বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা জাতি খাটো হচ্ছে

নেদারল্যান্ডসের বাসিন্দারা বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা মানুষ হলেও আস্তে আস্তে তাদের উচ্চতা খর্ব হয়ে যাচ্ছে। দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান বিভাগ এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সর্বশেষ উপাত্ত বলছে, ২০২০ সালে ১৯ বছর বয়সী তরুণদের গড় উচ্চতা ছিল ছয় ফুট, আর নারীরা পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি।

১৯ থেকে ৬০ বছর বয়সী সাত লাখ ২০ হাজার মানুষের ওপর জরিপ চালিয়ে দেশটির সেন্ট্রাল ব্যুরো ভুর ডি স্ট্যাটিসটিক (সিবিএস) বলছে, ১৯৮০ সালে জন্ম নেওয়া প্রজন্মের তুলনায় ২০০১ সালের পুরুষ ওলন্দাজরা এক সেন্টিমিটার, আর নারীরা এক দশমিক চার সেন্টিমিটার খাটো।

কেবল অন্য দেশ থেকে লোকজন নেদারল্যান্ডসে আসার জন্যই এই পরিসংখ্যান পরিবর্তন হচ্ছে না। এতে মানুষের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের বিষয়টিও জড়িত। সিবিএস বলছে, নতুন জনসংখ্যানে মধ্যে আভিবাসী বেড়ে যাওয়ায় ও তাদের থেকে জন্ম নেওয়া নতুন প্রজন্মের কারণে উচ্চতার গড়ে কিছুটা সংকোচন এসেছে।

কিন্তু নেদারল্যান্ডসে জন্ম নেওয়া একটি প্রজন্মের উচ্চতাও কমেছে। অথচ তাদের বাবা-মায়েরা এই দেশটিতেই জন্ম নিয়েছেন। এমনকী যাদের দাদা-দাদিরাও নেদারল্যান্ডসে জন্মেছেন, তাদের মধ্যে উচ্চতার ঘাটতি দেখা গেছে। অভিবাসন ছাড়া পুরুষরাও যেমন লম্বা হচ্ছেন না, তেমনি নারীরাও।

গ্রোনিজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচরণগত ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডা. গাট স্টুলপ বলেন, এ নিয়ে এখন পর্যন্ত যেসব তত্ত্ব পাওয়া যাচ্ছে, তার অধিকাংশই কল্পনাপ্রসূত। কিন্তু দেশটির মানুষের লম্বায় কমে যাওয়া ২০০৭ সালের অর্থনৈতিক সংকট কোনো ভূমিকা রাখছে কিনা; তা নিয়ে জানতে চেষ্টা করছেন তিনি।

তিনি বলেন, অর্থনৈতিক সংকটের মতো বিষয়গুলোতে পূর্বপুরুষদের তুলনায় শিশুরা দরিদ্র অবস্থায় বেড়ে ওঠেছে। কিংবা সম্ভবত বৈষম্য বেড়ে গেছে। আমরা জানি, বৈষম্য গড় উচ্চতায় প্রভাব রাখে। শৈশবের দরিদ্র অবস্থা শারীরিক বৃদ্ধি সরাসরি কমিয়ে দেয়।

যুক্তরাষ্ট্রেও একই ধরনের প্রবণতা দেখা গেছে। গাট স্টুলপ বলেন, এতে মনে হচ্ছে, অতিমাত্রায় ফার্স্ট ফুড খাওয়াও মানুষের উচ্চতা কমায় ভূমিকা রাখতে পারে। মানুষের খাদ্যাভ্যাস সম্ভবত বদলে গেছে।

এই বিজ্ঞানী বলেন, গেল বছরগুলোতে খাদ্যাভ্যাসে বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি কম ছিল। যে কারণে আমেরিকানরা লম্বায় কমে যাচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে। বাজে খাদ্যাভ্যাস, অতিরিক্ত ক্যালরি কিন্তু পুষ্টি কম। এছাড়া লোকজন পশু থেকে উৎপাদিত পণ্যকে খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়ায় এমনটা ঘটতে পারে। কিন্তু এসব কথার পক্ষে যথেষ্ট কোনো প্রমাণ নেই।

ডা. গাট স্টুলপ বলেন, মানুষ কতটা বেড়ে উঠতে পারে তা নিয়ে মানসিক সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। মানুষ গড়ে তিন মিটার উচ্চতায় লম্বা হচ্ছে না।

এক শতাব্দি আগে বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা মানুষেরা উত্তর ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় বসবাস করতেন। বিংশ শতাব্দির প্রথম অর্ধেকে ওলন্দাজরা এতটা লম্বা হতে শুরু করেনি। ১৯৩০ সালে জন্ম নেওয়া ডাচ পুরুষদের গড় উচ্চতা ছিল পাঁচ ফুট ৯ ইঞ্চি। কিন্তু ১৯৮০ সালে যারা জন্ম নিয়েছেন, তাদের গড় উচ্চতা ছয় ফুট ছুঁয়েছে। অর্থাৎ পঞ্চাশ বছরে তাদের উচ্চতা আট দশমিক তিন সেন্টিমিটার বেড়েছে।

১৯৩০ সালে ওলন্দাজা নারীদের গড় উচ্চতা ছিল পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি। কিন্তু ১৯৮০ সালে তা পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চিতে পৌঁছায়। এ সময়ে তাদের উচ্চতা বেড়েছে পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি।

এসএইচ-১৮/১৯/২১ (অনলাইন ডেস্ক)