হাজারো গরিবকে ইফতার সরবরাহ করে কিশোর কুমার দাশ

হাজারো গরিবকে

সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও বৃদ্ধদের মাঝে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিনামূল্যে ইফতার বিতরণ করে আসছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন’৷

যেভাবে শুরু

২০১৩ সালে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠা করেন কিশোর কুমার দাশ৷ ব্যক্তিগত জীবনে ‘অনটনকে’ এমন কাজে উদ্বুদ্ধ হওয়ার প্রেরণা হিসাবে উল্লেখ করেন তিনি৷ ‘এক টাকায় আহার’ নামে সারা বছর কার্যক্রম চললেও রোজার মাসে বিনামূল্যে ইফতারির ও সেহরি বিতরণ করে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন৷

বিনা মূল্যের ইফতারের আওতা

ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহসহ দেশের মোট আটটি শাখার মাধ্যমে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকরা সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে বিনামূল্যের ইফতারির প্যাকেট৷

ইফতারি তৈরির কর্মযজ্ঞ

ঢাকার পল্লবীতে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে ইফতারি তৈরি করেন স্বেচ্ছাসেবকরা৷ প্রতিদিন সেখানে তৈরি হয় দুই হাজার প্যাকেট ইফতারি৷ এরপর গাড়িতে পৌঁছে যায় বস্তিবাসীদের কাছে৷

হরেক রকমের ইফতারি

ইফতারে বুট, পেঁয়াজু ও জিলাপিসহ অন্যান্য খাবার তৈরি করা হয় বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের কিচেনে৷ মুখরোচক এসব খাবার যাঁরা তৈরি করেন, তাঁদের প্রায় সবাই স্বেচ্ছাসেবক৷

খাবার তৈরি ও প্যাকেজিং

খাবার তৈরির পর সেসব প্যাকেজিংও করেন স্বেচ্ছাসেবকরা৷ এরপর খাবার নিয়ে গাড়ি ছুটে যায় ছিন্নমূল মানুষের গন্তব্যে৷ প্রথমে শিশুদের খাবার দেওয়ার পর বয়স্ক ও নারীদের খাবার দেন তাঁরা৷

টার্গেট আড়াই লাখ

এ বছর আড়াই লাখ ইফতার বিতরণের টার্গেট রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার দাশ৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা প্রতি বছর রমজানে এই ইভেন্টটা করি৷ আমরা আড়াই লাখ মানুষের কাছে ইফতার পৌঁছে দেবো৷ তার মধ্যে রান্না খাবার থাকবে ১ লাখ আর শুকনা খাবার দেড় লাখের মতো৷’’

সক্রিয় স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী

ইফতার ও সেহরির বাইরে ‘এক টাকায় আহার’ কর্মসূচি মিলিয়ে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের রয়েছে একটি দক্ষ ও আন্তরিক স্বেচ্ছাসেবক দল৷ ‘‘আমি এক মাসের জন্য বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনে কাজ করছি৷ এখানে এসেছি মূলত মানবসেবার করার জন্য, ভালোবাসা থেকেই৷ বস্তিবাসী ও ছিন্নমূল মানুষের সঙ্গে একত্রিত হয়ে তাঁদের সেবা করতে পারছি,’’ বলেছেন মমিনুল ইসলাম নামে এক স্বেচ্ছাসেবক৷

কাজের ফাঁকে বিদ্যানন্দে

ফেসবুক থেকে দেখে জেনে বিদ্যানন্দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন অনেকে৷ স্বেচ্ছাসেবক আরিফ মেহেদী ফরিদাবাদ আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী৷ রোজার মাসে রান্নার দাঁয়িত্ব পড়েছে তাঁর কাঁধে৷ ‘‘আমি মাদ্রাসায় পড়ি৷ বাকি সময়টাতে যে ছুটির সময় থাকে, ক্লাস যে সময় কম থাকে, সে সময় বিদ্যানন্দে এসে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করি,’’ বলেন মেহেদী৷

শৃঙ্খলার দৃষ্টান্ত

বাংলাদেশে ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণের সময় অনেক ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলেও বিদ্যানন্দের কর্মসূচি এক্ষেত্রে অনেকটা ব্যতিক্রম৷ তাদের কার্যক্রম যেন দীর্ঘদিন ধরে চেনা সবার কাছে৷ সুশৃঙ্খল লাইনে দাঁড়িয়ে শিশু, বৃদ্ধ আর নারীরা খাবার গ্রহণ করেন৷

অর্থ আসে অনুদানে

বিদ্যানন্দের প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার জানান, প্রথমে নিজের পকেটের টাকা দিয়ে শুরু করলেও এখন মানুষের অনুদানেই চলে সংগঠনটি৷ খাবার বিতরণ দিয়ে শুরু হওয়া সংগঠনের এখন এতিমখানা, স্কুল, গার্মেন্টস, নারীদের হোস্টেলসহ বিভিন্ন প্রকল্প রয়েছে৷ গত বছর ছয় কোটি টাকার মতো অনুদান এসেছিল বলে জানান কিশোর কুমার৷

আরএম-০৪/১৮/০৫ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্যসূত্র: ডয়চে ভেলে)