ফেসবুকে প্রেমের নামে ভয়ঙ্কর ফাঁদ! চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস

ফেসবুকে প্রেমের

প্রথমে ফেসবুকে পরিচয়, পরে প্রেমের সম্পর্ক। সম্পর্কের এক মাসের মধ্যেই বয়ফ্রেন্ডকে ডেটিংয়ের প্রস্তাব সুন্দরী রমনীর। এরপর ডেটিংয়ের ফাঁদে ফেলে বয়ফ্রেন্ডকে অপহরণ করে দাবি করা হয় মোটা অংকের মুক্তিপণ।

এমনই অভিযোগে বুধবার রাতে সাভারের আমিন বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে কথিত প্রেমিকা কাজলসহ প্রতারক চক্রের পাঁচ সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাব-৪।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির।

আটককৃতার হলেন- আজিজুল হাকিম (৪০), লিটন মোল্লা (২৬), নজরুল ইসলাম বাবু (৪২), নুরু মিয়া ওরেফে মোল্লা (৬২) ও কাজল বেগম (২৬)। অভিযুক্তদের আটকের সময় ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয় অপহৃত রায়হানকে।

জানা যায়, সুন্দরী মেয়ের ছবি ব্যবহার করে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করত কাজল বেগম (২৬)। তিনি একটি সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্রের সদস্য। সম্প্রতি মোঃ রায়হান (২৪) নামে এক যুবককে প্রেমের ফাঁদে ফেলে অপহরণ করে চক্রটি। এরপর র‌্যাবের হাতে চক্রের পাঁচ সদস্য আটকের পর বেরিয়ে আসে প্রকৃত তথ্য।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক বলেন, এমনি ভাবেই কাজল বেগম অপহৃত রায়হানের সঙ্গে ফেসবুকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে ডেটিংয়ের কথা বলে ডেকে নেয় ১২ এপ্রিল রাতে।

পরে রাজধানীর কলাবাগান থেকে গত ১২ এপ্রিল রাত ১১টা ১৫ মিনিটের দিকে অপহরহণকারীরা রায়হানকে অপহরণ করে সাভারের আমিন বাজারে নিয়ে আটকে রাখে। ছয়দিন তাকে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পর পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এরপর পরিবারের সঙ্গে আলোচনায় পাঁচ লাখ টাকায় মুক্তিপণ দফারফা হয়।

তিনি আরো বলেন,‘অপহৃত রায়হানের পরিবার প্রতারক চক্রের সদস্য বাহারের সঙ্গে যোগাযোগ করে মিরপুরের ৬০ ফিট ভাঙা ব্রিজের কাছে সিগারেটের বক্সের ভেতর করে এক লাখ টাকা নিয়ে আসে। বাকি চার লাখ টাকা না দিলে রায়হানকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় চক্রটি। পরে র‌্যাবের কাছে অভিযোগের প্রেক্ষিতে চক্রের পাঁচ সদস্যকে আটক করাসহ উদ্ধার করা হয় রায়হানকে।’

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অপহরণকারীরা জানায়, তারা ১০ বছর ধরে ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও চাকরিজীবী এবং তাদের পরিবারের সদস্যকে টার্গেট করে মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন ও কৌশলে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে থাকে।

র‌্যাব-৪ প্রধান বলেন, আটক নুরু মিয়া ও কাজল বাবা-মেয়ের পরিচয় দিয়ে বাসা ভাড়া নেয়। ভাড়া বাসাতেই তারা অপহরণ করে নিয়ে এসে নির্যাতন ও মুক্তিপণ দাবি করতো। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী টের পাওয়ার ভয়ে এক মাস কিংবা দুই মাস পর পর তারা বাসা পরিবর্তন করতো।

মঞ্জুরুল কবির বলেন, সাধারণত লোকলজ্জার ভয়ে প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা এসব বিষয়ে নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আসে না। অনেকেই লাখ লাখ টাকা খোয়া দিয়েও ভয়ে কিংবা মান সম্মানের জন্য কাউকে জানায় না।

অপহরণকারী চক্রের কৌশল সম্পর্কে তিনি বলেন, ফেসবুকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করা ছাড়াও এই চক্রটি ঢাকাসহ আশপাশের বাসস্টেশন থেকে যাত্রীদের চাহিদা মতো স্থানে যাওয়ার কথা বলে মাইক্রো বা প্রাইভেটকারে উঠায়।

এরপর গাড়িতে যাত্রীবেশে আগে থেকে অবস্থানকৃত তিন/চারজন ব্যক্তি গাড়ি চলা অবস্থায় ভিকটিমকে অজ্ঞান করে। কখনো হাত-পা ও মুখ বেঁধে তাদের পরিকল্পিত এলাকায় নিয়ে আসে এবং ভিকটিমকে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে ভিকটিমের পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায় করে।

তাছাড়া কখনো সুন্দরী মেয়ের ছবি দিয়ে ফেসবুকে ফেইক আইডির মাধ্যমে নির্দিষ্ট ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও চাকরিজীবীদের টার্গেট করে তার সঙ্গে বন্ধুত্বের মাধ্যমে মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে এবং পরবর্তীতে ধীরে ধীরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে। একপর্যায়ে ভিকটিমের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে অপহরণ করে তারা।

আরএম-১০/১৯/০৪ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্যসূত্র: জুমবাংলা)