ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে বলিউড তারকা

হাতে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি। তবে মোটা মাইনের চাকরি বা ব্যবসায় মন না দিয়ে উল্টো বেছে নিয়েছেন অভিনয়ের মতো অনিশ্চিত পেশা।

বলিউডে তারকাসন্তান না হলে নাকি সুবিধা করতে বেশ বেগ পেতে হয়–বলিপাড়ার বাসিন্দাদের সম্পর্কে এমন কথা শোনা যায়। তবে সেটা কি সবার জন্যই? এমন বলি তারকাও রয়েছেন, যাদের পরিবারের কেউ সিনেমা জগতের নন। তাদের হাতে ছিল শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি। তবে তারা মোটা মাইনের চাকরি বা ব্যবসায় মন দেননি। উল্টো বেছে নিয়েছেন অভিনয়ের মতো অনিশ্চিত পেশা।

ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে বলিউডের তারকা হয়েছেন অনেকে। তাদের মধ্যে সুশান্ত সিং অন্যতম। বলিউডে তার ওড়ান শুরু হয়েছিল। কিন্তু অকালমৃত্যু হঠাৎই দাঁড়ি টেনেছিল সেই ওড়ানে। সেই স্বল্প সময়ের মধ্যেও নিজের জাত চিনিয়েছিলেন ৩৪ বছরের সুশান্ত সিংহ রাজপুত। ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দায় অনায়াস উত্তরণের মাঝে ‘পবিত্র রিশ্‌তা’র মানবকে আজও মনে রেখেছেন অনেকে। আবার মধ্যবিত্ত ঘরের সেই ছেলেই এমএস ধোনির বেশে বেদম ‘হেলিকপ্টার ছক্কা’ হাঁকিয়েছেন। ‘কাই পো চে’, ‘ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সী’ থেকে ‘কেদারনাথ’ বা ‘শুদ্ধ দেশি রোম্যান্স’ বারবার নিজেকে বদলেছেন সুশান্ত। বলিউডে খ্যাতির আলোয় আসার আগে অবশ্য এই মেধাবী ছাত্রটির ঝুলিতে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিও ছিল। দিল্লি কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিধারীর কাছে স্ট্যান্ডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশিপের প্রস্তাবও এসেছিল। তবে সেসব ছেড়েছুড়ে বলিউডের পথেই পা বাড়িয়েছিলেন সুশান্ত।

এ তালিকায় আরেকজন ভিকি কৌশাল। বলিউডের প্রথম সারির অভিনেতাদের মধ্যে সহজেই নিজের জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। ‘গ্যাংস অব ওয়াসেপুর’-এর সহকারী পরিচালক ভিকি পরের ছবিগুলোতে এসেছিলেন মুখ্য চরিত্রে। গাছের ডালের আশপাশে নাচ-গানের বদলে অভিনয়ের সুযোগ ছিল ‘লভ সব তে চিকেন খুরানা’, ‘বম্বে ভেলভেট’ বা ‘মসান’-এর মতো ছবিতে। সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে ছাড়েননি ভিকি। বলিউডও তাকে যোগ্য মর্যাদা দিয়েছে। বলিপাড়ায় পা রাখার আগে মুম্বাইয়ের রাজীব গান্ধী ইনস্টিটিউট থেকে ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশনস ইঞ্জিনিয়ারিং করেছেন ভিকি। বাবার ইচ্ছে ছিল, ছেলে সেই পথেই পা বাড়াক। তবে ভিকি উল্টো পথে হেঁটেছিলেন। তা নিয়ে বোধ হয় ভিকির বাবার আর আক্ষেপ নেই!

তালিকায় যে শুধু নায়করাই আছেন তা নয়, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পর বলিউডের পথে এগিয়েছিলেন নায়িকারাও। তালিকায় একেবারে ওপরের দিকে রয়েছেন তাপসী পান্নু। বলিউডে ‘বহিরাগত’ হলেও তামিল এবং তেলুগুতেও কম জনপ্রিয় নন তিনি। বলিউডে ‘পিঙ্ক’ থেকে ‘থাপ্পড়’ বা ‘ষাঁন্ড কি আঁখ’ বারবারই নিজেকে ছাপিয়ে গিয়েছেন তাপসী। বলিউডের আগে তামিল, তেলুগু ছবি করেছেন। তারও আগে নয়াদিল্লির গুরু তেগ বাহাদুর ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ডিগ্রি হাসিল করেছেন। এমনকি, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বেশ কিছু চাকরিও করেছেন। তার পর অবশ্য মডেলিং এবং অভিনয়ের দিকে ঝুঁকেছেন তাপসী।

দক্ষিণী সিনেমা হোক বা বলিউড, ছোট পর্দা হোক বা বড়, বেছে বেছে কাজ করলেও চোখে পড়েছেন আর মাধবন। মণি রত্নমের ‘আলাইপায়ুথে’ নায়ক তামিল সিনেমায় কম জনপ্রিয় নন। আবার বলিউডে ‘থ্রি ইডিয়টস’ বা ‘তনু ওয়েডস মনু’ অথবা ছোট পর্দায় ‘সি হক্‌স’-এর মতো টেলিসিরিজেও নজর কেড়েছিলেন তিনি। অভিনেতা অথবা ‘রকেট্রি: দ্য নাম্বি এফেক্ট’-এর প্রযোজক ম্যাডি তার স্নাতক স্তরের পড়াশোনা সেরেছিলেন কোলাপুরের রাজারাম কলেজ থেকে। তবে ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিগ্রি পাওয়ার পর একসময় ভেবেছিলেন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেবেন। পাবলিক স্পিকিংয়ের কোর্স করে কাজে যোগও দিয়েছিলেন। তবে শেষমেশ মডেলিং এবং পরে অভিনয়ের দিকে ঝুঁকেছিলেন।

‘প্যায়ার কা পঞ্চনামা’য় ‘সিদেসাধা’ প্রেমিকের সুখ-দুঃখের কথা শুনিয়েছিলেন কার্তিক আরিয়ান। তারপর থেকে মিষ্টি হাসির রোগা চেহারার ছেলেটি ধীরে ধীরে হলেও অনেকেরই মনে জায়গা করে নিয়েছেন। ‘লুকাছুপ্পি’, ‘পতি পত্নী অউর ও’ থেকে হালফিলের ‘ভুলভুলাইয়া-২’ কার্তিকের বাজারদর বাড়ছে। সেই কলেজের সময় থেকেই অভিনয়ের পোকা ঢুকেছিল কার্তিকের মাথায়। নভি মুম্বাইয়ে ডিওয়াই পাটিল কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ার সময় থেকেই ক্লাস ফাঁকি দিয়ে অডিশন দিতে ছুটতেন। তবে সেসবের মাঝেও বায়োটেকনোলজিতে ডিগ্রি অর্জন করেছেন কার্তিক। তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময় বলিউডে অভিষেকও করে ফেলেন তিনি। তারপর আর পিছু ফিরে তাকাননি।

বাবা মহারাষ্ট্রের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী তথা এককালের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিলাসরাও দেশমুখ। দুই ভাইও রাজনীতিতে। তবে সে পথে হাঁটেননি রীতেশ দেশমুখ। সেই ২০০৩ সাল থেকে একের পর এক হিন্দি এবং মারাঠি ছবিতে কাজ করে চলেছেন। ‘মস্তি’, ‘ক্যায়া কুল হ্যায় হম’, ‘ব্লাফমাস্টাস!’, ‘মালামাল উইকলি’ থেকে ‘এক ভিলেন’ অথবা ‘লাল ভারী’ কমেডি থেকে খলনায়ক বা অ্যাকশন হিরোর চরিত্রে নিজেকে ঢেলে দিয়েছেন। রাজনীতির পরিবেশে বড় হওয়া রীতেশের ঝুলিতেও রয়েছে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি। মুম্বাইয়ের কমলা রহেজা কলেজ অব আর্কিটেকচার থেকে স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে প্রথাগত পড়াশোনা সেরেছেন তিনি। তবে সেটি কাজে লাগিয়ে রোজগারের পথ খোঁজার বদলে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোই উচিত মনে করেছেন রীতেশ।

তাপসী পান্নুর মতো কৃতী শ্যাননও ইঞ্জিনিয়ার। তবে দিল্লি পাবলিক স্কুলের এই প্রাক্তনী গোড়ায় মডেলিংকেই পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন। ‘বরেলী কি বরফি’, ‘লুকাছুপ্পি’-র মতো সিনেমার পর হঠাৎ ‘মিমি’র মতো ছবিতে দেখা গিয়েছে তাকে। সারোগেট মায়ের ভূমিকায় বেশ প্রশংসাও কুড়িয়ে নিয়েছেন কৃতী। স্নাতক স্তরে নয়ডার জেপি ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি থেকে ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন্সে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি রয়েছে কৃতীর। তবে নায়িকা হওয়ার টানে পা বাড়িয়েছিলেন মুম্বাইয়ে। কৃতীর সে সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল, সেটাই মনে করেন অনেকে।

সিনেমার পর্দায় তো অনেকেই নায়ক হতে পারেন। বাস্তবে কজন সে ভূমিকায় অবতীর্ণ হন? সোনু সুদ বোধহয় বাস্তবেও নায়ক! করোনাকালে ভিন রাজ্যের মজুর হোক বা ইউক্রেনের আটকে পড়া পড়ুয়া সবার দিকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সোনু। হিন্দি ছাড়াও অজস্র তামিল, তেলুগু এবং কন্নড় ছবিতে দেখা গিয়েছে তাকে। পাঞ্জাবের মোগার বাসিন্দা সোনু সেখান থেকেই দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তবে স্নাতক স্তরে তিনি নাগপুরের যশবন্তরাও চহ্বান কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে ডিগ্রি নিয়েছেন। যদিও তা নিয়ে ক্যারিয়ার শুরুর বদলে ১৯৯৯ সালে তামিল ছবিতে অভিষেক করেন ‘যুবা’র এই অভিনেতা। তার পর থেকে রুপালি পর্দাকেই আঁকড়ে ধরেছেন সোনু।

এসএইচ-১৫/১৩/২২ (বিনোদন ডেস্ক)