টানা চারবার ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিলেন ক্যান্সারজয়ী নারী

মরণব্যাধি ক্যান্সার থেকে বেঁচে যাওয়া এক নারী এই প্রথম কোন বিরতি ছাড়াই সাঁতার কেটে ইংলিশ চ্যানেল চারবার পাড়ি দিয়েছেন। তার বয়স ৩৭ বছর, নাম স্যারাহ টমাস। দুঃসাহসিক এই অভিযান তিনি শুরু করেন রোববার সকালে। এক নাগাড়ে ৫৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সাঁতার কাটেন তিনি।

খোলা জায়গায় আল্ট্রা ম্যারাথন সাঁতারু হিসেবে পরিচিত স্যারাহ টমাস। স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। মাত্র এক বছর আগে তার চিকিৎসা শেষ হয়েছে। তার এই ইংলিশ চ্যানেল জয় করার ঘটনাকে তিনি উৎসর্গ করেছেন ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে যারা বেঁচে আছেন তাদের।

তার এই সাঁতার ৮০ মাইল দীর্ঘ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তীব্র স্রোতের কারণে শেষ পর্যন্ত তাকে ১৩০ মাইলের মতো সাঁতরে পার হতে হয়েছে। রোববার সকালে সাঁতার শুরু করে টমাস মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে সাঁতারের শেষ ধাপটি সম্পন্ন করেন।

সাঁতার শেষ করে ডোভারে তীরে উঠে আসার পর বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে আমরা এটা করেছি। আমার সঙ্গে দেখা করতে এবং আমি যাতে সফল হতে পারি সেই শুভ ইচ্ছার কথা জানাতে অনেকেই তীরে হাজির হয়েছেন। সত্যি কথা বলতে কী আমি নিজেই হতভম্ব হয়ে পড়েছি।’

তিনি জানিয়েছেন, আজ মঙ্গলবার তিনি সারাদিন ঘুমাবেন বলে ভাবছেন। ‘সত্যিই আমার খুব ক্লান্ত লাগছে।’ অনেকেই একে বিস্ময়কর এবং অতিমানবীয় ঘটনা হিসেবে দেখছেন। নামকরা সাঁতারুরা বলছেন, মানুষ যখন মনে করছে তারা তাদের ক্ষমতার শেষ সীমায় পৌঁছে গেছে, তখনই সেসব রেকর্ড ভেঙে দেয়া হলো।

স্যারাহ টমাসের মা বলেছেন, তার মেয়ে একটু পাগলাটে। ইংলিশ চ্যানেল জয় করার সবশেষ এই অভিযানে তাকে পেট ব্যথার সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। টমাস এর আগেও ইংলিশ চ্যানেলে সাঁতার কেটেছেন। ২০১২ ও ২০১৬ সালেও তিনি চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন। কিন্তু সেটা যেন তার জন্যে যথেষ্ট ছিল না।

তার কথায়, ‘আমি যখন সাঁতার কেটে ২০ মাইল পার হয়েছি তখনই মনে হয়েছে যে আমি তো আরও দূরে যেতে পারি। সেই দূরত্বটা কতোখানি সেটাই আমি দেখতে চেয়েছিলাম।’

২০১৭ সালের আগস্টে তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সীমান্তে অবস্থিত লেক চ্যাম্পলেনে ১০৪ দশমিক ৬ মাইল সাঁতার কেটেছিলেন। কিন্তু তার পরেই তার শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ে। টমাস সাঁতার কেটে দুবার করে ইংল্যান্ড থেকে ফ্রান্সে যান এবং ফিরে আসেন। তাতে তার সময় লাগে ৫৪ ঘণ্টা।

এর আগে মাত্র চারজন সাঁতারু একবারও না থেমে তিনবার ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়েছিলেন। টমাস জানালেন, ঢেউ কেটে কেটে সাঁতার করাই ছিল তার কাছে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। বড় বড় স্রোত তাকে ঠেলে দিচ্ছিল। কিন্তু তিনি জেলিফিশের মতো এগিয়ে গেছেন।

আরেকটা বড় সমস্যা ছিল লবণাক্ত পানি। মুখের ভেতরে এই পানি ঢুকে পড়ায় গলা, মুখ ও জিহ্বায় ব্যথা করছিল। তার কথায়, ‘শেষ বারের মতো যখন ফ্রান্স থেকে ফিরে আসছিলাম তখন খুবই সমস্যা হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল যেন শেষই হচ্ছে না।

এই ৫৪ ঘণ্টা তিনি প্রোটিন-সমৃদ্ধ পানীয় পান করেছেন যা তার শরীরে পুষ্টির যোগান দিয়েছে। তার সঙ্গে মেশানো হয়েছিল ইলেকট্রোলাইটস এবং সামান্য ক্যাফেইন যা তার ঘুম তাড়াতে সাহায্য করেছিল।

এসএইচ-১৭/১৭/১৯ (অনলাইন ডেস্ক)