পুরনো দুর্গের মাটির নীচে ড্রাকুলার রহস্য

পুরনো দুর্গের মাটির

সংবাদ শিরোনামে আবার ড্রাকুলা। না, ব্রাম স্টোকারের উপন্যাসের চরিত্র নন, ইনি একেবারেই রক্তমাংসের ড্রাকুলা।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ‘লাইভসায়েন্স’-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, রোমানিয়ার মধ্যযুগীয় দুর্গ কর্ভিন কাসলকে ঘিরে সম্প্রতি ঘনীভূত হয়েছে রহস্য। ১৪৪৬ সালে নির্মিত এই দুর্গ ট্রান্সিলভানিয়া অঞ্চলের এক বিস্ময়। এটিকে বেশ কয়েক বার সংস্কার করা হলেও এর আকর্ষণ অপরিবর্তিত রয়েছে আজও।

কর্ভিন কাসল হিউনেডোরা কাসল বা হুনিয়াডি কাসল নামেও পরিচিত। ইউরোপীয় দুর্গগুলির মধ্যে এটি অন্যতম বৃহৎ। কিন্তু বহু বার সংস্কার হওয়ার ফলে এই দুর্গের ভিত্তিপ্রস্তরটি ঠিক কোথায়, তা ইতিহাস বা প্রত্নতত্ত্বের গবেষকরা খুঁজে পাননি। এই রহস্যের পাশাপাশি রয়েছে আরও এক বিষয়, এই দুর্গেই নাকি বন্দি ছিলেন কাউন্ট ড্রাকুলা। ইতিহাসের ড্রাকুলা। যাঁর আসল নাম ভ্লাদ দ্য ইম্পলার।

জানা যায়, ১৯ শতকের ব্রিটিশ সাহিত্যিক ব্রাম স্টোকার তাঁর কালজয়ী উপন্যাস ‘ড্রাকুলা’-য় মূল চরিত্রটিকে ভ্লাদ দ্য ইম্পলারকে মাথায় রেখেই ছকেছিলেন। তাঁর পারিবারিক নাম ভ্লাদ ড্রাকুল। ওয়ালাশিয়ার প্রিনেস ভ্লাদ কুখ্যাত ছিলেন অত্যাচারী হিসেবে। ‘রক্তপিপাসু’ হিসেবে তাঁর কুখ্যাতি এত দূর পৌঁছয় যে, সেই সময়েই মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করে ভ্লাদ একজন ভ্যাম্পায়ার। মানুষের রক্তই তাঁর প্রিয় খাদ্য। এই মানুষটিকে আধার করেই স্টোকার যখন তাঁর হরর কাহিনিটি পেশ করেন, তখন তা কিংবদন্তির পর্যায়ে চলে যায়। তার পরে ভ্লাদ চলে যান স্মৃতির অন্তরালে। জেগে থাকেন কাউন্ট ড্রাকুলা।

এ কথা জানা যায় যে, ভ্লাদ দ্য ইম্পলারকে কর্ভিন কাসলেরই মাটির নীচের কোনও ঘরে এক সময়ে বন্দি করে রেখেছিলেন দুর্গাধিপতি জন হুনিয়াডি। জন সেই সময়ে হাঙ্গেরির নাবালক রাজার অভিভাবক। পরে ভ্লাদ জনের সঙ্গে কোনও সমঝোতায় আসেন এবং জন তাঁকে মুক্রি দেন। কিন্তু এই দুর্গে ভ্লাদের উপস্থিতিকে ঘিরে পল্লবিত হতে থাকে কিংবদন্তি। অনেকেই পরে বিশ্বাস করতে শুরু করেন, আজও এই দুর্গে ঘুরে বেড়ায় ভ্লাদের রক্তপিপাসু আত্মা। এই ভৌতিক ‘বদনাম’ এতটাই পাকাপোক্ত হয়ে দাঁড়ায় যে, ২০১৮-এ হলিউড হরর ছবি ‘দ্য নান’-এ এই দুর্গকে ব্যবহারও করা হয়।

সম্প্রতি এই দুর্গের নির্মাণগত রহস্য উন্মোচন করার উদ্দেশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ও এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একটি গবেষক দল উদ্যোগী হয়। তাঁরা বিস্তর অনুসন্ধান করে দেখতে পেয়েছেন, এই দুর্গের যে ক’টি নকশা রয়েছে, তার সঙ্গে দুর্গের গঠনের বিস্তর গরমিল। দুর্গটি নকশাগুলির বর্ণনার চাইতে অনেক বড়। নকশার বাইরে দুর্গের যে অংশগুলি রয়েছে, সেগুলি কী এবং কেন নির্মিত হয়েছিল, তা বোঝা যাচ্ছে না। তার উপরে যুগে যুগে এই দুর্গের যে সব সংস্কার হয়েছিল, সে সবের বিস্তারিত নথিপত্রও নিখোঁজ।

গবেষক দলের প্রধান ইসাবেল মরিস জানিয়েছেন, তাঁরা এই দুর্গের মাটির নীচে কোনও গুপ্ত কক্ষ রয়েছে কি না জানার জন্য গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং র‌্যাডারের সাহায্য নিয়েছেন। এতে মরিস ও তাঁর দল একটি নির্যাতন কক্ষের সন্ধান পেয়েছেন, যেখানে রীতিমতো ভীতিপ্রদ অত্যাচারের বন্দোবস্ত ছিল বলেই মনে হয়। মরিস প্রশ্ন তুলছেন, এই কক্ষেই কি বন্দি ছিলেন ভ্লাদ দ্য ইম্পলার ওরফে কাউন্ট ড্রাকুলা? যদি এই তথ্য সত্য বলে প্রমাণিত হয়, তা হলে এই দুর্গের পর্যটন-গুরুত্ব তুঙ্গে পৌঁছবে বলে বিশ্বাস রোমানিয়ার সরকারি প্রতিনিধিদের।

ড্রাকুলার আত্মা আজও জেগে থাকুক বা না-থাকুক, কাহিনি ও কিংবদন্তি যে অনেক কিছুকেই ‘বাস্তব’ করে তোলে, তার সাক্ষী এই কর্ভিন কাসল।

আরএম-০৬/১৭/১২ (অনলাইন ডেস্ক)