মনিরা আবদুল্লাহ ছেলেকে স্কুল থেকে আনতে যাচ্ছিলেন। পথে বাসের সঙ্গে তার গাড়ির সংঘর্ষ হয়। সে সময় মনিরার সঙ্গে ছিল চার বছর বয়সী আরেক ছেলে ওমর ওবেয়ার। ছেলে ওমরের কিছু না হলেও মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে কোমায় চলে যান মা মনিরা আবদুল্লা।
এ ঘটনাটি ঘটে ১৯৯১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। এরপর একদিন-দু’দিন করে কেটে গেছে ২৭ বছর।
২৭ বছর আগে মুনিরা আবদুল্লা যখন দুর্ঘটনার শিকার হন, তখন তার বয়স ছিল ৩২ বছর। তিনি মস্তিষ্কে মারাত্মক আঘাত পেয়েছিলেন। গাড়িতে করে তিনি সন্তানকে স্কুলে দিতে যাচ্ছিলেন। পথে এক বাসের সঙ্গে তার গাড়ির সংঘর্ষ হয়। গাড়িতে ছিলেন তার চার বছর বয়সী ছেলে ওমর ওবেয়ার। তবে মায়ের কোলে থাকায় তিনি রক্ষা পান।
২০১৭ সালে এক সরকারি অনুদানের অর্থে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় জার্মানিতে। সেখানে তার ওপর কিছু অস্ত্রোপচার করা হয়। কোমা থেকে জাগিয়ে তুলতে তাকে কিছু ওষুধও প্রয়োগ করা হয়। এরপর সম্প্রতি একদিন ঘটে আশা জাগানো সেই ঘটনা। ওমরের সঙ্গে হাসপাতালের একজনের বাগবিতণ্ডা হচ্ছিল। সেই শব্দে হঠাৎ জেগে ওঠেন তার মা।
ওমর বলেন, ‘হাসপাতালের ওই রুমে কিছু ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল। আমার মা বোধ হয় বুঝতে পেরেছিলেন আমি বিপদে আছি। সেটি তাকে যেন একটি ধাক্কা দিয়েছিল। তিনি অদ্ভুত শব্দ করছিলেন। আমি চিকিৎসকদের ডাকছিলাম তাকে পরীক্ষা করার জন্য। পরীক্ষা করে তারা বলছিলেন সব স্বাভাবিক আছে।’
‘এর তিনদিন পর কারও ডাকে আমি ঘুম থেকে জেগে উঠি। কেউ আমার নাম ধরে ডাকছিল। উঠে দেখি আমার মা আমাকে ডাকছেন, আমি আনন্দে যেন উড়ছিলাম। ২৭ বছর ধরে আমি এই মুহূর্তটার স্বপ্ন দেখেছি। এখন আমার নাম ধরেই তিনি প্রথম ডাকলেন।’
মুনিরা আবদুল্লা এখন আরও অনেক বেশি সাড়া দিচ্ছেন। তাকে আবুধাবিতে নিয়ে ফিজিওথেরাপি দেয়া হচ্ছে।
জ্ঞান হারানোর বহু বছর পর এ রকম চেতনা ফিরে পাওয়ার ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। তবে এরকম অবস্থায় থাকা কেউ কখন তার সংজ্ঞা ফিরে পাবেন, সেটা অনুমান করা কঠিন।
টেরি ওয়ালিস নামে এক মার্কিন নাগরিক ১৯ বছর পর তার সংজ্ঞা ফিরে পেয়েছিলেন। এক গাড়ি দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ার পর তিনি সংজ্ঞাহীন অবস্থায় ছিলেন এই ১৯ বছর।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্থানীয় পত্রিকা ‘দ্য ন্যাশনাল’কে গত সোমবার ২৭ বছর আগের সেই ঘটনার কথা বলেছেন মুনিরার ছেলে ওমর। তিনি বলেন, ‘আমি কখনো আশা ছাড়িনি। আমার সব সময় মনে হতো, একদিন না একদিন আমার মা জেগে উঠবেন। আমি মানুষের উদ্দেশে বলতে চাই, যাদের আপনারা ভালোবাসেন, তাদের ব্যাপারে কখনো আশা ছাড়বেন না।’
এসএইচ-২৬/২৫/১৯ (অনলাইন ডেস্ক)