জেমস গানের নেশায় ঘর ছেড়েছিলেন

কারও কাছে তিনি নগর বাউল, কারও কাছে জেমস, কারও কাছে আবার গুরু। কখনও গেয়েছেন ব্যথিত হৃদয়ে, কখনও বা প্রেমিকের ভালোবাসার সুরে, কখনও বাবা হারানোর যন্ত্রণায়, কিংবা মায়ের স্মৃতিচারণে অথবা কখনও এক বুক দেশপ্রেম নিয়ে। গান-পাগল জেমস শুধু দেশ কাঁপাননি, উপমহাদেশকে জানিয়েছেন তিনি একজনই যিনি নগরবাউল হয়ে হৃদয় কেড়েছেন লাখো শ্রোতার।

তার পুরো নাম ফারুক মাহফুজ আনাম জেমস। ভক্তদের কাছে তিনি নগর বাউল। বাংলা ব্যান্ড সংগীতের অন্যতম এই তারকার জন্ম ১৯৬৪ সালের ২ অক্টোবর নওগাঁ জেলায়। তবে তার বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। তার বাবা ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা।

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু ছেলের ইচ্ছা তিনি গায়ক হবেন। বাবা চাইতেন সে লেখাপড়ায় মনোযোগী হোক। জেমস নারাজ। পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়েই শুরু করলেন সংগীতচর্চা। বাবার সঙ্গে গান নিয়ে অভিমান করে বাড়ি ছেড়ে চলে আসে সেই কিশোর। সংগীতের নেশায় ঘর ছেড়ে এক অনিশ্চিত জগতে পাড়ি দেন।

চট্টগ্রামের আজিজ বোর্ডিংয়ে থাকতে শুরু করলেন। সেখানে থেকেই তার সংগীতের ক্যারিয়ার শুরু়। গান পাগল জেমস বন্ধুদের নিয়ে ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ফিলিংস’ নামে একটি ব্যান্ড। প্রথম অ্যালবাম ‘স্টেশন রোড’ দর্শকের কাছে পৌঁছাতে না পারলেও ১৯৮৮ সালে ‘অনন্যা’ নামের অ্যালবাম দিয়ে সুপারহিট হয়ে যায় ঝাঁকড়া চুলের সেই স্বপ্নচারী ছেলেটা। পরবর্তীতে ফিলিংস ব্যান্ডের নাম পরিবর্তন করে নাম দিয়েছিলেন নগর বাউল।

শুরু থেকেই গিটার বাজানোয় দারুণ পটু ছিলেন জেমস। আর তার কণ্ঠের মোহ সে তো অদ্বিতীয়। শুধু গানই গাননি, লিখেছেন সুর করেছেন এই মহান শিল্পী। অনেক গীতিকার তার জন্য সংগীত রচনা করেছেন। কবি শামসুর রাহমান, প্রিন্স মাহমুদ, সিবলির লেখা গানে তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন।

নব্বইয়ের দশকে পুরোটা সময় নগর কিংবা পাড়া মহল্লার যুবকদের কণ্ঠে শোনা যেত জেমসের বিখ্যাত সব গান। সুপারহিট সেই গানগুলো আজও মুগ্ধতা ছড়ায় চারপাশে। জেমসের জনপ্রিয়তা শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও ব্যাপক জনপ্রিয় নগর-বাউল ব্যান্ডের এ তারকা। তিনি বলিউডেও গান গেয়েছেন। ‘ভিগি ভিগি’, ‘চল চলে’ ,‘আলবিদা’, ‘রিস্তে’ তার বিখ্যাত কিছু হিন্দি গান।

বাংলা চলচ্চিত্রের গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন জেমস। ‘দেশ: দ্য লিডার’, ‘সত্তা’ সিনেমার জন্য গান করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। গান দিয়ে নগর বাউল ভক্তদের অনেক কাছের কিন্তু স্টেজ ছাড়তেই তিনি খুব দূরের কেউ। ব্যক্তি জেমস ভক্তদের কাছে এখনও অনেকটাই অজানা।

ছোটবেলার দূরন্ত জেমস বড় হয়ে নিজেকে আড়ালে রাখতেই ভালোবাসেন। সেই কৈশোরে ঘড় ছাড়া জেমস কি তারকা হয়ে ঘরে ফিরেছিলেন কিনা তা জানা যায়নি। কিন্তু জানা গেছে নগর বাউলের সফলতা দেখে যেতে পারেননি তার বাবা-মা। দুজনই চলে গেছেন পৃথিবী ছেড়ে। তাই হয়তো গানের মধ্য দিয়ে বাবা-মাকে খুঁজে গেছেন ব্যথিত হৃদয়ে।

গানের জীবনের বাইরে ব্যক্তিজীবন প্রকাশ্যে আসুক তা কখনও চাননি নগর বাউল। ভক্তদের হৃদয়ে নগর বাউল অমর হয়ে থাকুক গান দিয়ে, নাইবা জানা গেল তার ব্যক্তিজীবন।

এসএইচ-০৬/০২/২২ (বিনোদন ডেস্ক)