চোখে সংসার গড়ার স্বপ্ন, হাতে হাত রেখে ঘর ছাড়লেন সমকামী দুই বান্ধবী

চোখে সংসার গড়ার

এতদিনের যাবতীয় সংগ্রামের পর আইনিভাবে স্বীকৃত হয়েছে সমকাম। তা সত্ত্বেও সমকাম নিয়ে সমাজের নানা ছুঁতমার্গ রয়েছে এখনও। এসবকে হেলায় উড়িয়ে আসানসোলের জামুড়িয়ার দুই বান্ধবী একে অন্যের হাত ধরে ঘর ছাড়লেন। দুজনের নিভৃত সংসার বাঁধার লক্ষ্যে পাড়ি দিলেন অন্য কোথাও, অন্য কোনওখানে।

মনীষা আর বান্টি। তেইশ বছরের দুই যুবতীর দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব। সম্প্রতি মনীষার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে নিজেই হাজির হয়েছিলেন বান্টি। সবাইকে অবাক করে বান্টি জানিয়ে দেয়, মনীষাকেই তিনি বিয়ে করতে চান।

টিভি, রেডিওতে সমকামী সম্পর্কের কথা শুনলেও, নিজেরা যে এভাবে প্রত্যক্ষ করবেন, তা ভাবতেই পারেননি জামুড়িয়ার বেড়ালা গ্রামের বাসিন্দারা। ফলে আইনি স্বীকৃতি থাকলেও পরিবারের সদস্যরা কিছুতেই মেনে নিতে পারলেন না মনীষা-বান্টির এই সম্পর্ক। সহমত নেই গ্রামবাসীদেরও।

তাই নিজেদের স্বপ্ন পূরণে হাতে হাত রেখে ঘর ছেড়ে, গ্রাম ছেড়ে অজানার উদ্দেশে পাড়ি দিলেন দুই সখী, এক যুগল। চার বছর প্রেমের পর এখন ঘর বাঁধার স্বপ্নে বিভোর দুই সমকামী যুবতী। শনিবার এই ঘটনার সাক্ষী রইল জামুড়িয়া থানার বেড়ালা গ্রাম।

বেড়ালার মেয়ে মনীষা কেওড়া এবং সিঙ্গুর থানার বারুইপাড়ার বাসিন্দা বাণ্টি ভদ্র দুজনে অন্তরঙ্গ সঙ্গী। গত চার বছর ধরে একে অপরের সঙ্গে প্রণয়ের সম্পর্কে আবদ্ধ। কলেজে পড়ার সময় এনসিসি ক্যাম্প থেকে একে অপরের সঙ্গে পরিচয়। এরপর থেকে ভাললাগা ও ভালবাসার পর্ব শুরু।

জামুড়িয়ায় মনীষার বাড়িতে প্রায়ই আসতেন বান্টি। থাকতেন দিনের পর দিন। বাড়ির লোকও মনে করেছিলেন, দুই অন্তরঙ্গ বান্ধবী তাঁরা। কিন্তু এই ভুল ভাঙল শনিবার। ওই দিন বান্টি জামুড়িয়ায় আসে। মনীষার বাবা বিপদতারণ কেওড়াকে সরাসরি বলেন, মনীষাকে তিনি বিয়ে করতে চান।

তাঁরা রেজিস্ট্রি করে অন্যত্র ঘর বাঁধতে চান। এ কথা শুনে আকাশ ভেঙে পড়ে মনীষার বাড়ির সদস্যদের। দিশেহারা হয়ে পড়েন মনীষার বাবা-মা। মেয়েকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় তাঁরা। দুই বান্ধবীকে বোঝাতে আসেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। পুলিশকে ডেকে মধ্যস্থতা করার চেষ্টাও চলে।

কিন্তু নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় বান্টি, মনীষা। জামুড়িয়া থানার পুলিশ এলে বান্টি সোজা সুপ্রিম কোর্টের আদেশনামা দেখিয়ে জানিয়ে দেন, এটা আইনত বৈধ। ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই ভিড় জমে এলাকায়। পিলপিল করে বেড়ালা গ্রামে লোক জমতে শুরু করে।

একদিকে পরিবারের সদস্যরা, অন্যদিকে বান্টি-মনীষা। শেষ পর্যন্ত মনীষার বাবা জানিয়ে দেন, তাঁরা এই সম্পর্ক মানতে পারবেন না। প্রয়োজনে মেয়ে যেন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।

এটুকু শোনার অপেক্ষা শুধু। এরপরেই হাত ধরে হেঁটে গ্রামের বাইরে চলে যান বান্টি-মনীষা। রাস্তায় গিয়ে বাসে উঠে পড়েন। এই দৃশ্য দেখতে গ্রামের মানুষ নেমে আসেন রাস্তায়। অত্যুৎসাহীরা ছবিও তুলে নেন। বান্টি নিজের সম্পর্কে কিছুই জানাতে চাননি এদিন।

যেটুকু জানা গেছে সবটাই মনীষার মাধ্যমে। বান্টি বাড়িতে থাকেন না। মা মারা যাওয়ার পর বাবা বিয়ে করায় তিনি ঘরছাড়া। কলকাতায় এক মেডিক্যাল কলেজে বান্টি নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে কাজ করেন। দুজনে একসঙ্গে কলকাতাতেই ঘর বাঁধবেন বলে জানা গিয়েছে।

আরএম-০৪/১৭/০২ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্যসূত্র: সংবাদপ্রতিদিন)