পরীমনি ইস্যুতে মুখ খুললেন শাকিব খান

মাদক মামলায় চিত্রনায়িকা পরীমনির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পরীমনি ইস্যুতে ইতোমধ্যে শিল্পী সমিতির অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এবার শাকিব খানও এই চুপ থাকাকে মেনে নিতে পারলেন না। তিনিও কথা বললেন পরীমনিকে নিয়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তিনি সম্প্রতি একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এই স্ট্যাটাসের বিষয়বস্তু পরীমনির মাদক মামলায় কারাগারে যাওয়া এবং পরীমনির সঙ্গে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনা ও শিল্পী সমিতির নীরবতা।

সময়নিউজের পাঠকদের জন্য শাকিব খানের স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

খেয়াল করছিলাম, অপেক্ষাও করছিলাম। প্রত্যাশা ছিল, বিপরীতে বেড়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। গত কয়েকদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে থেকে শুক্রবার আদালতের নির্দেশে পরীমনিকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সহকর্মী হিসেবে যতদূর জানি পরীমনি বাবা-মাহীন। তার বেড়ে ওঠা পারিবারিকভাবে আর পাঁচটা তরুণ-তরুণীর বেড়ে ওঠা, স্ট্রাগলে যথেষ্ট পার্থক্য আছে। হয়তো সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে পরীমনি অনেক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। ১০ আগস্ট আদালত চত্বরে পরীমনির শতবর্ষী নানা তার নাতনিকে দেখতে ছুটে গিয়েছিলেন। করোনার এই ভয়াবহতাও আটকাতে পারেনি তার বৃদ্ধ নানাকে, রক্তকে উপেক্ষা করতে পারেনি রক্ত। কিন্তু সময় কি নিষ্ঠুর! পরীমনির সঙ্গে নাকি দেখাই হলো না বৃদ্ধ নানার। আদালত চত্বরেই পরীমনির নানাকে বলতে শুনেছি, “পরীমনি নিজের জন্য জীবনে কিছুই করেনি। সব মানুষের জন্য দান করে গেছে। আর এখন পরিস্থিতির শিকার হয়েছে।”

পরীমনির মামলা এখন বিচারাধীন। ওই বিষয়ে কিছু বলছি না। সে যে মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে, তার কী অপরাধ সেটা বিশ্লেষণে যাচ্ছি না। দেশের প্রচলিত আইন আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রয়েছে। নিশ্চয়ই নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে সঠিক বিচার হবে। কিন্তু তার আগে পরীমনির জীবন ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে যেভাবে তাকে কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে, এটা সত্যি দুঃখজনক।

আরও দুঃখজনক ঘটনা হচ্ছে, গত কয়েকদিন ধরে খেয়াল করছি শুধুমাত্র অভিযোগের ভিত্তিতে পরীমনি গ্রেপ্তারের পর তার প্রতি কোনো ধরনের সহযোগিতার হাত না বাড়িয়ে, দুঃসময়ে শিল্পীর পাশে না থেকে উল্টো তড়িঘড়ি করে সংবাদ সম্মেলন করেছে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। মুহূর্তে পরীমনির সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে! এ যেন কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিঁটে!

সমিতির এই আচরণ সত্যিই খুব রহস্যজনক। বিষয়টি নিয়ে বিবেকবান অনেক সিনিয়র জুনিয়র শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের আক্ষেপ রয়েছে। শিল্পীর সাথে সংগঠনের এটি একটি অমানবিক আচরণ। প্রশ্ন থেকে যায়, এখনকার চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি তাহলে কাদের স্বার্থে?

বিগতদিনেও একাধিক সিনিয়র শিল্পী এরচেয়েও ভয়ঙ্কর অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। কিন্তু তখনকার শিল্পী সমিতি অভিযুক্ত সদস্যের সদস্যপদ স্থগিত করেনি। বরং পাশে ছিল, রাস্তায় নেমেছিল। কিন্তু এখনকার শিল্পী সমিতির এসব আচরণ বিতর্কিত। আবারও বোঝা গেল, এই শিল্পী সমিতি সবাইকে এক করতে পারেনি, বরং বিচ্ছিন্ন করেছে। বিভেদ তৈরি করে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের পরিবেশ নষ্ট করেছে। হয়তো এজন্য চলচ্চিত্রের আজ এই দুর্দশা।

এমনিতেই নানা কারণে সিনেমা আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তার মধ্যে এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে সামনে আরো ঘোর বিপদ।

যারা পরীমনিকে বিপথে নিয়ে গেছে, তাদেরকেও খুঁজে বের করা উচিত। পরীমনি ত্রিশটির বেশি সিনেমার সাথে জড়িত বলে জানতে পেরেছি। তার হাতে আছে আরও বেশ কিছু সিনেমা। কিন্তু যারা বছরের পর বছর একটি সিনেমাতেও কাজ না করে দিনের পর দিন শিল্পী সাইনবোর্ড ব্যবহার করে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে তাদেরও আয়ের উৎস খুঁজে বের করা উচিত।

সহশিল্পী হিসেবে আশা রাখি, পরীমনির ক্ষেত্রে আইন তার স্বকীয়তা বজায় রাখবে। পরীমনি যখন ফিরবে তার ভুল থেকে শিক্ষাও নেবে। যে শিক্ষা তার আগামী জীবনে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে।

দুই দফা রিমান্ড শেষে শুক্রবার দুপুরে পরীমনি এবং দিপুকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক গোলাম মোস্তফা।

অন্যদিকে পরীমনি ও দিপুর জামিন আবেদন করেন তাদের আইনজীবীরা। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ধীমান চন্দ্র মণ্ডল জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

গত ৪ আগস্ট পরীমনির বনানীর বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। দীর্ঘ অভিযানে তার বাসা থেকে মাদক উদ্ধারের কথা জানায় র‌্যাব। এ ঘটনায় ৫ আগস্ট বনানী থানায় মাদক আইনে মামলা করা হয় পরীর বিরুদ্ধে। ওইদিনই সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয় পরীমনিকে। তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। পরে মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) ফের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাস।

পরীমনি ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন মডেলিং দিয়ে। এরপর নাটকে অভিনয় শুরু করেন। তবে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের আগেই আলোচনায় আসেন বিতর্কিত এ অভিনেত্রী। চলচ্চিত্র নায়িকা হিসেবে ক্যারিয়ার শুরুর প্রথম দিকেই ২৩টি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে রীতিমতো হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন পরীমনি।

২০১৫ সালে মুক্তি পায় তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘ভালোবাসা সীমাহীন’। স্বল্প ক্যারিয়ার জীবনে খুব বেশি ছবিতে অভিনয় করেননি পরীমনি, তবে বনানীতে ফ্ল্যাট ও কোটি টাকার বিলাশবহুল গাড়ির মালিকানা, পাঁচ তারকা হোটেলে জন্মদিন পালন ও বিভিন্ন সময়ে তার দেশের বাইরে ভ্রমণ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বহুবার। কিন্তু এত সব কিছুর মালিকানার পেছনের আয়ের উৎস খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও বিতর্ক পিছু ছাড়েনি তার। সাংবাদিক তামিম হাসানের সঙ্গে ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পরীমনির বাগদান হয়। পরবর্তীকালে তাদের এনগেজমেন্ট ভেঙে যায়। ২০২০ সালের ৯ মার্চ তিনি পরিচালক কামরুজ্জামান রনিকে তিন টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেন, সেটাও টেকেনি। ওই বছরেই বিচ্ছেদ হয় তাদের। তবে এর আগেও গুঞ্জন উঠেছিল অভিনয়ে আসার আগেও নাকি বিয়ে করেছিলেন পরীমনি। ২০১২ সালে সৌরভ নামের একজনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। সে সময়ের কিছু ছবিও ভাইরাল হয়েছিল। তবে পরীমনি সব অস্বীকার করেন।

তবে সব কিছু ছাপিয়ে আবারো আলোচনায় আসেন ৯ জুন মধ্যরাতে সাভারে অবস্থিত ঢাকা বোট ক্লাবে তাকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে। এরপর প্রধান আসামি করে ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদ ও অমিসহ পাঁচজনের নামে মামলা করেন তিনি। পরে তাদের গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

এসএইচ-০৯/১৪/২১ (বিনোদন ডেস্ক)