৪০ বছর ধরে কয়েদিদের ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যান যিনি

১৯৮১ সালে সিঙ্গাপুরে সবচেয়ে নৃশংস এক হত্যাকাণ্ডের মামলায় টান মুই চু’র নামে এক নারীর ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। একই মামলায় টানসহ তার স্বামী এড্রিয়ান লিম এবং স্বামীর রক্ষিতা হো কাহ্ হং তাদের সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। দুটি শিশুকে নৃশংসভাবে হত্যার অভিযোগে তাদের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়।

সেই কারাগারে বন্দিদের সাথে কাজ করছেন ক্যাথলিক সন্ন্যাসিনী সিস্টার জেরার্ড ফার্নান্দেজ। তিনি এক সময় টান মুই চু’কে স্কুলে পড়িয়েছেন। সিস্টার জেরার্ড বলেন, টান ছিলেন এক সাদাসিধে মেয়ে। ধর্মপরায়ণ এক পরিবার থেকে তিনি কনভেন্ট স্কুলে পড়তে এসেছিলেন। তার খবরটা প্রথম শোনার পর আমার খুব খারাপ লেগেছিল। তখনই আমার মনে হয়েছিল যে করেই হোক তার সাথে দেখা করতে হবে।

এরপর বেশ কয়েক বছর ধরে সিস্টার জেরার্ড টান মুই চু’র সাথে দেখা করার জন্য কারাগারে যান। দু’জনে গভীর রাত পর্যন্ত একত্রে উপাসনা করেন।

সিস্টার জেরার্ড বলেন, তার প্রতি সাহায্যের হাত বাড়াতেই আমি সেখানে গিয়েছিলাম এবং সেও জানতো সে আমার সাথে মন খুলে কথা বলতে পারতো। আমার মনেও হয়েছে তার মনের ভেতরের কারাগার থেকে সে মুক্তি পেয়েছিল।

টান মুই চু’র ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করা হয় ১৯৮৮ সালের ২৫শে নভেম্বর। সেদিন সকালে সিস্টার জেরার্ডের দেখা হয়েছিল। জীবনের শেষ সকালে টান মুই চু একটি নীল রঙের পোশাক পরেন। তার জুতার রঙও ছিল নীল। সে দিন সে ছিল বেশ শান্ত। এরপর দুই নারী হাতে হাত ধরে তাকে ফাঁসির মঞ্চের দিকে এগিয়ে যান। সে যখন ফাঁসির মঞ্চের ঘোরানো সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে যাচ্ছিল, তার পায়ের শব্দ আমি শুনতে পাচ্ছিলাম। ফাঁসি কাঠের লিভারটি যখন টেনে ধরা হলো আর ট্র্যাপ ডোরটি যখন ঘটাং করে খুলে দেয়া হলো, সেটা আমি অনুভব করতে পারছিলাম। ঠিক তখনই আমি টের পেলাম সে আমাদের ছেড়ে চলে গেল।”

সিস্টার জেরার্ড বলেন, একটা লোক সারা জীবনে অনেক খারাপ কাজ করলেও, তার জীবনের দাম কিন্তু তার চেয়েও অনেক বেশি। পাপ যত বড়ই হোক না কেন মর্যাদা নিয়ে মৃত্যুর অধিকার সব মানুষের রয়েছে।

সিঙ্গাপুরের বিখ্যাত চাঙ্গি বিমানবন্দর থেকে একটু দূরে এই বিশাল চাঙ্গি কারাগার। দেশের সবচেয়ে কুখ্যাত অপরাধী এবং মৃত্যুদণ্ড পাওয়া কয়েদিদের এখানে রাখা হয়। এই কারাগারেই টান মুই চু’র মতো আরও ১৮ জন কয়েদিকে সিস্টার জেরার্ড ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে গেছেন।

সিস্টার জেরার্ড গত ৪০ বছরে ধরে এই কারাগারের বন্দীদের সাথে কাজ করছেন। তিনি মনে করেন ঈশ্বরই তাকে এই দায়িত্ব দিয়েছেন। ফাঁসির আসামির অনেক ধরনের মানসিক ও ধর্মীয় সাহায্যের প্রয়োজন হয়। আমি তাদের বোঝানোর চেষ্টা করি যে ক্ষমা চাইতে পারলে, আর মনের ক্ষত পুষিয়ে নিতে পারলে তারা মৃত্যুর পর আরও ভাল কোনো জায়গায় যেতে পারবে।

এসএইচ-২৩/১০/১৯ (অনলাইন ডেস্ক)