পাশের ছিটে অপরিচিত মেয়ে, সাবধান!

পাশের ছিটে অপরিচিত

সোহাগ তালুকদার। গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর। সোহাগের বিবিএ পরীক্ষা শেষ হয়েছে ২০১৫ সালে। সোহাগের বড় ভাই কোন এক কোম্পানিতে চাকরি করে। ছোট ভাই করছেন পড়াশোনা। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে।

হঠাৎই সোহাগের বাবা মারা যান। এরপর পরিবারের হাল ধরতে হয় সোহাগকে। তাই সোহাগ জীবিকার সন্ধানে পাড়ি জমান ঢাকায়।

পরিচিত এক লোকের মাধ্যমে একটা চাকরিও পান। সাতজনের একটা টিমে জয়েন করে সোহাগ। বেতনের টাকায় ভালোই চলছিল। নিজের খরচের পর বাকি টাকা বাড়ি পাঠেয়ে দিতো সোহাগ।

এরপর একদিন অফিসের বাইরে ভিজিট শেষে বাসায় ফেরার জন্য টিকিট কেটে বাসে ওঠে সোহাগ। প্রতিদিনের চেয়ে আজ বাসে যাত্রী কম ছিল। সোহাগ গিয়ে একটা ছিটে বসল। এরপর কিছুক্ষণ বাদেই একটা মেয়ে ওঠে বাসে। অনেক ছিট খালি থাকার পরেও মেয়েটা গিয়ে সোহাগের পাশের ছিটে বসে।

একপর্যায়ে বাস চলা শুরু করলে সোহাগের পাশের ছিটের মেয়েটা সোহাগকে বলল তিনি তার পারসোনাল কিছু বিষয় শেয়ার করতে চায় সোহাগের সাথে কিন্তু সোহাগ জানান তিনি তার কথা শুনতে চান না। এরপর মেয়েটিও চুপ হয়ে থাকে। পাঁচ মিনিট পরে মেয়েটা কান্না শুরু করে। এতে বেশ হতবাক হয়ে যায় সোহাগ।তিনি মেয়েটির কাছে জানতে চান, কেন কাঁদছেন?

এরপর মেয়েটি জানায়, তার বাবা-মা সারাদিন ঝগড়া করে। কেউ তাকে সময় দেন না। তিনি খুবই কষ্টে আছে। এরপর সোহাগ মেয়েটির সম্পর্কে জানতে চাইলে মেয়েটি জানান, তিনি তিতুমীর কলেজে অনার্স সেকেন্ডে ইয়ারে পড়েন। আর পাশাপাশি তিনি টিউশন করান।

এরপর মেয়েটি জানান তার রিলেশনের পর তিনবছরের মাথায় ব্রেকআপ হয়ে গেছে। মেয়েটি জানতে চায় সোহাগ কোথায় থাকে। সোহাগও সরল মনে জানান, তিনি থাকেন বাড্ডায়। এরপর মেয়েটি জানায় তিনি থাকেন নতুনবাজার। সোহাগ মেয়েটির নাম জানতে চাইলে তিনি জানান তার নাম লাবনী।

এরপর বাস আরও কিছুটা অগ্রসর হওয়ার পর লাবনী জানতে চান হাতিরঝিল কোথায়। সোহাগ রাস্তা বলে দিলে কান্না শুরু করেন লাবনী। বলেন, তার মতো একটা মেয়ে কিভাবে একা হাতিরঝিল যাবে। তিনি সোহাগকে অনুরোধ করেন সোহাগও যেন তার সাথে হাতিরঝিল পর্যন্ত যায়। লাবনী বলেন, তার মনের যে অবস্থা তাতে হাতিরঝিল গেলে তার কিছুটা ভালো লাগবে।

এরপর নানান দিক চিন্তা করে লাবনীর সাথে হারিরঝিলে যায় সোহাগ। কিছুক্ষণ পর সোহাগ ফোন দেন তার হাতিরঝিলে পাশে থাকা বড় ভাইকে। সেই বড় ভাই আসার পর লাবনী আর সোহাগের সেই বড় ভাইসহ তারা এক রেস্টুরেন্টে খেতে বসে। এরই এক পর্যায়ে সোহাগকে এক বোতল কোক কিনে আনতে বলে লাবনী। তারপর সোহাগ কোক কিনে আনলে তার অর্ধেকটা লাবনী খেয়ে বাকি অর্ধেকটা দিয়ে দেয় সোহাগকে। পরে সোহাগ সেই কোক খাওয়ার পর জানায়, তার প্রচন্ড ঘুম আসতেছে। এরপর সোহাগের বড়ভাই সোহাগের অবস্থা দেখে তাকে বাসায় নিয়ে যেতে চাইলে লাবনী বাধ সাথে।

সে বলে, আমি সোহাগকে ভালোবাসি, আমি ওকে নিয়ে যাব আপনি কে? সোহাগের পক্ষে তখন কোন কথা বলা সম্ভব ছিল না। শেষ পর্যন্ত সোহাগকে নিয়ে সোহাগের বড় ভাই ও লাবনী বাসে ওঠে বাসায় ফেরার জন্য। পথিমধ্যে লাবনী সোহাগের বড় ভাইকে গালিগালাজ করে এবং আশ-পাশের মানুষকে জানায় সোহাগের বড়ভাই তার গায়ে হাত দিয়েছে এবং অনেকক্ষণ ধরে তিনি ওদের সাথে সাথে ঘুরছেন। একপর্যায়ে বাসের লোক মারধরের পর সোহাগের বড় ভাইকে বাস থেকে নামিয়ে দেয়। এরপর বাস চলতে শুরু করলে কিছুকণ পর যখন বাসের সব যাত্রী নেমে যায় তখন বাসের হেল্পার সোহাগকে ডেকে তোলেন এবং জানতে চান তিনি কোথায় যাবে।

পরে সোহাগ দেখতে পান তার পাশে কেউ নেই। পুরো বাস ফাঁকা। সোহাগ আরও দেখতে পান তার মানিব্যাগ, মোবাইল কিছুই নেই। তখন পুরো বিষয়টা বুঝতে পারে সোহাগ!

আরএম-২১/০২/০২ (অনলাইন ডেস্ক)