‘শাবনূরের জন্য এক নৃত্যশিল্পীকে মারতে চেয়ে ছিলেন সালমান’

শাবনূরের জন্য

রেজা হাসমত। চলচ্চিত্র নির্মাতা। প্রয়াত অভিনেতা সালমান শাহ তার পরিচালনায় ‘প্রেম পিয়াসী’ ছবিতে সর্বশেষ অভিনয় করেছেন। ওই ছবির ডাবিংই ছিল সালমানের জীবনের শেষ কাজ। সালমান শাহর মৃত্যু ও অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে দেশের একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন।

২৩ বছর পর সালমান শাহ হত্যারহস্য উদ্ঘাটন করল পিবিআই। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

সালমানের মৃত্যুর বিষয়টি নানা পর্যায়ে তদন্ত করতে সময় লেগেছে অনেক বছর। যতটুকু পেরেছি তদন্ত সংস্থাকে সহযোগিতা করেছি। আমাদের নির্মাতাদের দেওয়া তথ্য থেকে অনেক কিছুই তারা প্রকাশ করেছে। সালমানের বাসায় কী হয়েছিল এটা তো আমাদের জানার কথা নয়। এর বাইরেও শাবনূর ও সালমানের স্ত্রী সামিরাকে জড়িয়ে কিছু নতুন কথাও এসেছে। এ কারণে সালমানের মৃত্যু এখনও ধোঁয়াশার মধ্যে আছে।

আপনার ‘প্রেম পিয়াসী’ ছবির ডাবিংই ছিল সালমান-শাবনূরের শেষ কাজ। সেখানে হঠাৎ হাজির হন সালমানের স্ত্রী সামিরা। আসলে সেদিন কী ঘটেছিল ডাবিং রুমে?

সামিরা ও সালমানের বাবা ১৯৯৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রাতে এফডিসিতে ডাবিং রুমে একসঙ্গে এসেছিলেন। এসেই সামিরা আমার রুমে ঢোকেন।

সামিরা দেখল, ওরা [সালমান-শাবনূর] ডায়ালগগুলো পড়ছিল, তখন দরজা খোলা। আমি সংলাপ বুঝাচ্ছিলাম। এ সময় সামিরা বুঝতে পারে, ভেতরে আপাতত ডাবিং হচ্ছে না। তখন ও ওই রুমটায় [ডাবিং রুম] ঢুকে পড়ে। তবে সামিরা একটু অন্ধকারের মধ্যে দু’জনকে বসা দেখে চটেছিলেন। তবে তাৎক্ষণিক বেরিয়ে যাননি। আমি সামিরাকে বসার জন্য বললাম। পরে শান্ত হন তিনি। ডাবিং শেষ হলে সালমান, সালমানের বাবা ও সামিরা একসঙ্গে বাসায় চলে গেলেন। শাবনূরও এফডিসি ত্যাগ করল। পরে আমিও সোজা বাসায় চলে যাই। পরদিন সালমানের শুটিং ছিল জুমার নামাজের পর। কিন্তু শুনলাম সালমান আর নেই।

ওই দিন সালমানের মানসিক অবস্থা কেমন ছিল?

ডাবিং থিয়েটার রুমে ঢোকার আগে নজরুল নামের এক নৃত্যশিল্পীকে মারতে উদ্যত হয়েছিল সালমান। শাবনূরের প্রেমে পাগল ছিল নজরুল। বিরক্তও করত তাকে। এটা শুনেই সালমান চটে গিয়েছিল। তখন এফডিসি থেকে বের করে দিয়েছিল নজরুলকে। তবে ডাবিংয়ে একেবারে ঠান্ডাই ছিল।

তার ব্যক্তিগত বিষয়ে কাজকর্মে কোনো প্রভাব পড়েছে কখনও?

না, এমনটি দেখিনি। সালমান সামিরার প্রতি খুশি ছিল। তার নতুন স্টাইল, ড্রেসআপে সে [সামিরা] বেশ সহযোগিতা করত। সামিরা-সালমানের মধ্যে যে প্রেম ছিল এটা আমি দ্বিতীয় কারও মধ্যে দেখিনি। ‘জানু’ ছাড়া কথা বলত না সামিরা। সালমানের প্রচুর মেয়ে ভক্ত ছিল। বাসায় থাকলে কয়েক মিনিট পরপরই ফোন আসত। এটি সহ্য করতে পারত না সামিরা। এ নিয়ে আমি সামিরাকে অনেক বুঝিয়েছি। সালমানের মায়ের সঙ্গে দূরত্ব ছিল সামিরার। কিন্তু এসব কখনই শুটিংয়ে প্রভাব পড়েনি।

কাজ নিয়ে সালমানের ভাবনা-চিন্তা কেমন ছিল?

তার মধ্যে ঈশ্বর প্রদত্ত কিছু বিষয় ছিল। ক্ষুদ্র এ জীবনে অনেক শিল্পীর সঙ্গে কাজ করেছি। কিন্তু তার মতো শিল্পী একজনও পাইনি। ক্যামেরার সামনে চরিত্রের সঙ্গে একেবারে মিশে যেত সালমান। এটা তার বড় গুণ।

সালমান সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন?

আমার প্রাণের ছেলে ছিল সালমান শাহ। কিন্তু ওর মৃত্যু এখনও মেনে নিতে পারিনি। প্রাণবন্ত ছেলেটিকে সংকীর্ণতা ছুঁতে পারেনি কখনও। সবাইকে সমান চোখে দেখত। কাজের প্রতি বেশ দরদ ছিল। নির্মাতাকে সম্মান আর প্রোডাকশন বয়কে ধমকের ওপর রাখবে, তা করেনি। সবার অতি কাছের ছিল সালমান। বিনিময়ে ভালোবাসাও পেয়েছে।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সালমান শাহকে ঢাকার বাসায় নিজ কক্ষে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাকে প্রথমে হলি ফ্যামিলি ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।

আরএম-০৩/২৮/০২ (বিনোদন ডেস্ক)