তারকাদের বিখ্যাত সন্তান যারা

তারকা! স্টার বা নক্ষত্র। এই তকমা যাকে-তাকে অবশ্যই দেয়া যায় না। বিনোদন জগতের তারকাদের দিয়ে নয়, কথা বলব তারকাদের বিখ্যাত সন্তানদের নিয়ে। নিজ যোগ্যতায় যারা পেয়েছেন তারকাখ্যাতি।

বটবৃক্ষের ছায়াতলে আরেকটি বটবৃক্ষ বেড়ে উঠতে পারে না। এমন প্রচলিত ধারণা থাকলেও তা মিথ্যা প্রমাণ করেছেন এই তারকারা। প্রতিভার দ্যুতি ছড়িয়ে বাবা-মায়ের নাম আরও উজ্জ্বল করেছেন যারা, তাদের আরেকবার স্মরণ করা যাক !

১. আবুল হায়াত-বিপাশা হায়াত

যার ক্যারিয়ারে এতটুকু নেতিবাচক ছাপ নেই। পুরোটাই দর্শকের মুগ্ধতা। তার নাম আবুল হায়াত। এই কিংবদন্তির পরিবারেই আছে আরেক বিখ্যাত তারকা। তার মেয়ে বিপাশা হায়াত। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জন্ম নেয় আবুল হায়াতের প্রথম সন্তান বিপাশা হায়াত। এ জন্যই কি মুক্তিযুদ্ধের সিনেমায় বিপাশাকে এত অনবদ্য দেখেছি আমরা? মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা ‘আগুনের পরশমণী’তে বাবা-মেয়েকে একসঙ্গে দেখেছিল দর্শক। বাবা-মেয়ের অসাধারণ অভিনয়ে দর্শক বুঝেই গিয়েছিলেন পরিচয় নয় প্রতিভাই এখানে মুখ্য। সেই সিনেমায় অসাধারণ অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন তিনি। এ ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের আরেকটি সিনেমা ‘জয়জাত্রা’য় এক সন্তান হারানো মায়ের চরিত্রে অভিনয় করে বিপাশা প্রমাণ করেছিলেন অভিনয় তার শিরায় বহমান। নব্বইয়ের দশকে জনপ্রিয় টিভি অভিনেত্রীদের মধ্যেও তিনি সেরাদের তালিকায়। মঞ্চনাটকেও তিনি সমানভাবে সফল ছিলেন, কিন্তু বিয়ের পর মঞ্চনাটকে অভিনয় ছেড়ে দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারুকলায় গ্র্যাজুয়েশন করা বিপাশা একজন পেইন্টারও। ২০০৯ সালে তিনি তার আঁকা ছবি অ্যাসিড আক্রান্ত নারীদের সাহায্যার্থে আয়োজিত প্রদর্শনীতে দান করেছিলেন। বেছে বেছে কাজ করেন বলে বাবার মতোই হাজার তারার ভিড়ে উজ্জ্বল এক নক্ষত্র হয়ে জ্বলজ্বল করছেন এ অভিনেত্রী।

২. গোলাম মুস্তাফা-সুবর্ণা মুস্তাফা

জনপ্রিয় অভিনেতা ও বিশিষ্ট আবৃত্তিকার গোলাম মুস্তাফা। এই তারকার যোগ্য সন্তান সুবর্ণা মুস্তাফা। অভিনেত্রী, প্রযোজক ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য একাধিক বিশেষণ তার। দর্শকপ্রিয় অভিনেত্রীদের তালিকায় তিনি সেরাদের সেরা। বিখ্যাত নাটক ‘কোথাও কেউ নেই’-তে ‘মুনা’ চরিত্রে তার সহজ-সরল অভিনয় এক অকৃত্রিম ভালোলাগার জন্ম দিয়েছিল দর্শক হৃদয়ে। আশির দশকে এই দর্শকপ্রিয় টিভি অভিনেত্রীকে আফজাল হোসেন এবং হুমায়ুন ফরীদির সঙ্গে সবচেয়ে বেশিবার জুটি বাঁধতে দেখা গেছে। শুধু নাটক নয়, সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। ‘পালাবি কোথায়’, ‘নতুন বউ’, ‘নয়নের আলো’ সিনেমা দিয়েও প্রশংসা কুড়িয়েছেন এই অভিনেত্রী। অভিনয়ের নিজস্বতা থাকায় সুবর্ণা এখনো দর্শক হৃদয়ে স্বতন্ত্র জায়গা করে আছেন।

৩. রাজ্জাক-বাপ্পারাজ

ষাটের দশক থেকে শুরু করে আশির দশকের জনপ্রিয় নায়ক নায়করাজ রাজ্জাক। তার পরিচালনাতেই প্রথম দর্শকের সামনে আসেন তার ছেলে বাপ্পারাজ। ১৯৮৪ সালে ‘চাঁপাডাঙার বউ’ সিনেমা দিয়েই ছিপছিপে গড়নের মাত্র ১৬ বছরের বাপ্পারাজ কেড়ে নিয়েছিলেন দর্শকহৃদয়। সেই সিনেমায় প্রথম দিনের শুটিংয়ে বাপ্পা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি নায়করাজের ছেলে। সবাইকে অবাক করে মাত্র একবারের টেক–এই একটি আবেগঘন দৃশ্যে তার অভিনয় ওকে হয়েছিল। তারপর অভিনয় দিয়ে কতশতবার কাঁদিয়েছেন এই নায়ক। তার অভিনীত কয়েকটি সিনেমা কলকাতা রিমেক হলেও তার মতো অভিনয় পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে পারেননি অন্যরা। বাবার পরিচালিত সিনেমায় তাকে অনেকবার দেখেছে দর্শক। প্রফেসর, প্রেমশক্তি, বাবা কেন চাকর, সন্তান যখন শত্রু, বাবা কেন আসামী, মরণ নিয়ে খেলা সিনেমাগুলোতে বাবা-ছেলেকে একসঙ্গে দেখা গেছে। বাপ্পারাজকে বাংলা সিনেমার ’ট্র্যাজিক হিরো’ বলা হয়। ১০০টিরও বেশি সিনেমা উপহার দিয়েছেন এ নায়ক, যার বেশির ভাগই ব্যবসাসফল। এদের মধ্যে ‘চাঁপাডাঙার বউ’, ‘প্রেমশক্তি’, ‘বিদ্রোহী প্রেমিক’, ‘ঢাকা ৮৬’, ‘জ্বিনের বাদশা’, ‘প্রেমগীত’, ‘জজ ব্যারিস্টার’, ‘প্রেমের সমাধি, ‘বাবা কেন চাকর’ অন্যতম। অভিনয় জগতে ব্যর্থ প্রেমিকের চরিত্রেই সফল হয়েছেন নায়করাজ রাজ্জাকের সুযোগ্য সন্তান বাপ্পারাজ।

৪. আলমগীর-আঁখি আলমগীর

আশি ও নব্বই দশকের অন্যতম সেরা নায়ক আলমগীর। ক্যারিয়ারে অনেক অর্জনের ভিড়ে তিনি একজন সার্থক বাবাও। তার মেয়ে আঁখি আলমগীর একজন কণ্ঠশিল্পী, অভিনেত্রী ও উপস্থাপিকা। ১৯৮৪ সালে ‘ভাত দে’ চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন এই তারকা সন্তান। এরপর তাকে কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করতে দেখা যায়। তার মধ্যে বিদ্রোহী বধূ ,শুধু তুমি, সত্যের মৃত্যু নেই, মরণ কামড় উল্লেখযোগ্য। বাবার মতো তিনিও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। ১৯৯৬ সালে আঁখি আলাউদ্দিন আলীর সুরে সত্যের মৃত্যু নেই চলচ্চিত্রের একটি গানে কণ্ঠ দেন। এ ছাড়াও ভাত দে চলচ্চিত্রেও গান গেয়েছিলেন ছোট্ট আঁখি। এখন নিয়মিত গান গেয়ে যাচ্ছেন এই শিল্পী। সিনেমা জগতে তার আনাগোনা নেই বললেই চলে।

৫.কাজী হায়াৎ-কাজী মারুফ
খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার এবং অভিনেতা কাজী হায়াৎ। তার পরিচালনায় একাধিক ব্যবসাসফল সিনেমা দেখেছি আমরা। এই পরিচালকের সন্তান কাজী মারুফ। খুব অল্প সময়েই চলচ্চিত্রে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এই অভিনেতা। বাবার পরিচালিত সিনেমায় অভিষেক করেই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে নেন তিনি। সিনেমার নাম ‘ইতিহাস’। সিনেমাটিতে তার দুর্দান্ত অভিনয় দর্শকের প্রশংসা কুড়িয়েছিল। সিনেমার কয়েকটি দৃশ্যে কিছু গালাগালের দৃশ্য নিয়ে আজও ট্রল হতে দেখা যায়। বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের পাশাপাশি বিকল্প ধারার চলচ্চিত্রেও দেখা গেছে তাকে। ‘দেহরক্ষী’ সিনেমায় নামভূমিকায় অভিনয় করে প্রশংসা পান মারুফ। তবে ‘ইভটিজিং’ সিনেমায় তার কাশেম চরিত্রটি বেশি দর্শকপ্রিয়তা পায়। তাকে বরাবরই বাস্তবধর্মী চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গেছে। যেকোনো চরিত্রে অসাধারণভাবেই প্রবেশ করেন অভিনেতা।

৬.আলী যাকের-ইরেশ যাকের
বাবা আলী যাকের ও মা সারা যাকের। বলাই যায়, অভিনয়ের আবহেই তার বেড়ে ওঠা। বলছি জনপ্রিয় অভিনেতা ইরেশ জাকেরের কথা। শৈশব বাংলাদেশে কাটলেও পরে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে চলে যান।পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে অভিনয় জগতে পা রাখেন ইরেশ। নাটক ‘মিডনাইট সান’, টেলিফিল্ম ‘আমাদের গল্প’, ‘ইম্পসিবল’, ‘অল টাইম, ‘দৌড়ের ওপর’ তার উল্লেখযোগ্য কাজ। ইরেশ জাকের ছোট পর্দায় বেশির ভাগ কাজ করলেও বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে খলনায়কের চরিত্রেও অনবদ্য অভিনয় করেন। ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ খলচরিত্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন তিনি। বর্তমানে ওয়েব ফিল্মেও অভিনয় করতে দেখা যাচ্ছে তাকে।

এসএইচ-০৪/১৭/২২ (বিনোদন ডেস্ক)