আন্দোলনের জন্য একমাস নিজের গোপনাঙ্গের লোম কামাননি নারীরা

আন্দোলনের জন্য

জানুয়ারি মাসে অনেক দেশেই এবার মেয়েরা এক অভিনব আন্দোলন শুরু করেছিলেন। তারা জানুয়ারি মাসকে নাম দিয়েছিলেন ‘জানুহেয়ারি’। কারণ, এই মেয়েরা পণ করেছিলেন যে জানুয়ারি মাসে তারা তাদের শরীরের লোম কামাবেন না।

তারা ছুঁড়ে ফেলেছিলেন রেজর এবং ওয়াক্সিং এর যত সামগ্রী।

‘জানুহেয়ারি’ পালনের শ্লোগান হলো: মেয়েদের শরীরেও তো লোম গজায় এবং এটা একটা স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ব্যাপার। তাকে কামিয়ে ফেলতে হবে কেন? একে বাড়তে দিলেও তো হয়।

লোমশ শরীরও যে নারীসুলভ হতে পারে এবং তা নিয়েও যে মেয়েরা আত্মবিশ্বাসী বোধ করতে পারেন – সেই বার্তাটা পৌছে দেয়াই ছিল এর লক্ষ্য।

কিন্তু এর সমালোচকরা বলেছেন, ব্যাপারটা একেবারেই জঘন্য।

যাই হোক, জানুয়ারী মাসে তাদের গায়ের লোম কামান নি এমন চারজন নারীর অভিজ্ঞতা শোনা যাক এখানে। এদের সাথে কথা বলেছেন বিবিসির মিলিসেন্ট কুক।

সাবিন ফিশার, বয়স ১৮, নিউজিল্যান্ড

“আমি যখন গায়ের লোম কামানো বন্ধ করে দিলাম – তখন আমার ঘনিষ্ঠ লোকেরা বলেছে, এটা একটা ‘ঘৃণ্য’ এবং ‘অস্বাভাবিক’ ব্যাপার। ”

“আসলে কিছু কিছু সমাজে রীতিমত মগজ ধোলাই করা হয়েছে যে মেয়েদের গায়ে লোম থাকাটা ‘অন্যায় এবং আজব’ একটা ব্যাপার। ”

‘লোকে যখন দেখতে পায় যে আমার বগলে লোম, তারা তখন ওদিকেই আড়চোখে তাকাতে থাকে, আমার চোখের দিকে তাকায় না।”

“কিন্তু আমি মনে করি যে শরীরের লোম খুব সুন্দর একটা জিনিস, এর সাথে আমার সৌন্দর্য এবং আত্মমর্যাদাবোধের কোন সম্পর্ক নেই।”

ক্রিস্টাল মারচান্দ, ট্রান্সজেন্ডার, বয়স ৩২, কানাডা

তিনি আগে ছেলে ছিলেন, পরে মেয়ে হয়েছেন। তবে তার মুখে দাড়ি রয়ে গিয়েছিল, এবং তা তিনি কামিয়ে রাখতেন।

‘জানুহেয়ারি’ মাসে ক্রিস্টাল সিদ্ধান্ত নেন, মেয়েতে পরিণত হবার পর এই প্রথম তিনি আবার দাড়ি রাখবেন। শুরু হলো দাড়ি গজানো।

“আমাকে এর পর ভয়াবহ সব গালি দেয়া হয়েছে, একেবারে রাস্তাঘাটে। কেউ কেউ তো আমার দিকে তাকাতোও না।”

জানুয়ারির মাঝামাঝি তাকে এত গুরুতর অপমানজনক অবস্থায় পড়তে হয় যে ক্রিস্টাল মারচান্দ আবার দাড়ি কামিয়ে ফেলতে বাধ্য হন।

“আমি বুঝলাম আমি সীমা অতিক্রমের ঝুঁকি নিচ্ছি , এবং এ জন্য আমাকে হয়তো আমার প্রিয়জনদের হারাতে হতে পারে। কিন্তু আমি অন্তত এটা অনুভব করেছি যে দাড়ি রাখার কারণে আমার নারীত্বের বোধ একটুও কমে যায় নি। ”

সোনিয়া ঠাকুরদেশাই, বয়স ১৯, পশ্চিম ইয়র্কশায়ার

“প্রথমে আমি বেশ ইত:স্তত করেছি, লোম না কামানোর সিদ্ধান্তটা ঠিক হলো কিনা এ নিয়ে। টুইটারে এ নিয়ে অনেককে নিন্দা এবং ঘৃণা প্রকাশ করতে দেখেছি।এসব পড়ে আমার ভয়-ভয় লাগছিল।”

“দেহের লোম বিষয়ে আমি খুব আত্মসচেতন ছিলাম। মনে হতো, এ নিয়ে কথা বলতে গেলে লোকে হয়তো আমাকে নোংরা বা রুচিহীন মনে করবে।”

তবে এ নিয়ে এখন যে মেয়েরা কথা বলছে তাতে আমি স্বস্তি বোধ করছি । আমরা যে গায়ের লোম কামিয়ে ফেলি, তার কারণ কি – এই প্রশ্ন তুলতে পারছি।”

লরা জ্যাকসন, বয়স ২১, এক্সেটার

“আমি যখন শরীরের লোম কামানো বন্ধ রাখলাম তখন আমার সাথে একজন মহিলার দেখা হলো, যিনি পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রমের রোগী এবং সে কারণে তার গায়ে লোম গজিয়েছিল।”

তিনি আমাকে ধন্যবাদ দিলেন এই বলে যে – তার নিজেকে ‘একটা দানব’ বলে মনে হতো – আমাকে দেখে সে অনুভুতিটা কমে গেছে। ”

“আমার সাথে যোগাযোগ করেছিল ১৩ বছরের একটি মেয়ে – যার হাতে পায়ে অতিরিক্ত লোম ছিল। সে-ও আমাকে বলেছে,আমাদের আন্দোলন তাকে আনন্দে কাঁদিয়েছে কারণ সে উপলব্ধি করেছে যে সে একা নয়।”

“এটা হওয়া দরকার ছিল, এবং আমি এ আন্দোলনের অংশ হতে পেরে গর্বিত।”

আরএম-০৪/২০/০৩ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্যসূত্র: বিবিসি)