এক সময় মানুষের প্রয়োজনে বন-বাদারের দুরন্ত জীবন ছেড়ে ইট-পাথরের শহরে এসেছিল যে বন্ধু, আজ তাকেই দিব্যি ভুলে আছে মানুষ। বলছি পুরান ঢাকার ঐতিহ্য বানরের কথা। ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষায় আজ থেকে শত বছর আগে গেন্ডারিয়া এলাকায় বানর নিয়ে আসে সাধনা ঔষধালয় কর্তৃপক্ষ।
প্রথম দিকে তাদের যত্নআত্মি হলেও আজ অসহায়-অনাদরে, ধুকে-ধুকে দুঃসহ জীবন পার করছে। এ যেন শৈশবের দুরন্তপনা। বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। অবাধ স্বাধীনতা। যেখানে সেখানে যত্রতত্র ছুটে বেড়ানো। মনের খুশিতে দৌঁড়-ঝাপ। লম্ফ-ঝম্ফ।
দেখে এক চিলতে চিয়াড়াখানা মনে হলেও এখানে নেই কোনো শৃঙ্খল। নেই কোনো বাঁধন। আছে মাথা গোঁজার একটু ঠাঁই। আর তাতেই পরিবার-পরিজন নিয়ে কেটে যাচ্ছে জীবন।
এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘পুরান ঢাকার ঐতিহ্য পুরাতন সংকৃতি। সেই সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে বানর।’
ইট-পাথরের এই নগরে বানরের পা পড়ে আজ থেকে শত বছর আগে। ১৯১৪ সালে সাধনা ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা চিকিৎসক যোগেশ চন্দ্র ঘোষ ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষায় বনর নিয়ে আসেন। সেই থেকে গেন্ডারিয়ার নিকেতন রোডে গড়ে ওঠে তাদের আবাস। বানরের বসবাসের জন্য একটি ঘরও উন্মুক্ত করে দেন ডাক্তার যোগেশ। পাশাপাশি নিয়মমাফিক দেয়া হতো খাবার।
কালের পরিক্রমায় পুরান ঢাকার বানর রূপ নিয়েছে ঐতিহ্যে, পক্ষান্তরে ক্রমাগতভাবে কমেছে যত্ন-আত্মি। মাঝে মাঝে দু’একটি সংগঠন খাবার নিয়ে এগিয়ে এলেও অধিকাংশ সময়ই থাকতে হয় খালি পেটে-মলিন মুখে। জীর্ণশীর্ণ শরীরে কোনো মতে টিকে থাকলেও প্রতিবছর কমছে বানরের সংখ্যা।
পুরান ঢাকায় ‘রেসাস ম্যাকাক’ প্রজাতির এই বানর ক’বছর আগে সংখ্যায় ৪০০টির মতো দেখা গেলেও বর্তমানে সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০০টি।
এসএইচ-১৫/১৪/২০ (অনলাইন ডেস্ক)