জীবিত মানুষের শেষকৃত্য করা হয়

মানুষের মৃত্যুর পর শেষকৃত্য অনুষ্ঠান হবে- এটিই স্বাভাবিক নিয়ম। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি হিলিং সেন্টার মৃতদের জন্য নয়, জীবিত মানুষের জন্য বিনামূল্যেই শেষকৃত্য অনুষ্ঠান করে দেয়ার সুযোগ দিয়ে থাকে। জি নিউজ বাংলা

হিওয়োন হিলিং সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ২০১২ সালে। তখন থেকে এখন পর্যন্ত ওই সেন্টারে ২৫ হাজারেরও বেশি ‘জীবিত মানুষের’ গণ-শেষকৃত্য অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। মৃত্যুকে স্মরণ করার মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করার লক্ষ্যেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়। এছাড়া মানুষের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতাও কমায় এই উদ্যোগ।

জীবিত মানুষের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া ৭৫ বছর বয়সী চো জে হি বলেন, মৃত্যু সচেতনতা তৈরি হলে, মৃত্যুকে কাছ থেকে অনুভব করলে, জীবনকে নতুন দৃষ্টিতে দেখা যায়।

কিশোর-কিশোরীসহ বিভিন্ন বয়সের কয়েক ডজন মানুষ এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন। ঠিক মৃত্যুর পর মৃতের শেষকৃত্য অনুষ্ঠান যেভাবে হয়, সেটিই হয়েছে। তাদের ছবি তুলে বাঁধাই করা হয়েছে, বাইবেল পাঠ করা হয়েছে। এরপর তারা বন্ধ কফিনের ভেতর ১০ মিনিট শুয়েছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র চই জিন কিউ (২৮) জানান, কফিনের ভেতর শুয়ে থাকার সময় তিনি উপলব্ধি করেছেন যে, প্রায়ই অন্যদের নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করতেন তিনি। চই বলেন, কফিনে শুয়ে আমার কাছে সেটি অর্থহীন মনে হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে চাকরির প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক বাজারে না ঢুকে নিজেই ব্যবসা শুরু করতে চান বলে যোগ করেন তিনি।

অর্গানাইজেশন ফর ইকোনোমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’স বেটার লাইফ ইনডেক্সের (উন্নত জীবন যাপনের সূচক) ৪০টি দেশের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থান ৩৩ নম্বরে।

দক্ষিণ কোরিয়ার তরুণ প্রজন্মের মধ্যে শিক্ষা ও কর্মজীবন নিয়ে উচ্চাশা থাকে। কিন্তু অর্থনৈতিক মন্দা ও বেকারত্বের হার বাড়ায় তাদের সেই আশা হতাশায় পরিণত হয়।

আসান মেডিক্যাল সেন্টারের প্যাথলজি বিভাগের চিকিৎসক প্রফেসর ইয়ু ইয়ুন সিল বলেন, কম বয়সে মৃত্যুর তাৎপর্য উপলব্ধি করা এবং এর জন্য প্রস্তুত হওয়া জরুরি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় আত্মহত্যার হার ছিল প্রতি এক লাখ মানুষে ২০ দশমিক ২ শতাংশ। যা বিশ্বের গড় হার ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশের প্রায় দ্বিগুণ।

হিলিং সেন্টারের প্রধান জং ইয়ং মুন বলেন, শেষকৃত্য প্রতিষ্ঠান হিওয়োন জীবিতদের শেষকৃত্য অনুষ্ঠান করার মাধ্যমে তাদের জীবনের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে সাহায্য করে। এতে তারা ক্ষমাশীল হয় এবং পরিবার-বন্ধুর সঙ্গে তাদের সম্পর্কের উন্নতি হয়। সাধারণত আত্মীয়দের মৃত্যুর পর শেষকৃত্যে জীবিতরা অনেক ধরনের আফসোস করেন। আগে থেকেই মৃত্যুর উপলব্ধি থাকলে, আত্মীয়দের মারা যাওয়ার পর এই আফসোস করতে হতো না।

তিনি আরও বলেন, আমরা চিরকাল বাঁচি না। তাই এই অভিজ্ঞতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এতে আগে থেকেই ক্ষমা চাওয়া ও ক্ষমা করা সম্ভব হয়। সুখি জীবন যাপন করা যায়।

‘এমনকি এর মাধ্যমে আত্মহত্যার চিন্তাও চলে যেতে পারে। আত্মহত্যা করতে চায় এমন কয়েকজনের সিদ্ধান্ত আমি পরিবর্তন করতে পেরেছি। আমি মানুষকে তাদের গুরুত্ব বোঝাতে চাই। তারা পৃথিবীতে না থাকলে যে কাছের মানুষেরা তাদের কথা ভাবে, তাদের জন্য মন খারাপ করে সেটা উপলব্ধি করাতে চাই।

এসএইচ-০২/১১/১৯ (অনলাইন ডেস্ক)