আলো নিভিয়ে প্রাণে বাঁচলেন কেয়ারটেকার

সময় তখন সন্ধে সাড়ে ৬টা। রোজকার মতোই কলেজের সমস্ত ঘরে তালা দিয়ে মেন গেটেও তালা দিয়েছিলেন কেয়ারটেকার শান্তিরঞ্জন মোহান্তি। ওই একই সময়ে কলেজের প্রাক্তনী, কলেজের প্রাক্তন শিক্ষক এবং এই মুহূর্তে কলেজের পরিচালন সমিতির সদস্য দেবাশিস কর্মকার বাড়ি যাওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছিলেন। তাঁর ব্যাগে ছিল ল্যাপটপ। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া প্রিসাইডিং অফিসারের কাগজপত্র এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য জরুরি কাগজপত্র।

শান্তিরঞ্জনবাবুর কথায়, ‘‌গেটের ভেতরে কয়েকজন ছাত্রছাত্রী ছিল। বাইরেও কয়েকজন রোজকার মতোই কথাবার্তা বলছিল।’‌ সেসময় ছাত্রছাত্রীরা দেখছিলেন অমিত শাহের র‌্যালি কলেজের গেটের সামনে দিয়ে পার হয়ে যাচ্ছে। মিছিলের শেষ ভাগ যখন পার হচ্ছে, হঠাৎই বিকট শব্দে শান্তিরঞ্জনবাবুর ঘরের দরজায় বড় বড় ইট পড়ল। তিনি সচকিত হয়ে জানলা দিয়ে দেখেন, মেন গেটে ধাক্কাধাক্কি চলছে। চেন দিয়ে বাঁধা মেন গেটে লাথি পড়ছে। হঠাৎই মেন গেট খুলে গেল। প্রায় গোটা ৫০ ছেলে উন্মত্তের মতো থান ইট ছুঁড়তে লাগল এদিক সেদিক। সেইসঙ্গে চিৎকার। দরজা ভাঙার শব্দ।

অধ্যক্ষের ঘরের দরজায় পড়ছে লাথি, ইট। মুহূর্তের মধ্যে শান্তিরঞ্জনবাবু দৌড়ে গিয়ে কলেজের পেছন দিকের দরজা বন্ধ করে দেন। কলেজের মেন গেটের ডান দিকের যে রাস্তা, সেখানে তখন ইট আর কাচের বোতল পড়ার শব্দ। দু–‌চারজন ছাত্রছাত্রী যাঁরা ছিলেন তাঁরা দৌড়ে কলেজের ভেতরে ঢুকে পড়েন। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে শান্তিরঞ্জনবাবু মেন সুইচ অফ করে দেন। ওই অবস্থাতেই কোনওক্রমে ফোন করেন অধ্যক্ষকে। ফোন করেন আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায়। ইতিমধ্যেই তিনি লক্ষ্য করেন, একদল ছাত্র উন্মত্তের মতো কলেজের ভেতরে ঢুকে অফিস পার্টিশনের কাচ ভাঙছে।

একজন বিদ্যাসাগরের মূর্তি রাখা কাচের আধারে আধলা ছুঁড়ে মারল। সেটি ভেঙে যেতেই আরও কয়েকজন মূর্তি তুলে নিয়ে একেবারে বাইরে ছুঁড়ে ফেলল। ১৫ বছর আগে এই মূর্তিটি বসানো হয়েছিল। এদিকে দেবাশিস কর্মকার অসহায়ভাবে দাঁড়িয়ে দেখছেন। আতঙ্কিত অবস্থায় তিনিও একটি জায়গায় সরে গিয়েছেন।

শান্তিরঞ্জনবাবুর টেবিলে রাখা ব্যাগ থেকে ল্যাপটপ নিয়ে সেটি মেঝেতে আছড়ে ভেঙে ফেলা হল। অন্যান্য কাগজপত্র কুচি কুচি করে ছিঁড়ে ছড়িয়ে দেওয়া হল কলেজের সামনে। দেবাশিসবাবু বলছেন, ‘‌খবর পেয়ে পুলিশ ১০ মিনিটের মধ্যেই চলে এসেছে। না হলে কী হত ভাবতে পারছি না। একজন পাগড়ি পরা লোক ভেতরে ঢুকে আমার ব্যাগ বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দিল।’‌ জুওলজির শিক্ষক দেবাশিসবাবু বললেন, ‘‌আমার ভোটার, আধার কার্ড সবই ওই ব্যাগে ছিল।’‌ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, যেন ঝড় বয়ে গেছে।

প্রায় আধঘণ্টার ওপর তাণ্ডব চলেছিল। এরই মধ্যে একদল বাইকে, সাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। শান্তিরঞ্জনবাবুর পিঠে ইটের টুকরো এসে পড়ে। তিনি কোনওক্রমে প্রাণ বাঁচিয়েছেন। মঙ্গলবার রাতের নৈরাজ্যের সেই বর্ণনা দিতে গিয়ে এখনও তাঁরা শিউরে উঠছেন। কলেজের ইতিহাসে এধরনের আক্রমণের ঘটনা কখনও ঘটেনি। দেবাশিসবাবু জানান, ‌আমরা গোটা বিষয়টি লিখিতভাবে থানায় অভিযোগ জানিয়েছি।‌‌

এসএইচ-০৫/১৬/১৯ (অনলাইন ডেস্ক)