ভারতের রাঁচি অঞ্চলের আদিবাসী এবং সমাজ সংস্কারক বিরসা মুন্ডা। ১৮৭৫ সালে জন্ম নেওয়া এই ভারতীয় তৎকালীন ব্রিটিশ শাসকদের অত্যাচার-অবিচারে ক্ষুব্ধ হয়ে অন্যান্য আদিবাসীদের সংগঠিত করে মুন্ডা বিদ্রোহের সূচনা করেন। ১৯০০ সালের ৯ জুন মৃত্যু হয় এই সংগ্রামীর। যাদের সঙ্গে নিয়ে বিরসা বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন, তাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তিনি ‘বিরসা ভগবান’ নামে পরিচিত।
গত রোববার ছিল এই ভারতীয়র জন্মদিন। তার আগে গত ৫ নভেম্বর পশ্চিম বাংলার বাঁকুড়ার পুয়াবাগানে একটি মূর্তিকে বিরসা মুন্ডার মূর্তি দাবি করে তাতে শ্রদ্ধা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এ নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। স্থানীয়দের দাবি, ওই মূর্তি বিরসার মুন্ডার নয়, বরং এক আদিবাসী শিকারির।
অমিত শাহর শ্রদ্ধা জানানো মূর্তিটিকে আদিবাসী শিকারির মূর্তি দাবি করে গত ৬ নভেম্বর রাস্তায় নামে তৃণমূল। অমিত শাহর ছোঁয়া লাগা মূর্তির শুদ্ধকরণও করে দলটি। ঘটনা বিতর্কে মোড় নেয় বিরসা মুন্ডার জন্মদিনে। ১৫ নভেম্বর ওই মূর্তির সামনে এসে সেটিকে বিরসা মুন্ডারই মূর্তি বলে দাবি করেন বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার। মূর্তিটির পুনঃশুদ্ধকরণও করেন তিনি।
গত সোমবার আদিবাসী সমাজের একাংশকে নিয়ে পুয়াবাগানে হাজির হয়ে ওই এলাকায় বিরসার সুবিশাল মূর্তি স্থাপনের কথা ঘোষণা করে তৃণমূল। এখানেই শেষ নয়, আগুনে কেরোসিন ঢালার কাজ করেছেন পশ্চিম বাংলা বিজেপির রাজ্য সভাপতি। তিনি বলেছেন, ‘দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মালা পরিয়ে যখন বলেছেন এটা বিরসা মুন্ডার মূর্তি, তখন আজ থেকে ওটাকেই বিরসা মুন্ডার মূর্তি বলে মেনে নিতে হবে।’
এরপর থেকেই জোরেসোরে নিন্দার সাগর বইয়েছেন পুয়াবাগানের স্থানীয় আদিবাসীরা। সমালোচনা, নিন্দা জানানোর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়ে আদিবাসী সমাজের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার চিঠিও পাঠানো হচ্ছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস তাদের এক প্রতিবেদনে বলছে, গতকাল মঙ্গলবার বাঁকুড়া জেলা তৃণমূল সভাপতি ও রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা জানিয়েছেন; জেলার আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার ছেলেমেয়েরা চিঠিগুলো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ির ঠিকানায় পাঠাচ্ছে।
এদিকে, রাজ্য বিজেপি দাবি করছে, চিঠি পাঠানোর ছক আসলে তৃণমূলেরই করা। অমিত শাহকে প্রকাশ্য ক্ষমা চাইতে হবে দাবি করে যে চিঠি লেখা হচ্ছে বলা হচ্ছে, তা ‘ভাঁওতাবাজি’।
আদিবাসী সমাজের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন তৃণমূল, তাই তারা এখন ভগবান বিরসা মুন্ডাকে নিয়ে রাজনীতি করছে বলে দাবি করেছেন রাজ্য বিজেপির জেলা যুব মোর্চা সভাপতি সুনীল রুদ্র মণ্ডল।
এসএইচ-১৮/১৮/২০ (অনলাইন ডেস্ক)