শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন, বাবা-মায়ের কোলে চড়েই লড়ছে দুই ভাই

সোজা হয়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই। শরীরের ৮০ শতাংশই অকেজো। তবুও স্বপ্ন দেখার বিরাম নেই। একদিন শিক্ষক হব; এই স্বপ্নপূরণে বাবা-মায়ের ‘কাঁধে’ ভর করে এগিয়ে চলেছে যমজ দুই ভাই।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের মেদিনিপুর জেলার পাঁশকুড়ার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মধুসূদনবাড়ের বাসিন্দা হেমন্তকুমার দে পেশায় ব্যবসায়ী ছিলেন। ২০০৭ সালে তার স্ত্রী পিউ দুই যমজ সন্তানের জন্ম দেন। বয়স বাড়লেও দুই ভাই অনীক এবং অভীক উঠে দাঁড়াতে পারেনি। তাদের চিকিৎসার জন্য রাজ্যের বাইরেও স্নায়ু বিশেষজ্ঞদের কাছে নিয়মিত গিয়েছেন হেমন্ত-পিউ। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। চিকিৎসকরা ওই দম্পতিকে জানিয়ে দেন, যমজ দুই ভাই জন্মগত শারীরিক প্রতিবন্ধী।

প্রতিবন্ধকতার সঙ্গেই মধুসূদনবাড় প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পাস করে ২০১৮ সালে পাঁশকুড়া ব্রাডলি বার্ট হাইস্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হয় অনীক ও অভীক। ছেলেদের তিন কিলোমিটার দূরের স্কুলে গাড়িতে করে পাঠাতে সমস্যায় পড়েছিলেন হেমন্ত। নিজের ছোট ব্যবসা রয়েছে। তার ওপর ছেলেদের নিয়মিত ফিজিওথেরাপির খবচ। শেষে ব্যবসা ছেড়ে টোটো কেনেন হেমন্ত। টোটোয় করে প্রতিদিন ছেলেদের স্কুলে পৌঁছে দেন হেমন্ত এবং পিউ।

স্কুলে পৌঁছেই কাজ শেষ নয়। দুই ছেলেকে দু’জনে কোলে করে সিঁড়ি ভেঙে তিনতলায় ক্লাসরুমে পৌঁছে দেন এই দম্পতি। অনীক এবং অভীক যতক্ষণ স্কুলে থাকে, ততক্ষণ সেখানেই থাকেন মা পিউ। কারণ, ক্লাসের বাইরে বা বাথরুমে যেতে হলে মায়ের কোলই ভরসা দুই ভাইয়ের। আর হেমন্ত যান টোটো চালাতে। স্কুল শেষে ফের টোটো নিয়ে হাজির হন তিনি। সেখান থেকে তাতে চড়ে দুই ভাই যায় প্রাইভেটে।

হেমন্ত বলেন, দুই ছেলে মাসে এক হাজার টাকা করে সরকারি প্রতিবন্ধী ভাতা পায়। বছর খানেক হল স্থানীয় একটি স্বেছাসেবী সংস্থায় দুই ভাইয়ের ফিজিওথেরাপি বিনামূল্যে করানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ছেলেরা প্রতিবন্ধী। ওদের জন্য এটুকু তো আমাদের করতেই হবে। ওরা জীবনে প্রতিষ্ঠিত হোক, এটাই প্রার্থনা।’ ছেলেদের লড়াইয়ে সব থেকে বেশি সময় দিতে হয় মা পিউকে। তার কথায়, ‘জানি এখনও অনেকটা পথ বাকি। কিন্তু জীবন মানেই তো সংগ্রাম। ওদের স্বপ্ন পূরণের লড়াইয়ে আমরা শরিক মাত্র।’

মঙ্গলবার বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস। মেদিনিপুরের বিভিন্ন এলাকায় সেই উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন হবে। এমনই একটি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ রয়েছে অনীক আর অভীকের। কিন্তু স্কুলে ফাইনাল পরীক্ষা চলায় এবার তাতে যোগ দেওয়া হচ্ছে না ষষ্ঠ শ্রেণির এই দুই ছাত্রের। তাদের কথায়, ‘এখন তো ভাল করে পড়তে হবে। তা না হলে শিক্ষক হয়ে মা-বাবার মুখে হাসি ফোটাব কী করে!’

এসএইচ-১৫/০৩/১৯ (অনলাইন ডেস্ক)