বাবা হিন্দু মা মুসলিম

এবার সহিষ্ণুতার নজির গড়ল সংযুক্ত আরব আমিরাত। সে দেশে প্রবাসীদের বিয়ের ক্ষেত্রে যেসব নিয়ম রয়েছে, তা মানা হয়নি এক্ষেত্রে।

জানা গেছে, ভারতীয় ওই হিন্দু ও মুসলিম দম্পতির কন্যা সন্তান অনন্তা অ্যাসেলিন কিরণকে শেষ পর্যন্ত জন্ম সনদ দিয়েছে আমিরাত সরকার। শিশুটির বয়স এখন ৯ মাস। তার বাবা হিন্দু, মা মুসলমান।

আমিরাতের বিবাহ আইন অনুসারে, একজন মুসলিম পুরুষ অমুসলিম নারীকে বিয়ে করতে পারবেন। তবে মুসলিম নারী কখনোই অমুসলিম পুরুষকে বিয়ে করতে পারেন না।

আমিরাত সরকার ২০১৯ সালকে সহিষ্ণুতার বছর হিসেবে চিহ্নিত করে বিভিন্ন ধর্মের, বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির নাগরিকদের সম্মান জানানো ও স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। ভারতীয় দম্পতির কন্যা সন্তানের জন্ম সনদ তারই দৃষ্টান্ত।

খালিজ টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় হিন্দু পুরুষ কিরণ ও ভারতীয় মুসলিম নারী সনম সাবু সিদ্দিকের মধ্যে বিয়ে হয় কেরালায় তিন বছর আগে। বিয়ের পর তারা চলে আসেন শারজায়। এখনো তারা সেখানেই থাকেন।

গত বছরের মাঝামাঝি কন্যা সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর বিপাকে পড়ে যান কিরণ ও সনম। তারা কিছুতেই তাদের সন্তানের জন্ম সনদ পাচ্ছিলেন না হাসপাতাল থেকে।

কিরণ বলছেন, আবু ধাবির ভিসা রয়েছে আমার। আমার ও আমার পরিবারের বিমার যাবতীয় ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে। স্ত্রীকে আমি ভর্তি করিয়েছিলাম আমিরাতের মেডিওর হাসপাতালে। কিন্তু আমার মেয়ের জন্মের পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে মেয়ের জন্ম সনদ দেয়নি, আমি হিন্দু বলে।

এর পর কিরণ আদালতের দ্বারস্থ হন। নো-অবজেকশন সার্টিফিকেটের আর্জি জানান আদালতে। কিন্তু টানা চার মাস ধরে শুনানি চলার পর সেই আর্জি খারিজ করে দেয় আদালত। সন্তানের জন্মের কোনো বৈধ নথিপত্র না থাকায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন কিরণ ও সনম। ভাবনাচিন্তা শুরু করেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালে যাওয়ার। দ্বারস্থ হন আবু ধাবির ভারতীয় দূতাবাসে।

দূতাবাস অ্যামনেস্টিতে যাওয়ার জন্য তাদের সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকলেও, জন্মের বৈধ প্রমাণপত্র নেই বলে আমিরাত প্রশাসন তার কন্যাসন্তানকে অভিবাসনের ছাড়পত্র দিতে অস্বীকার করে।

এর পর আবারো আদালতে যান ওই দম্পতি। এবার তাদের আবেদন খারিজ হয়ে যায়নি আদালতে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, শেষ পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিরণ ও সনমের ৯ মাসের কন্যাসন্তান অনন্তা অ্যাসেলিন কিরণের বার্থ সার্টিফিকেট দেয় গত ১৪ এপ্রিল।

কিরণ বলেছেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাকে বলা হয়, এই প্রথম নিয়ম ভেঙে আমার কন্যা সন্তানকে এই সার্টিফিকেট দেওয়া হলো।

এসএইচ-২৩/৩০/১৯ (অনলাইন ডেস্ক)