ক্যান্সারে প্রেমিকা হার মানলেও হারেনি ৯ বছরের ভালোবাসা

যেমন নকশিকাঁথার মাঠে সাজু-রূপাইয়ের প্রেম গাঁথা; যেমন রোমিও-জুলিয়েট, লায়লা-মজনুর প্রেমকাহিনি। এটাও তেমনই এক ভালোবাসার গল্প। যে গল্পে স্কুলের গন্ডি না পেরতেই ক্যান্সারে আক্রান্ত হন প্রেমিকা। সেই রোগের কাছে হেরে গিয়েও এ গল্প বীথি আর সুব্রতর হার না মানার জীবন কাহিনি। শেষ পর্যন্ত প্রেমিকার পাশে থেকে, তার শেষ ইচ্ছেকে মর্যাদা দিয়ে বীথির সিঁথিতে সিঁদুর দিলেন সুব্রত। তার পর, সব শেষ…।

গত ৩ আগস্ট ভারতের শিলিগুড়ির একটি নার্সিং হোমে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বীথি। কিন্তু এখনও এ ‘গল্প হলেও সত্যি’ ঘটনাটি আপ্লুত করে রেখেছে দুই পরিবারকে। কর্কট রোগে আক্রান্ত বীথির সঙ্গে যেভাবে গত ৯ বছর ধরে আঁকড়ে ছিলেন সুব্রত, তা কিছুটা হলেও অবাকই করেছে দুই পরিবারকে। এ কয় বছরে তাকে সুস্থ করতে পরিবারের সঙ্গে সুব্রতও ছুটেছেন, কখনও মুম্বাইয়ে, কখনও বেঙ্গালুরুতে, কখনও বা শিলিগুড়িতে।

পরিবারিক সূত্রে বলা হচ্ছে, বীথির ইচ্ছে ছিল সুব্রতকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়ার। সে জন্য সেই দুপুরেই দুই পরিবারের উপস্থিতিতে শেষ ইচ্ছে পূরণ করেন সুব্রত।

উত্তর দিনাজপুরের টুঙ্গিদিঘির বাসিন্দা সুব্রত কুণ্ডু। বাবা শক্তিপদ কুণ্ডুর চালের ব্যবসা। দুই ভাইও বাবার ব্যবসা দেখছেন। সুব্রত একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। টুঙ্গিদিঘি হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করে উচ্চ মাধ্যমিক পড়তে শিলিগুড়ি আসেন তিনি। বয়েজ হাই স্কুলে পড়ার সময় বন্ধুদের মাধ্যমে আলাপ হয় শিলিগুড়ি নেতাজি গার্লস স্কুলের ছাত্রী বীথি দাসের সঙ্গে।

২০০৯ সাল থেকে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়। বিপত্তি ঘটে দু’বছর পর। ২০১১ সালে বীথি তখন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। টেস্টের ফল প্রকাশিত হয়েছে। ডান হাতের কব্জিতে একটি টিউমার থেকে বীথি অসুস্থ হয়ে পড়েন। শিলিগুড়িতে অস্ত্রোপচার করে তা বাদও দেয়া হয়। তবে বায়োপসি রিপোর্টে ধরা পড়ে, টিউমারটি ম্যালিগন্যান্ট। সেই থেকে লড়াই শুরু।

চিকিৎসার জন্য এক বছর মুম্বাইয়ে থাকতে হয় বীথিকে। সেই থেকে সুব্রত কখনও মুম্বাই, কখনও শিলিগুড়ি করে চলেছেন। বীথির বাবা কালীপদ দাস রেলের লোকো-পাইলট ছিলেন। মেয়ের চিকিৎসার জন্য তিনি স্বেচ্ছায় অবসর নেন।

সুব্রতর কথায়, কেমো থেরাপির পর ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বীথি সুস্থ ছিলেন। এরপর রোগ ছড়াতে শুরু করে অন্যত্র। ফের রেডিয়োথেরাপি চালানোর পর আবার তিন বছর সুস্থ ছিলেন। ফের কব্জি এবং কনুইয়ের কাছে একই উপসর্গ। চিকিৎসক হাত কেটে বাদ দিতে বললেন। তাই করা হলো। ২০১৮ সালের অক্টোবরে চিকিৎসক বললেন, আর ভয় নেই। বাধা নেই বিয়েতেও।

সুব্রত জানালেন, সেই শান্তি বেশি দিন রইল না। ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ল গত মার্চে। এরপর চার বার নার্সিং হোমে ভর্তি করানো হয়।

কিছুটা ক্লান্ত স্বরেই তিনি বললেন, ‘এবার আর বীথিকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারলাম না।’

এসএইচ-১৪/০৮/১৯ (অনলাইন ডেস্ক)