শনিবার বিকেল’ কেন আটকে আছে, প্রশ্ন ফারুকীর

বরাবরই সিনেমাকে বলা হয় সমাজের দর্পন। যেসব সিনেমা দর্শকের জীবন ছুঁয়ে যায়, সেগুলোই যেন হৃদয়ে দাগ কেটে যুগের পর যুগ একটা আলাদা জায়গা করে রাখে। কিন্তু সব ঘটনাকে তুলে এনে জীবনবোধে মিলিয়ে দেয়াটাও এতোটা সহজ নয়।

কিন্তু এমন কিছু কারিগর আছেন যারা পর্দায় অনবদ্যভাবে বলে যান আপনার জীবনের কথা। এমনই এক স্বনামধন্য নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। বিজ্ঞাপন, নাটক, সিনেমা সব ক্ষেত্রেই নিজের মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন তিনি। তবে বিকল্প ঘরানার সিনেমাতেই যেন ফারুকীর পারদর্শিতা। ‘ব্যাচেলর’, ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’, ‘পিঁপড়াবিদ্যা’ যার প্রমাণ।

অসংখ্য সাফল্য থাকলেও নিজের কোনো সৃষ্টি যখন অদৃশ্য বেড়াজালে আটকে পড়ে তখন সৃজনশীল যেকোনো কারিগর হতাশায় ভাসবেন-এটাই স্বাভাবিক। বলছি ২০১৬ সালে ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলা অবলম্বনে নির্মিত মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সিনেমা ‘শনিবার বিকেল’ বা ‘স্যাটার ডে আফটারনুন’র কথা। যদিও নির্মাতার মতে সিনেমাটি কোনো বাস্তব ঘটনাকে কেন্দ্র করে নয় বরং ঘটনা থেকে উৎসাহিত হয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। তারপরও কেন এতো বাধা।

তবে কেন আটকে আছে মেধাবী এ নির্মাতার সিনেমা ‘শনিবার বিকেল?’ প্রথমবার সেন্সর বোর্ডে সিনেমাটি যখন যায় তখন বেশ প্রশংসা কুড়ালেও অদৃশ্য এক ইশারায় সিনেমাটিকে আবারও সেন্সরের দ্বারস্থ হতে হয়। এরপরই আটকে দেয়া হয় সিনেমাটি। ছাড়পত্র না পাওয়ার পর আসে নিষিদ্ধ হওয়ার খবর। এ বিষয়েও নির্মাতা পরিষ্কার করেছেন, ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমায় কোনো সেন্সর বিধি লঙ্ঘন করা হয়নি। তারপরও এটির ছাড়পত্র না পাওয়া হতাশাজনক।

সম্প্রতি নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর একটি স্ট্যাটাস ভক্তদের মনে আবারও দুঃখের সঞ্চার ঘটায়। ফারুকী তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, আজকে সকাল সকাল তার মনটা খারাপ হয়ে গেলো! তিনি ‘শনিবার বিকেল’ নামে একটি সিনেমা নির্মাণ করেছেন যেটা সেন্সর বোর্ড সদস্যরা দেখে বিভিন্ন পত্রিকায় ইন্টারভিউ দিয়ে বলেন, আমরা দ্রুতই সেন্সর সার্টিফিকেট দিয়ে দিচ্ছি। তারপর এক অদৃশ্য ইশারায় ছবিটার দ্বিতীয়বার শো করে তারা। এবং তারপর বলে দিল, ছবিটি ব্যান। নির্মাতা আপিল করলেন। আপিলের আজকে সাড়ে তিন বছর হলেও কোনো উত্তর পেলেন না ফারুকী। এমন পরিস্থিতিতে নির্মাতা নিজেদের অবস্থার সাথে তারাপদ রায়ের কবিতা মিলিয়ে বলেন, ‘আমাদের কখন সর্বনাশ হয়ে গেছে আমরা টেরও পাইনি।’

এরপর এই একই স্ট্যাটাসে সম্প্রতি তার ফেসবুক অ্যালগোরিদমে আসা একটি রিভিউয়ের কথা বলেন।তিনি বলেন, এ রিভিউ আগে পড়েননি তিনি। ফারুকী লিখেন ফুল, পাখি, লতা, পাতা নিয়া ছবি বানালে ‘ঠিক আছে’! এমন কিছু বানানো যাবে না যেখানে আমাদের চেহারা দেখা যায়। কিন্তু তিনিতো চিরকাল সেইসব গল্পই বলে এসেছেন যেখানে চেহারা দেখা যায়, সেটা প্রেমের গল্পই হোক আর রাজনীতির গল্পই হোক। তাহলে পাখি সব যে রব করবে, সেটা কি নতুন সুরে করতে হবে? নতুন সুর শিখতে হবে?

সেন্সর বোর্ড নিয়ে এতো কিছু শোনার পর, এ সম্পর্কে একটু ক্লিয়ার না করলেই নয়।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ ফিল্ম সেন্সর বোর্ডই সাধারণভাবে জনসাধারণের মধ্যে প্রদর্শিতব্য সিনেমাগুলো পরীক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে। মূলত একটা সিনেমা শেষ হওয়ার পর প্রযোজক বা পরিচালক সেন্সর বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন, তারপর তারা দেশ, রাষ্ট্র, ধর্মের বিরুদ্ধে বা অনৈতিক কিছু আছে কিনা যাচাই করে কর্তৃপক্ষ সেটিকে অনুমোদন দেয়।

বাংলাদেশের ইতিহাসে সিনেমা সেন্সর বোর্ডে আটকে যাওয়ার ঘটনা বিরল নয়। সম্প্রতি ভুলভাবে উপস্থাপন ও অপ্রাসঙ্গিক দৃশ্যধারণের কারণে সেন্সরে আটকে গেছে সিনেমা ‘পদ্মা সেতু’। এ ছাড়াও ‘সাহস’, ‘লিপস্টিক আন্ডার মাই বোরখা’, ‘নূর’, এবং এই আটকে যাওয়ার কাতারে আছে বহুল প্রতীক্ষিত মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমাও।

এসএইচ-২৭/০৭/২২ (বিনোদন ডেস্ক)