ছাত্রীকে ‘কুপ্রস্তাব’ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের!

ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে। ছাত্রীর অভিযোগ, কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তিনি ওই ছাত্রীকে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দিয়েছেন। ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে একদিকে যেমন ছাত্রীটি লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন তেমনই আবার বিভাগের অন্যান্য ছাত্রছাত্রীরাও একই অভিযোগ জানিয়েছে ভারতের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে। শুধু তাই নয়, মঙ্গলবার ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভও দেখায়।

এর আগে গত নভেম্বর মাসে বিশ্ববিদ্যালয়েরই মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের এক ছাত্রী শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলেছিল ওই বিভাগেরই এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। যা নিয়ে দীর্ঘ আন্দোলন হয়। ছাত্র আন্দোলনের চাপে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তিন মাস পরে ফের একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফিজিক্সের অধ্যাপক পঞ্চাশোর্ধ পরেশবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি কিছুদিন আগে চতুর্থ সেমিস্টারের এক ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দিয়েছিলেন। ছাত্রীটি রাজি না হওয়ায় পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেন ওই শিক্ষক।

সম্প্রতি পরীক্ষার ফল বেরনোর পর দেখা যায়, শুধুমাত্র ওই শিক্ষকের দেখা পেপারেই ফেল করেছেন ছাত্রী। প্রথমে ছাত্রীটি ভয়ে মুখ খুলতে পারেননি। পরে ক্লাসের বন্ধুদের কাছে সমস্ত বিষয়টি জানায়। তারপর বন্ধুরা মিলে প্রথমে বিভাগীয় প্রধান ও পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দাখিল করে। শুরু হয়ে যায় ছাত্র আন্দোলনও। এদিন ন্যায়বিচারের দাবিতে ওই বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান বিক্ষোভও শুরু করে দেয়। অন্যান্য বিভাগের ছাত্রছাত্রীরাও পরে এতে যোগ দেন। অভিযুক্ত শিক্ষককে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানাতে থাকেন তারা।

মূলত ডিএসওর নেতৃত্বেই ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলনে নেমেছেন। ডিএসও নেতা তাপস জানা বলেছেন, একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয়ে এধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে। যা অত্যন্ত লজ্জার। তিন মাস আগে এধরনের ঘটনা ঘটলেও তদন্ত রিপোর্ট বেরোয়নি। ফলে এক শ্রেণির শিক্ষকরা সমস্ত ন্যায়নীতি বিসর্জন দিয়ে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করে চলেছেন।

এদিকে, অভিযুক্ত শিক্ষকের চরম শাস্তির দাবি জানিয়েছে এবিভিপিও। জেলা এবিভিপি সভাপতি স্বরূপ মাইতি বলেছেন, ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। এখনই কড়া হাতে এসব দমন না করতে পারলে ছাত্রছাত্রীরা ন্যায়বিচার পাবে না।

এদিকে, বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাল কমপ্ল্যান্ট কমিটি। ইউজিসির নিয়ম অনুসারে মহিলাদের যৌন নির্যাতন সংক্রান্ত অভিযোগ তদন্ত করে এই কমিটি। অভিযুক্ত শিক্ষক পরেশবাবুকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করেন কমিটির সদস্যরা। পরেশবাবু বলেছেন, চক্রান্ত করে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। প্রায় এক সপ্তাহ আগে ক্লাসে কিছু বলতে না পারার জন্য ডিএসওর একটি মেয়েকে বকাবকি করেছিলাম। সেই নেতৃত্ব দিয়ে অপর এক ছাত্রীকে দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করিয়েছে।

পরেশবাবুর কথায়, ২৮ বছরের চাকুরীজীবনে নানান জায়গায় কাজ করেছেন। এর আগে তমলুক কলেজের অধ্যক্ষও ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২ বছর ধরে চাকরি করছেন। কোনওদিন এধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হননি। তিনি বলেছেন, প্রতিহিংসাবশত ফেল করানোর কোনও প্রবণতা নেই। নম্বর কম পেলে রিভিউয়ের ব্যবস্থা আছে।

ছাত্রছাত্রীরা যে কেউ চাইলে তার সুযোগ নিতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার জয়ন্ত কিশোর নন্দী বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি ইন্টারন্যাল কমপ্ল্যান্ট কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে। তারাও তদন্ত করে দেখছেন।

এসএইচ-১৪/২৬/২০ (অনলাইন ডেস্ক)