স্বাস্থ্য সুরক্ষা, পশু কল্যাণ এবং পরিবেশ দুষণ নিয়ে সারা বিশ্বে উদ্বেগ বাড়ছে। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে ‘নিরাপদ মাংস’র চাহিদাও। সম্প্রতি আমেরিকার ‘ইট জাস্ট’ নামে এক স্টার্ট আপ সংস্থা গবেষণাগারে তৈরি নিরাপদ মুরগির মাংস বিক্রির জন্য অনুমতি চেয়েছিল সিঙ্গাপুর সরকারের কাছে। সম্প্রতি সেই অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ফলে বিশ্বে প্রথমবার বিক্রি হতে চলেছে কৃত্রিম মাংস।
কিছুদিন আগে ‘বিয়ন্ড মিট ইনকর্পোরেটেড’ এবং ‘ইমপসবল ফুডস’ নামে দু’টি সংস্থা উদ্ভিজ্জ প্রোটিন থেকে মাংস তৈরি করেছিল। ক্রেতাদের মধ্যে ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে সেই উদ্ভিজ্জ মাংস। কিন্তু ‘ইট জাস্ট’ সংস্থাটি পশুর মাংসপেশী থেকে গবেষণাগারে মাংস তৈরি করেছে। একসময় শোনা গিয়েছিল, এভাবে মাংস তৈরির খরচ যথেষ্ট বেশি। তা বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা সম্ভব নয়।
কিন্তু বুধবার ‘ইট জাস্ট’ সংস্থাটি বলেছে, তারা মুরগির কোষ থেকে মাংস তৈরি করেছে। আপাতত ওই মাংস অল্প পরিমাণে সিঙ্গাপুরের বাজারে বিক্রি হবে। চিকেন নাগেট হিসাবে বিক্রি হবে সেই মাংস। তার প্রতিটির দাম হবে ৫০ ডলার।
‘ইট জাস্ট’-এর সিইও জোস টেটরিক বলেন, খুব শিগগিরই গবেষণাগারে তৈরি মাংসের দাম কমে আসবে। দাম কমে ঠিক কত হবে তিনি জানাননি। তবে বলেছেন, খুব শিগগিরই সিঙ্গাপুরে কৃত্রিম মাংসের রেস্তোরাঁ খোলার পরিকল্পনা আছে তাদের। তারা আশা করছেন, ২০২১ সালের মধ্যেই সিঙ্গাপুরে কৃত্রিম মাংস লাভজনক হয়ে উঠবে।
সিঙ্গাপুর ফুড এজেন্সি বলছে, ইট জাস্ট যেভাবে এই কৃত্রিম মুরগীর মাংস তৈরি করেছে একদল বিশেষজ্ঞ তা যাচাই করে দেখেছে। বিবৃতিতে বলেন, ল্যাবে তৈরি মুরগির মাংস খাওয়ার জন্য উপযুক্ত বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। সে জন্যেই সিঙ্গাপুরে একে চিকেন নাগেট হিসেবে বিক্রি করতে ইট জাস্টকে অনুমতি দেয়া হয়েছে।
এই মুরগীর মাংসে কোর ধরনের অ্যান্টিবাইয়টিকের উপস্থিতি নেই এবং সাধারণ মুরগীর চেয়ে এই মাংসে জীবাণুর উপস্থিতিও কম বলে ইট জাস্ট দাবি করছে।
সারা বিশ্বে এখন দুইডজন কোম্পানি গবেষণাগারে মাছ, গোমাংস ও মুরগির মাংস তৈরির চেষ্টা করছে। পর্যবেক্ষকদের মতে ‘অলটারনেটিভ মিট’-এর বাজার আছে বিশ্ব জুড়ে। ২০২৯ সালে সেই বাজারে ১৪ হাজার কোটি ডলারের কৃত্রিম মাংস বিক্রি হবে।
ইতোমধ্যে আমেরিকা ও ইউরোপের সুপারমার্কেটগুলোতে ভাল পরিমাণে বিক্রি হচ্ছে উদ্ভিজ্জ মাংস। ওয়াল স্ট্রিটের বিনিয়োগকারীরা অলটারনেটিভ মিট কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ করেছেন। জেপি মর্গান চেজ-এর মতে, আগামী ১৫ বছরের মধ্যে উদ্ভিজ্জ মাংসের বাজারের পরিমাণ দাঁড়াবে ১০ হাজার কোটি ডলার।
বড় রেস্তোরাঁ চেইনগুলোর মধ্যে বার্গার কিং গত এপ্রিল থেকে উদ্ভিজ্জ মাংস বিক্রি করছে। জার্মানিতে মাংসহীন বার্গার বিক্রি করছে ম্যাকডোনাল্ড। কেন্টাকি ফ্রায়েড চিকেনও উদ্ভিজ্জ মাংস ব্যবহার করা যায় কিনা ভেবে দেখছে।
এসএইচ-১৬/০৩/২০ (অনলাইন ডেস্ক)