কেন সারাদিন শিকলে বাঁধা নাসিমা–কাদির?

নাসিমা খাতুন আর আবদুল কাদির দু’‌জনে কেউ কাউকে চেনেন না, কিন্তু তাঁদের মিল প্রচুর। তাঁরা দু’‌জনেই বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে ভালবাসেন। বাড়িতেই থাকতে চান না তঁারা। মানসিক ভারসাম্যহীন এই দু’‌জনকেই তাই পরিবারের সদস্যরা পায়ে শিকল পরিয়ে বেঁধে রাখতে বাধ্য হন।

ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার সামশেরগঞ্জ ব্লক জেলার পিছিয়ে পড়া একটি ব্লক। তার মধ্যে চাচণ্ড পঞ্চায়েতের চাচণ্ড গ্রামের বাসিন্দা বছর কুড়ির নাসিমা। গত পনেরো বছর থেকে বাড়ির খুঁটিতে বাঁধা অবস্থায় রয়েছেন নাসিমা। ছেড়ে দিলে কোথায় হারিয়ে যান। তাই বাড়ির লোকেরা কোনও ঝুঁকি না নিয়ে তঁাকে বেঁধে রাখতে বাধ্য হয়েছেন। জন্ম থেকেই তিনি এমন ছিলেন না। পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত সবই ঠিকঠাক চলছিল। তারপর থেকেই অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকেন নাসিমা।

প্রথমে ডাক্তার দেখানো হয়েছিল। কিন্তু অভাবের সংসারে টানা চিকিৎসা করিয়ে যাওয়া আর সম্ভব হয়নি। বাবা আব্দুল শেখ বিড়ি শ্রমিক, নয় ছেলে–মেয়ের মধ্যে নাসিমা ছ নম্বর। নুন আনতে পান্তা ফুরনোর সংসার। আব্দুল শেখ বলেন, ‘‌যদি কোনও সহৃদয় ব্যক্তি চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়ে আমার মেয়েকে সুস্থ করে তোলেন, তা হলে কৃতজ্ঞ থাকব।’‌ সময়ই বলবে, ভবিষ্যতে তেমন কোনও সহৃদয় ব্যক্তি নাসিমার চিকিৎসার দায়িত্ব নেবেন কিনা!

অন্য দিকে, একই পঞ্চায়েতের নতুন লহুরপুর গ্রামের শরিফুলের নয় ছেলেমেয়ে, আবদুল কাদির পঞ্চম। পেটের টানে কিছু রোজগারের আশায় শরিফুল শ্রমিকের কাজ করতে বাইরে থাকেন। স্ত্রী মাসেদা বিবি বিড়ি বেঁধে কোনও মতে সংসার চালান। দু’‌বেলা দু’‌মুঠো ভাতের ব্যবস্থা করতে সারাদিন পরিশ্রম করতে হয় বাড়ির সদস্যদের। তাদের সময় নেই মানসিক ভারসাম্যহীন বছর পনেরোর কাদিরকে সব সময় চোখে চোখে রাখার। অগত্যা তার পায়ে শিকল পরিয়ে বাড়িতে আটকে রাখতে বাধ্য হয়েছেন পরিবারের লোকেরা। কাদের কিন্তু জন্ম থেকেই ভারসাম্যহীন। আগে সে গ্রামের মধ্যে দিব্যি ঘুরে বেড়াত। গ্রামবাসীরাও তাকে ভাল করেই চেনেন ও জানেন।

বাড়ির পাশ দিয়ে চলে গেছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। বছর খানেক আগে বাড়ি থেকে পালিয়ে বাসে চেপে বসে সে। সোজা পৌঁছে যায় বহরমপুর শহরে। পরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর তার সন্ধান মেলে। এখন ভয়ে থাকেন মাসেদা। ছেলেকে হারানোর ভয়ই তাকে শিকল পরাতে বাধ্য করেছে। শিকল পরে থেকে কাদিরের পায়ে কালসিটে পড়ে গেছে।

সেদিকে তাকিয়ে দেখলে চোখে জল ধরে রাখতে পারেন না মাসেদা। কিন্তু ছেলেকে হারানোর ভয়ে নিষ্ঠুর কান্না চেপে বিড়ি বেঁধে চলেন তিনি। শিকলে বেঁধে রাখার ঘটনা নিঃসন্দেহে অমানবিক। কিন্তু এ ছাড়া ভিন্ন আর কোনও পথই খোলা নেই নাসিমা খাতুন ও আবদুল কািদরের পরিবারের কাছে।

এসএইচ-১৪/২১/১৯ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্য সূত্র : আজকাল)