‘মেলানিয়া, দেখ কেমন সেজেছে আহমেদাবাদ’

‘শুনেছি, মেলানিয়া খুব সুন্দরী। তাকে দেখার ইচ্ছা আছে। তবে জানি না এত ভিড়ে কাছাকাছি পৌঁছতে পারব কি না’-কথাগুলো বলছিলেন কেশিবেন বালাভাই সারানিয়া নামের ব্যক্তি। ট্রাম্প-পত্নীকে দেখতে সোমবার হাতে কোনো কাজ রাখবেন না। শুধু সারানিয়া নয়, তার মতো শতশত তরুণ-তরুণী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন কখন ট্রাম্প-মেলানিয়া ভারতের মাটি স্পর্শ করবেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়ার দুদিনের ভারত সফরে সোমবার আহমেদাবাদ আসছেন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম উদ্বোধন করতে সেখানে যাবেন তারা। তাদের এ সফরকে ঘিরে তাই উচ্ছ্বাসের কমতি নেয় আহমেদাবাদের জনগণের। তাজমহল যদি কানে কানে ভালোবাসার গল্প শোনায়, তাহলে আহমেদাবাদ দেখাবে দেশের সংস্কৃতি-ঐতিহ্যের রূপরেখা। মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়াকে স্বাগত জানাতে রঙের মাধুরীতে সেজে উঠেছে ঐতিহ্যনগরী।

জানা গেছে, ঐতিহাসিক আহমেদাবাদ থেকে সূর্যাস্তের ম্লান আলোয় তাজমহল দেখতেই বেশি আগ্রহী ট্রাম্প-পত্নী। আহমেদাবাদে পা ছুঁইয়েই নাকি বিমানে চেপে সোজা তাজমহলে পৌঁছে যেতে চান মেলানিয়া। তাই আহমেদাবাদে ট্রাম্প-দম্পতির সফরের সময় কাটছাঁট করা হতে পারে বলেও শোনা যাচ্ছে।

‘আহমেদাবাদ ৬০০, পোট্রেটস অব দ্য সিটি’র সহ-কর্ণধার, শিল্পী শর্মিলা সাগরা বলেছেন, মেলানিয়ার মন ভরাতে কোনো ত্রুটি রাখবে না আহমেদাবাদ। ভারতের ইতিহাস ৬০০ বছরের এই ঐতিহ্য, স্থাপত্য-ভাস্কর্য মেলানিয়াকে ভারতের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করাবে।

ট্রাম্পের আমদাবাদ সফর, ‘নমস্তে ট্রাম্প’ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। বিমানবন্দর থেকে মোতেরা স্টেডিয়াম পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার পথ সেজে উঠেছে নানা রঙিন পোস্টার-হোর্ডিংয়ে। পিঠে ট্রাম্প-মোদির রঙিন ট্যাটু এঁকে তৈরি তরুণীরাও।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের থেকে ফার্স্ট লেডিকে দেখতেই বেশি উৎসাহী আমদাবাদিরা, বলেছেন শিল্পী শর্মিলা সাগরা। মেলানিয়াকে সামনে থেকে দেখতে সোমবার হাতে কোনো কাজ রাখতে চান না কেশিবেন বালাভাই সারানিয়া। তার কথায়, ‘শুনেছি মেলানিয়া খুব সুন্দরী। তাকে দেখারই ইচ্ছা আছে। তবে জানি না এত ভিড়ে কাছাকাছি পৌঁছতে পারব কি না।’

জাফর খান ওরফে প্রথম মজফফর শাহের নাতি প্রথম আহমেদ শাহ ১৪১১ সালে সবরমতী নদীর তীরে আহমেদাবাদ শহরের প্রতিষ্টা করেন। আহমেদাবাদকে তিনি উপাধি দিয়েছিলেন ‘শহর-ই-মুয়াজ্জাম’ অর্থাৎ মহান শহর। স্থানীয়রা অবশ্য আহমেদাবাদকে ‘আমদাবাদ’ বলতেই অভ্যস্ত।

ট্রাম্প-মেলানিয়ার সফরের দুদিন পরেই আহমেদাবাদের ৬০৯তম জন্মদিন। দিল্লি-মুম্বাইকে পেছনে ফেলে ভারতের প্রথম হেরিটেজ শহরের মর্যাদা পেয়েছে আহমেদাবাদ। প্রাচীন এই শহর মহাত্মা গাঁন্ধীর স্বাধীনতা সংগ্রামের নিদর্শন বহন করছে। এখানে ৩৬টির বেশি ঐতিহ্যশালী স্থাপত্য রয়েছে। এছাড়া এই শহরে রয়েছে কয়েক শ পুরোনো স্তম্ভ।

বহু হিন্দু এবং জৈন মন্দিরের পাশাপাশি ইন্দো-ইসলামিক স্থাপত্য বা হিন্দু-মুসলিম শিল্পের অবস্থান আদতে এই শহরের ঐক্য ও সম্প্রীতির বার্তা বহন করে আহমেদাবাদ।

শর্মিলা বলেন, ‘এই শহরের উৎসবই দেখেননি মেলানিয়া। তাজমহলের চর্চা যতটা বিশ্বমানের, আহমেদাবাদের সংস্কৃতি তার আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে। বার্ষিক ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসব ‘উত্তরায়ণ’, নবরাত্রির ‘গরবা নাচ’, দিওয়ালির রঙ্গোলি কেমন হয়-সব বলা হবে মেলানিয়াকে।’

আহমেদাবাদে নিরামিষের প্রচলন বেশি হলেও হতাশ হবেন না মেলানিয়া,’ -বলেছেন শর্মিনা। এ বিষয়ে তার বক্তব্য, ‘এখানকার জৈন-কুইসিন বিখ্যাত। মানেক চকের বিখ্যাত স্ট্রিটফুড মাখন, চিজ আর আনারসের স্যান্ডউইচের তুলনা হয় না। মেলানিয়া ফ্যাশন সচেতন। তাই তার জন্য আহমেদাবাদিরা সাজিয়ে রেখেছে ঝারোখা ও আশাবলী শাড়ি।’

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভারতীয় বংশোদ্ভূত (বিশেষ করে গুজরাটি) ভোট ব্যাংকের কথা মাথায় রাখছে ট্রাম্প শিবির। ভারতে এসে আহমেদাবাদে গিয়ে মোদিকে পাশে নিয়ে সম্প্রীতির বার্তা দেয়াটা ট্রাম্পের ভোট-রাজনীতির অংশ হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

জানা গেছে, আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে ইন্দিরা সেতু পর্যন্ত অর্ধ কিলোমিটার রাস্তার দুপাশে ছয়-সাত ফুট উঁচু প্রাচীর বানানো হবে। যাতে রাস্তার পাশে বস্তি ও ঝুঁপড়ি মার্কিন প্রেসিডেন্টের ‘দৃশ্য দূষণ’ না ঘটাতে পারে!

বস্তি-আড়াল, দেয়াল রঙ ইত্যাদি সবমিলিয়ে আহমেদাবাদের সৌন্দর্য বর্ধনে খরচ হতে পারে প্রায় ১০০ কোটি। তবে শর্মিলা বলছেন, কৃত্রিম সৌন্দর্য বর্ধনের চাকচিক্যে আহমেদাবাদের আসল রূপ ঢাকা পড়ে গেলে, সেটা ভারতের সংস্কৃতির জন্য মোটেও গর্বের ব্যাপার হবে না।

এসএইচ-১৭/২৩/২০ (অনলাইন ডেস্ক)