সন্তানকে বাঁচানোর আর্তি বাবার, চিকিৎসক বললেন এখানে হবে না

ছয় মাসের ছেলেকে কোলে নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দিকে এগোচ্ছিলেন এক দম্পতি। কিন্তু হাসপাতালে ঢুকতেই দেখেন জরুরি বিভাগ বন্ধ। একমাস আগে ছোট শিশুটির পায়ুপথে অপারেশন হয়েছিল। পরিস্থিতি হঠাৎ খারাপ হওয়ায় চিকিৎসকের কাছে ছুটে আসেন শেখ নজরুল ও তার স্ত্রী। কিন্তু তারা হাসপাতালে কোনো চিকিৎসা সেবাই পেলেন না।

ছোট শিশুটির মুখে কথা ফোটেনি এখনও। শুধু কেঁদে চলেছে। আর তাতেই উদ্বেগ বেড়েছে ওই দম্পতির। চিকিৎসা না পেলে ছেলের কী হবে, তা ভেবে শিউরে উঠছেন। উদ্বেগে হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকদের কাছে শেখ নজরুলের আকুতি, ‘দেখুন, আমার ছেলেটা শুধু কেঁদেই চলেছে। পায়ুপথ ফুলে লাল হয়েছে। ওর কি চিকিৎসা হবে না?’ শেষ পর্যন্ত জুনিয়র চিকিৎসকরা বলেন, এখানে চিকিৎসা হবে না।

বুধবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের এনআরএস হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটেছে। চিকিৎসককে মারধরের একটি ঘটনার জেরে রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে। এমনকি জরুরি বিভাগেও চিকিৎসা মিলছে না। নজরুলের মতোই উদ্বেগ নিয়ে হাসপাতাল থেকে ফিরে যেতে হচ্ছে রাজ্যের হাজার হাজার রোগী এবং তাদের পরিবারকে।

এনআরএস চত্বরে গাছের তলায় মাথায় হাত দিয়ে বসেছিলেন সিরাজুল মোড়ল। তিনি পশ্চিমবঙ্গের হাবড়ার বাসিন্দা। তার ১৪ বছরের মেয়ে তুহিনা খাতুন ভুল করে কীটনাশক খেয়ে ফেলেছিল। রোববার এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তুহিনাকে। কিন্তু তার পর থেকেই অচলাবস্থা। সিরাজুলের অভিযোগ, ‘মেয়ের চিকিৎসা হচ্ছে কিনা, চিকিৎসকদের কাছ থেকে জানতে পারছি না। সেই রোববার থেকে এনআরএস-ই আমাদের ঘর-বাড়ি হয়ে গিয়েছে। ডায়ালাইসিস শুরু হয়েছে বলে শুধু জানতে পেরেছিলাম। এখন মেয়ে কেমন আছে বলতে পারছি না।’

এনআরএসের মতোই কলকাতার এসএসকেএম, মেডিক্যাল কলেজ, আরজিকর, সর্বত্র একই অবস্থা। দূর দূরান্ত থেকে রোগীরা আসলেও কর্মবিরতির জন্য চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না। অন্যত্র যে যাবেন তারও উপায় নেই। কারণ কলকাতাসহ বিভিন্ন জেলার হাসপাতালেও ধর্মঘট চলছে।

এসএইচ-২২/১২/১৯ (অনলাইন ডেস্ক)