যে পরিবারের জন্য জাপানের কেন শিমুরা বাংলাদেশের ‘কাইশ্যা’

করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২৯ মার্চ টোকিওর একটি হাসপাতালে মারা গেছেন জনপ্রিয় জাপানিজ কমেডিয়ান কেন শিমুরা। তিনি বাংলা ভাষার মানুষের কাছে ‘কাইশ্যা’ নামে বেশ পরিচিত ছিলো। তার মৃত্যুর পর জাপানের কেন শিমুরা কীভাবে বাংলাদেশের ‘কাইশ্যা’ হলেন সেই খোঁজ নিয়েছে দেশের অনলাইন নিউজ পোর্টাল বার্তা২৪.কম।

‘পাগলা ডিরেক্টর’ শিরোনামের একটি ইউটিউব চ্যানেল কেন শিমুরা ভিডিওগুলো বাংলায় ডাবিং করে তাঁকে ‘কাইশ্যা’ নামে জনপ্রিয় করে তুলেছেন বাংলাদেশে। চ্যানেলটির পিছনের মানুষ দুই ভাই মোরশেদ আহমেদ সুজন ও মনসুর আহমেদ সজিব। তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন জুনায়েদ হাবীব।

প্রশ্ন: করোনায় হেরে গেলেন জনপ্রিয় জাপানিজ কমেডিয়ান কেন শিমুরা। দীর্ঘদিন ঘরে তার ভিডিও বাংলায় ডাবিং করে তাকে বাংলাদেশে ‘কাইশ্যা’ নামে জনপ্রিয় করে তুলেছেন। তাঁর মৃত্যুতে খারাপ লাগছে নিশ্চয়?

মনসুর আহমেদ সজিব: কখনোই ভাবিনি অনলাইনে কাজ করতে করতে এতো বড় মাপের অভিনেতার সাথে আমাদের এভাবে আত্মার সম্পর্ক গড়ে উঠবে। উনার ভিডিও নিয়ে এতো এতো কাজ করেছি যে উনার চেহারাটা সব সময় মুখের সামনে ভেসে থাকে। স্যারের মৃত্যুটা এখনো মেনে নিতে পারছিনা। সুজন ভাই সবসময় বলতেন একদিন সুযোগ হলে শিমুরা স্যারের সাথে দেখা করবো, কিন্তু সেই স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেলো। বিশেষ করে উনার ভিডিওতে আমার ভয়েসটা নিয়েই আমাকে সবাই চিনে। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হলো কেন শিমুরা স্যারের চেহারায় আমি আমাকে খুঁজে পেতাম। নিজের অজান্তেই আমি উনার সাথে জড়িয়ে গেছি।

প্রশ্ন: ‘পাগলা ডিরেক্টর’র শুরুর গল্পটা…

মোরশেদ আহমেদ সুজন: আমি আর ছোট ভাই সজিব বিভিন্ন বেসরকারি নিউজ চ্যানেলে চিত্র সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছি ১১ বছরের বেশি সময় ধরে। এর পাশাপাশি ২০১৭ সালের মে মাসে আমি একটি চ্যানেল খুলি। প্রথমে নাম দিয়েছিলাম ক্রেজি ডিরেক্টর। পরে ভাবলাম বাংলা ইংলিশ মিলিয়ে দেয়। পরে ঠিক করলাম পাগলা ডিরেক্টর। তারপর থেকে বিভিন্ন মিক্সিং ভিডিও বানাতাম। ভালো সাড়াও পেয়েছিলাম। ‘কাইশ্যা’ শুরু করার আগে আমাদের চ্যানেলে সাবস্ক্রাইবার ছিল ২২ হাজারের মতো। যেদিন কাইশ্যার ভিডিও প্রথম আপলোড দিয়েছিলাম ঐ দিনের পর থেকেই সব কিছু পাল্টে গেলো। স্বপ্নের মতো ভিউ/সাবস্ক্রাইবার পেলাম। তবে একটা কথা বলে রাখা ভালো। কাইশ্যা ভিডিও বানাতে আমাদের অন্যান্য ভিডিও তুলনায় ৩ গুন বেশি পরিশ্রম করতে হয়েছিল। তবুও ভালো লাগে। কারণ সবাই খুবই আনন্দ খুঁজে পায় এর মাঝে। কাইশ্যা চরিত্রে স্রষ্টা সজিব।

প্রশ্ন: সজিব ‘কাইশ্যা’ হলেন কীভাবে?

মনসুর আহমেদ সজিব: একদিন ভাইয়া ইউটিউবিং করছিলো, আমাকে কাইশ্যার একটি ভিডিও দেখান (ফানি ডোর )। ঐদিন থেকে কাইশ্যাকে চিনি আমি। ভয়েস আবিষ্কারের বিষয়টা খুবই হাস্যকর ছিল। যেদিন প্রথম এই কণ্ঠটা দিচ্ছিলাম ঐদিন আমরা নিজেরাই অনেক হাসছিলাম। তারপর ভাইয়া আর আমি ওই ভয়েসটাই ভিডিওতে দেয়া শুরু করি। একদিন ভিডিও বানাতে গিয়ে সুজন ভাই বললেন শিমুরা স্যারের বাংলা ফানি নাম খুঁজতে। পরে আমি নাম দিলাম। এরপর থেকেই কাইশ্যার কণ্ঠ চলছে সবার প্রিয় হয়ে।

প্রশ্ন: আপনাদের ভিডিওতে নারী কণ্ঠগুলো কাদের?

মনসুর আহমেদ সজিব: আমাদের ভিডিও জন্য প্রচুর ফিমেল ভয়েস লাগে। তাই পরিবারের সবাই থেকে ভয়েস নেয়া শুরু করলাম। এদের ভিতর আছেন আমার বোন শান্ত, অন্ত, বড়ো ভাই, দুই ভাবি ও কাজিন রবিন। প্রথমে সবাই ভয়েস দিতে ভয় পেতো মাইক্রোফোনের সামনে ডায়ালগ দিতে অনেক সমস্যা হতো। কিন্তু আস্তে আস্তে তারা অভ্যস্ত হয়ে গেছেন এখন আর সমস্যা হয়না।

প্রশ্ন: ২ বছরের বেশি সময় ধরে এই কাজ করছেন। প্রাপ্তি কতটা?

মনসুর আহমেদ সজিব: প্রাপ্তি বলতে গেলে দর্শক শ্রোতাদের ভালোবাসাই। তারা আমাদের ডাবিং ভালোবেসেছে বলেই পাগলা ডিরেক্টর চ্যানেলটি আজ এই পর্যায়ে। আমেরিকা, ইংল্যান্ড, স্পেন, সৌদি আরব আরও অনেক দেশ থেকে প্রবাসীরা ফোন দেন আমার ভয়েসটা একটু শুনার জন্য। আর আমি ‘কাইশ্যা’র ভয়েসে হ্যালো বলা মাত্রই উনারা হেসে দেন। এ পর্যন্ত কত হাজার বার এই কাজটি করেছি। এছাড়া আমাদের ভিডিও গুলো পরিবার নিয়ে সবাই দেখে। ছোট থেকে বড় সবাই মিলে দেখে আর আমাদের অনেক ভালোবাসে, এইটাই আমাদের প্রাপ্তি। সাথে আছে লক্ষ দর্শকের দোয়া ও ভালোবাসা।