হাসপাতালে নগ্ন হয়ে ঘুরছেন

প্রথমে সতর্কবার্তা অগ্রাহ্য করে বড়সড় জমায়েত। এবার খুঁজে বার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে অশ্লীল ব্যবহার। দিল্লির গাজিয়াবাদের হাসপাতালে নগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তাবলিগ জামাতের সদস্যরা এবং নার্সদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করছেন।

শুক্রবার পুলিশের কাছে এ অভিযোগ দায়ের করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাবলিগ-ফেরত লোকজনকে যে সব জায়গায় কোয়রান্টিনে রাখা হয়েছে, সেখানে পুলিশ মোতায়েন করার নির্দেশ দিল উত্তরপ্রদেশ সরকার।

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইন (এনএসএ) প্রয়োগ করার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।

মার্চের মাঝামাঝি দিল্লির মরকজ নিজামউদ্দিনে তাবলিগ জামাতের যে ধর্মীয় সমাবেশ হয়েছিল, তা এখন করোনা আতঙ্কের অন্যতম ভরকেন্দ্র হয়ে উঠেছে। মরকজ থেকে যারা বিভিন্ন রাজ্যে ফিরে গিয়েছেন, তাদের অনেকের মধ্যেই করোনার উপসর্গ দেখা গিয়েছে। ইতিমধ্যেই ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তাবলিগ-ফেরতদের খুঁজে বার করে কোয়ারেন্টিনে পাঠাতে রাজ্য সরকারগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। আর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে খালি করে দেওয়া হয়েছে মরকজ নিজামুদ্দিন।

উত্তরপ্রদেশের দিল্লি লাগোয়া শহর গাজিয়াবাদে ১৩৬ জন মরকজ-ফেরত তাবলিগিকে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। তাদের মধ্যে ৬ জনের শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা গিয়েছে। তাদের গাজিয়াবাদের এমএমজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু হাসপাতালে ওই তাবলিগিরা অত্যন্ত আপত্তিকর আচরণ করছেন এবং চিকিৎসায় অসহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এমএমজি হাসপাতালের মুখ্য স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রবীন্দ্র সিংহ পুলিশকে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন যে, ওই তাবলিগিরা জামাকাপড় পরছেন না, নগ্ন অবস্থায় আইসোলেশন ওয়ার্ডে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। নার্সদের দেখলে অশালীন মন্তব্য করছেন। স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছ থেকে বিড়ি বা সিগারেট চাইছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩১ মার্চ ওই তাবলিগিদের ভর্তি করা হয়েছিল। শুরু থেকেই নার্স এবং অন্য কর্মীরা অসহযোগিতার অভিযোগ করছিলেন। পরে মুখ্য স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রবীন্দ্র সিংহ নিজেও ওই রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন বলে খবর। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। নার্সদের সঙ্গে অশ্লীল আচরণ করা হয়েছে, তাদের উপরে ‘অপরাধমূলক বলপ্রয়োগ’ হয়েছে এবং এমন আচরণ করা হয়েছে যাতে নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে যেতে পারে— পুলিশকে এমনই জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

মরকজ-ফেরত তাবলিগিদের বিরুদ্ধে এর আগেও অভিযোগ উঠেছে। যে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন, তাদের গায়ে থুতু ছেটানোর অভিযোগ সামনে এসেছিল প্রথমে। এবার হাসপাতালে নগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়ানো এবং নার্সদের সঙ্গে অশ্লীল আচরণের অভিযোগ উঠল।

উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন, তারা আইন-শৃঙ্খলা মানবে না। তারা মানবতার শত্রু। মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে ওরা যা করেছে, তা জঘন্য অপরাধ।

মধ্যপ্রদেশের ইনদওরে চিকিৎসকদের উপরে আক্রমণের যে ঘটনা ঘটেছে, তা যেন উত্তরপ্রদেশের কোথাও দেখা না যায়— নিজের প্রশাসনকে নির্দেশ আদিত্যনাথের।

এমএমজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মরকজ-ফেরতদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর অবস্থান নিচ্ছে যোগী আদিত্যনাথের প্রশাসন। তাদের বিরুদ্ধে এনএসএ প্রয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই আইনে এক বছর পর্যন্ত বিনা বিচারে আটকে রাখা যায়। শুধু গাজিয়াবাদের হাসপাতালে থাকা মরকজ-ফেরতদের বিরুদ্ধে নয়, লকডাউন চলাকালীন পুলিশ বা স্বাস্থ্যকর্মীদের যারা আক্রমণ করবেন, তাদের সকলের বিরুদ্ধেই ওই আইন প্রয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন।

এসএইচ-১৭/০৩/২০ (অনলাইন ডেস্ক)