রোগী ওটি’তে : ডাক্তারদের নীরবতা পালন!

অক্সিজেন মাস্ক নাকে অপারেশন থিয়েটারে শুয়ে আছেন রোগী। পথ দুর্ঘটনায় হাড় ভেঙেছে চোয়ালের। বোন প্লেটিং করা হবে। কিন্তু অস্ত্রোপাচারে হাত লাগানোর আগে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন চিকিৎসক, অ্যানাস্থেটিস্ট, নার্স-সহ সব কর্মী।

বেশির ভাগের হাত সামনে ঝোলানো, জড়ো করা। মাথা নোয়ালেন সকলে। নীরবতা পালন করলেন এক মিনিট। পুলওয়ামায় নিহত জওয়ানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। তার পরে শুরু হল অস্ত্রোপচার।

কেউ বলছেন দেশভক্তি। কেউ বলছেন বাড়াবাড়ি। ‘আদিখ্যেতা’ বলতেও ছাড়ছেন না অনেকে। সব মিলিয়ে ত্রিপুরা মেডিকেল কলেজে শনিবারের এ ঘটনা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন জোর বিতর্ক।

প্রশ্ন উঠেছে, গোটা দেশের মানুষ শোক জানাচ্ছেন নানা ভাবে। কিন্তু সীমান্তে বা স্পর্শকাতর এলাকায় মোতায়েন জওয়ানেরা কি দেশরক্ষার দায়িত্ব ভুলে পলকের জন্যও মাথা নামিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন শোকে? চিকিৎসকের পেশাও তো তেমন! রোগীর মরণ-বাঁচন তাদের হাতে। প্রতিটি মুহূর্তই মূল্যবান। তাদের কি এটা করা সাজে!

কেন নয়? ফোনে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন ওই ওটি-র অন্যতম চিকিৎসক মানিক সাহা। এর পর বললেন, ‘ফুটবল মাঠে যদি ফুটবলাররা নিহত জওয়ানদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা জানাতে পারেন, বিধায়ক-মন্ত্রীরা যদি বিধানসভায় কাজ শুরুর আগে তা করতে পারেন-তবে এক জন সার্জন হয়ে আমি তা করলে অন্যায়ের কী আছে? শ্রদ্ধাটাই আসল।’

তিনি আরও জানান, কিছুক্ষণ আগে তিনিও একটি ফুটবল মাঠে ছিলেন। সেখানে খেলা শুরুর হবার আগে ফুটবল সামনে রেখে সবাই শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন। মানিকবাবু জানতে চান,‘আমরা তো সার্জন, শোক পালন কোথায় করব? রাস্তায় নয় নিশ্চয়ই!’ কিন্তু রোগী যে তখন ওটি-র বেডে?

হাসপাতাল সূত্রের খবর, সফল অস্ত্রোপচারের পরে ওই রোগী এখন ভাল আছেন। আগামীকাল তার ছুটি হতে পারে। রোগী বা তার আত্মীয়রা কেউ কোনো অভিযোগ করেননি বিষয়টি নিয়ে।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টা ১৫মিনিটের দিকে পুলওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ে হামলা চালিয়ে ৪৪ জওয়ানকে হত্যা করে জঙ্গি গোষ্ঠী। এই হামলার দায় স্বীকার করেছে জইশ-ই-মোহাম্মদ। তাদেরই সদস্য আদিল আহমেদ দার এ হামলা চালিয়েছে। তিন দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে এবারের হামলাকে সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলা বলা হচ্ছে।

এসএইচ-০২/১৮/১৯ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্য সূত্র : আনন্দবাজার)