৩০ টাকার লটারিতে রিকশাচালক পেলেন ৫০ লাখ টাকার পুরস্কার

সারাদিন রিকশা চালিয়ে আয় করেছিলেন মাত্র ৭০ টাকা। এই টাকা দিয়ে কিছু চাল-ডাল কিনে বাসায় ফিরবেন ভাবছিলেন। তখনই পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন এক হকার। বিক্রি করছিলেন লটারির টিকিট। তাকে ৩০ টাকা দিয়ে একটা টিকিট কিনতে অনুরোধ করছিলেন তিনি। কিন্তু তার কাছে আছে তো মাত্র ৭০ টাকা। এই টাকা থেকে ৩০ টাকা চলে গেলে সংসারের খরচের জন্য আর কী থাকে!

একপ্রকার জোর করেই তাকে পকেটে গুঁজে দিলেন একটা টিকিট। আর সেই টিকিটই বদলে দিল তার জীবন। ৫০ লাখ টাকার প্রথম পুরস্কারটা পেয়ে যান তিনি।

৩০ টাকার লটারির টিকিট কেটে ৫০ লাখ টাকার মালিক এই রিকশাচালকের বাড়ি ভারতের পূর্ব বর্ধমানের গুসকরায়। গৌড় দাস নামের এই রিকশাচালক এখন রীতিমতো সেলিব্রিটি। তাকে দেখতে ভিড় করছেন গুসকরার লোকজন।

গুসকরা পুর এলাকার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে মুচিপাড়ায় ইটের গাঁথনি করা ছাউনি চালের ঘরে বসবাস গৌড় দাসের। বাড়িতে রয়েছেন বিধবা মা, স্ত্রী ও তিন সন্তান। রিকশা চালিয়ে সংসার চলে না। তাই দিনমজুরির কাজেও যেতেন গৌড়ের মা তুলসী ও স্ত্রী প্রতিমা দাস। সন্তানদের মধ্যে ছেলে দীপক বড়। সে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। মেয়ে পায়েল ও দীপা সবে স্কুলে ভর্তি হয়েছে।

গৌড় জানান, তিনি রোববার সকালে লটারির টিকিটটি কেটেছিলেন। ওইদিনই রিকশাচালক ইউনিয়নের সদস্যরা মিলে পিকনিক করার কথা ছিল। গৌড়বাবু সেই উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বৃষ্টির কারণে পিকনিক বাতিল হয়। যথারীতি রিকশা নিয়ে যাত্রীদের অপেক্ষা করতে থাকেন তিনি।

বেলা প্রায় সাড়ে এগারোটা নাগাদ রিকশা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন গৌড়। তখন তাকে একপ্রকার জোরজবরদস্তি করেই এক হকার ওই টিকিটটি দিয়েছিলেন। তখন তার কাছে মাত্র ৭০ টাকা ছিল। তার মধ্যে ৩০ টাকার টিকিট কাটলে কী করে সংসার চালাবেন, সেই ভাবনাও ভেবেছিলেন গৌড়। তবে এক বন্ধুও বলায় টিকিটটি অবশেষে কিনেই ফেলেন রিকশাচালক।

রোববার বিকেলে গৌড় পাড়ার কাছে একটি কাউন্টারে টিকিটের নম্বর মেলাতে গিয়ে দেখেন প্রথম পুরস্কারের পাশে জ্বলজ্বল করছে তার নাম। পুরস্কারের অর্থমূল্য ৫০ লাখ টাকা। তারপরেই রীতিমতো টেনশনও শুরু হয়ে যায়। প্রথমেই বাড়িতে গিয়ে বলেন স্ত্রী ও মাকে। তবে নিরাপত্তার কারণে প্রতিবেশীদের বলতে চাননি। কিন্তু টিকিট বিক্রেতার মাধ্যমে সে কথা তখন ছড়িয়ে যায় চতুর্দিকে।

সোমবার গুসকরার একটি ব্যাংকে ওই টিকিট জমা দিয়েছেন গৌড়বাবু। এ টাকা দিয়ে তার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘খুব ছোট ঘরে কষ্ট করে থাকতে হয়। তাই একটি ভালো বাড়ি করব। তার সঙ্গে ছেলেমেয়েদের ভালো করে লেখাপড়া শেখাব ‘

তাহলে কি রিকশা চালানো ছেড়ে দিচ্ছেন গৌড়? জবাবে গৌড়ের জবাব, ‘রিকশা আর চালাব না। তার পরিবর্তে একটি টোটো কিনব।’

এসএইচ-০৬/০১/১৯ (অনলাইন ডেস্ক)