে। আর এই আত্মহত্যার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে চিত্রনায়িকা শাবনূরকে। বহুবছর পরে এ নিয়ে মুখোমুখি সালমান শাহ’র স্ত্রী সামিরা ও চিত্রনায়িকা শাবনূর। দুজনেই বলছেন ভিন্ন কথা।

পিবিআইয়ের তদন্তের পর গণ্যমাধ্যমকে চিত্রনায়িকা শাবনূর বলেন, ‘আমাকে ফাঁসানোর জন্য ষড়যন্ত্র হচ্ছে। অন্য মানুষদের বাঁচাতে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।’

এক প্রতিক্রিয়ায় গণমাধ্যমকে শাবনূর বলেন, ‘শুনলাম, ৫ সেপ্টেম্বর রাতে আমি সালমান শাহকে একাধিকবার ফোন করেছি। আমার ওপর রাগ করে ফোন ভেঙে ফেলেছে। আমাকে ঝাড়ি মেরেছে। বলেছে, শাবনূর, তুমি আর ফোন দিবা না। আমার উপহার দেওয়া ফ্যান ভেঙে ফেলে। এত বছর তদন্তের পর এ ধরনের কথার মানে কী!’

অপরদিকে সামিরা হক বলেন, ‘শাবনূরকে তার কৃতকর্মের জন্য সরি বলতে হবে। সেটা এখন হোক কিংবা পরে, এই জীবনে কিংবা শেষ বিচারের দিনে।’

তিনি আরও জানান, সালমান তাকে সঙ্গে নিয়েই শুটিংয়ে যেতেন। প্রায় প্রতিটি সিনেমায় সালমানের ‘ড্রেস ডিজাইনার’ ছিলেন তিনি। ৯৬ সালে বাদল খন্দকারের একটি সিনেমার শুটিংয়ে সালমান ও শাবনূর কক্সবাজারে যান। সেখানেই সম্পর্কে জড়ান তারা। ওই বছরের আগস্টে শাবনূরকে নিয়ে সিঙ্গাপুরে যান সালমান। সেখান থেকে ফিরে সালমান নিজেই সামিরাকে বলেন, তিনি একটা অন্যায় করে ফেলেছেন। শাবনূরের সঙ্গে এমন কিছু পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যে তাকে ব্ল্যাকমেল করা হতে পারে। সামিরা তখনই বিবাহবিচ্ছেদ চেয়েছিলেন। কিন্তু সালমান শোনেননি। তখন কিছু পত্রপত্রিকায় সালমান শাবনূরকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন বলে খবর বেরোয়। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায়, সংবাদ সম্মেলন করে সালমানকে ঘোষণা দিতে হয় সামিরা তার স্ত্রী।

একপর্যায়ে সামিরা চট্টগ্রামে চলে যান। চট্টগ্রামে থেকেও তিনি খবর পাচ্ছিলেন সালমানকে অসদাচরণের জন্য প্রযোজক-পরিচালক সমিতি থেকে তিরস্কার করা হয়েছে। তিনি কাজে মন বসাতে পারছেন না। বেশ কিছু অঘটনও ঘটিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত ৩ সেপ্টেম্বর সালমানের কাছে ফিরে আসেন সামিরা।

সামিরা আরও বলেন, ‘ইমন (সালমান) কতটা আবেগপ্রবণ ছিল, সেটা কেউ বুঝবে না। ভাববে সিনেমাটিক। কিন্তু আমি ফিরে দেখলাম, রাগ করে চট্টগ্রাম যাওয়ার আগে যেভাবে যা রেখে গেছি, সেভাবেই আছে। ইমন মাটিতে ঘুমোচ্ছে। সঙ্গে আমার একটা টপস।’

সামিরা সব ভুলে নতুন করে শুরু করতে চেয়েছিলেন। পরদিন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির পুরস্কার গ্রহণ অনুষ্ঠানেও দুজনে একসঙ্গে যান। ওই বছর সালমান সেরা চিত্রনায়ক ও শাবনূর সেরা নায়িকার পুরস্কার পেয়েছিলেন। তবে শাবনূর ওই অনুষ্ঠানে আসেননি। এর দুদিন পর আত্মহত্যা করেন সালমান।

এদিকে গণামাধ্যমকে সামিরা জানান, কারও প্রতি তার কোনো রাগ বা ক্ষোভ নেই। শুধু শাবনূর তার সঙ্গে যা করেছেন, সেটা তিনি ভুলতে পারেন না। একটা সময় তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা ছিল। তিনি সাজগোজ করতে শিখিয়েছিলেন শাবনূরকে। তার টি-শার্ট পরে একটি সিনেমাতে অভিনয়ও করেছেন শাবনূর। সেই মেয়েটি কী করে সালমানের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ালেন, এ নিয়ে দুঃখ হয় সামিরার।

অপরদিকে, শাবনূর বলেন, ‘সালমানকে যদি আমি পছন্দ করতাম, ভালোবাসতাম, তাকে তো মরতে দিতাম না। তাকে বাঁচিয়ে রাখতাম। সেও নিশ্চয়ই তার পছন্দের লোকের কাছেই চলে আসত। এখন শুনছি একটা কাজের লোক কোথা থেকে এসেছে। সাক্ষী দিয়েছে। এমনও শুনছি, সালমান নাকি দুই স্ত্রী নিয়ে থাকতে চেয়েছিল। আমার বিরুদ্ধে নানা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে। আমি বলব, সালমান ও আমার যদি কোনো সম্পর্ক থাকত, তাহলে সামিরার উচিত ছিল, আমাকে বলা। সে বলতে পারত, শাবনূর তুমি এটা করছ কেন? এত বছর তো সে এ ধরনের কথা বলেনি। এখন কেন এ কথা উঠছে?’

তিনি আরও বলেন, ‘একসঙ্গে কাজ করেছি, দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে, আড্ডা হয়েছে। ঘোরাঘুরির সময় সামিরাও সঙ্গে থাকত। সালমানও সামিরাকে সব জায়গায় নিয়ে যেত। আমার মাকে বলত, আন্টি, আমার জানটাকে একটু দেখে রাইখেন। সিনেমাতে কাজ করতে গিয়ে দারুণ বন্ধুত্ব হয়েছে। ভাইবোনের সম্পর্ক ছিল। সালমানের মা নীলা আন্টিও সব সময় এমনটা বলতেন।’

শাবনূর বলেন, ‘সামিরার কাছে শুনেছি, সালমান মারা যাওয়ার আগে আরও দুবার আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল। তখনো কি তাহলে আমার জন্য আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল? আসলে সালমানের মৃত্যু কীভাবে হয়েছে, তা আমরা কেউই জানি না। আমি তো এখন বলব, আমাকে ফাঁসানোর জন্য ষড়যন্ত্র হচ্ছে। অন্য মানুষদের বাঁচাতে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।’

আরএম-০৪/২৭/০২ (বিনোদন ডেস্ক)