শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলন একটা পর্যায়ে রূপ নেয় সরকার পতনের দাবিতে। ছাত্র-জনতার তোপের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। সংবাদটি প্রকাশ্যে আসার পরই দেশের জনগণ মেতে উঠেন আনন্দ-উল্লাসে। ওদিনই (গেল ৫ আগস্ট) দেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও হত্যার ঘটনাও ঘটে। সে ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি ধানমন্ডি ৩২-এ অবস্থিত জলের গান ব্যান্ডের গায়ক রাহুল আনন্দের বাড়িতে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ। এই ঘটনায় গায়কের তিন হাজারের মতো বাদ্যসহ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল, পরিকল্পিতভাবে বাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে কথাও বলেন রাহুল আনন্দ। জানান, স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে এক কাপড়ে, কোনোমত বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসেন তিনি। রাহুল আনন্দের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষজনসহ অনেকেই।
তবে এখন শোনা যাচ্ছে, ভিন্ন কথা। রাহুল আনন্দের বাসায় উদ্দেশ্য করে কেউ আগুন দেয়নি। ধানমন্ডি ৩২–এ অবস্থিত বঙ্গবন্ধু মিউজিয়ামকে লক্ষ্য করে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। আর সেই আগুন ছড়িয়ে পরে রাহুলের বাসায়। বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে জলের গান ব্যান্ডের ফেসবুক পেজ থেকেও।
এ বিষয়ে রাহুল আনন্দের পারিবারিক বন্ধু ফারহানা হামিদ এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘রাহুল আনন্দের বাসা উদ্দেশ্য করে আগুন দেওয়া, লুটপাট বা ভাংচুর করা হয়নি। আগুন দেওয়া হয়েছে ৩২-এর “বর্তমান বঙ্গবন্ধু মিউজিয়াম ও তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ” সেটুকুতে। রাহুলদা একটা একতলা বাসায় ভাড়া থাকতেন। এক পাশে তাদের সংসার, অন্য পাশে জলের গানের স্টুডিও (অনেকের ভিডিওতে এই বাসাটা নিয়ে ভুলভাল কথা বলতে দেখেছি আমি)। সেই বাড়িটা ব্যক্তিমালিকানায় ছিল। ৩২-এর সেখানে আরো অনেক এমন বাসা আছে। রাহুল দা ও তার পরিবারের দুর্ভাগ্য এই মায়াময় বাসাটা নতুন মিউজিয়ামের দেয়াল ঘেঁষে এবং সান্তুরের পিছনে ছিল, তাই তার বাসাতেও আগুন দেওয়া হয়।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘রাহুল দাকে উদ্দেশ্য করে আগুন দিলে তারা এই পরিবারকে এভাবে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ দিত না। আর সুযোগ না দিলে, সেই বাসা থেকে বের হওয়া অসম্ভব। রাহুল দার বাসায় আগুনের সঙ্গে রাহুল দার ধর্ম, বর্ণ, জাত, সংস্কৃতি’র কোনো সম্পর্ক নেই। তাই এমন গুজব না ছড়ানোর অনুরোধ করছি। দেশের এই পরিস্থিতিতে যেকোনো গুজব ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। আমরা সচেতন হই। একটা সংসার, একটা দলের বহুদিনের সাধনা, একজন বাচ্চার শৈশবের সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। আর কারো কোনো কিছু পুড়ে না যাক। ভালোবাসা নেমে আসুক মানুষের মনে, আপনারা তাদের পাশে থাকলে আবার জলের গানের সঙ্গে গলা মিলিয়ে গান গাইব- “এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি/ সকল দেশের রানী সে যে, আমার জন্মভূমি।”’
সবশেষে তিনি অনুরোধ জানিয়ে লিখেছেন, ‘জলের গানের প্রতিটা বাদ্যযন্ত্র দীর্ঘ সময় নিয়ে হাতে বানানো এবং প্রায় সকলের চেনা। কোথাও কেউ, কোনো কারণে খুঁজে পেলে তা ফেরত দেওয়ার অনুরোধ করছি।’
এসএ-০৭/১৩/২৪(বিনোদন ডেস্ক)