যেখানে মিথ্যা বলতে হয়

গত ২৩ বছরে বহু হিসাব পাল্টে দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে পোক্ত করেছে তৈরি পোশাক খাত।

কিন্তু শত চেষ্টা করেও এ খাতের উদ্যোক্তারা বাড়াতে পারেননি কাঁচামাল অপচয়ের হার। ১৯৯৮ সালে নির্ধারণ করা হার নিয়েই রপ্তানি বাণিজ্য করতে হচ্ছে তাদের।

এক্ষেত্রে অনেকটা বাধ্য হয়ে ‘অধিক সচেতন’ হিসাব দিচ্ছেন তারা। অপচয়ের হার বাড়ানোর পক্ষে রাজস্ব বোর্ডও। অপেক্ষা শুধু বাণিজ্য মন্ত্রণায়ের সিদ্ধান্তের। এ অবস্থায় এ সমস্যা সমাধানের পরামর্শ এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যানের ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ।

ফতুল্লা অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে শামীম এহসান বলেন, আমি তো শতভাগ এক্সপোর্ট করতে চাই। তা করতে পারলে আমার লাখ লাখ টাকা বেশি লাভ হবে। সেখানে থেকে তাকে লাখ টাকা দিয়ে দিবো। সে এসে আমার ইফিসিয়েন্সি বাড়িয়ে দিয়ে যাক।

রপ্তানিমুখী নিট পোশাক শিল্পের অপচয় হিসাবের যৌক্তিক পরিমাণ নির্ধারণ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এভাবেই চ্যালেঞ্জ করেন এ উদ্যোক্তা।

তিনি এমন ভ্যালু অ্যাডেড পোশাকের রপ্তানি আদেশ পেয়েছেন, যা তৈরিতে সর্বোচ্চ দক্ষতার সফটওয়্যার ব্যবহার করে বিভিন্ন পার্ট কাটতে গেলেও তার অপচয় হচ্ছে ১০ শতাংশের বেশি। পণ্য চূড়ান্ত হওয়া পর্যন্ত আরও কয়েক ধাপে যোগ হবে বিভিন্ন হারে অপচয়।

আরেকটি কাটিং টেবিলে দেখা গেল ডিজাইন অনুযায়ী শুধু কাটতে গেলেই অপচয় হবে ২৫ শতাংশের বেশি। কিন্তু নির্ধারিত হারের বেশি অপচয় অনুমোদনের এখতিয়ার নেই বন্ড কমিশনারেটের। তাই হিসাব দিতে গিয়ে কখনও কখনও কৌশলী হতে হয় তাদের।

ফতুল্লা অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে শামীম এহসান আরও বলেন, যেটা বাস্তব যেটা বেস্ট আর যেটা সম্ভব আপনি (বাণিজ্য মন্ত্রণালয়) আমাকে সেটাই দেন সেটাকে রিচ (কাজ) করি। তবে অবাস্তব কোনো কিছু দিয়েন না যে, আমাকে আপনার কাছে মিথ্যা কথা বলতে হয়।

এক্ষেত্রে বন্ড কমিশনারেটের হাত-পা আবার বেঁধে রেখেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সুতা থেকে কাপড় প্রস্তুতিতে ৭ শতাংশ আর কাপড় থেকে পোশাক পর্যন্ত ৯ শতাংশ অর্থাৎ মোট ১৬ শতাংশ অপচয় আমলে নিতে পারবে রাজস্ব বোর্ড। অপচয়ের এই হিসাব জটিলতায় সরকারই লোকসানে পড়ছে বলে দাবি শিল্প মালিকদের।

বিজিএমইএয়ের সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজীম বলেন, আমরা ভিডিও দেখিয়ে ধাপে ধাপে বোঝানো হয়েছে। আমাদের লসের (ক্ষতির) পরিমাণটা বোঝানো হয়েছে। আমাদের অনেক শর্ট হবে, সেখানে দেশও লাভবান হবে না, আমরাও লাভবান হবো না।

সরেজমিন পরিদর্শন ও তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে অবশেষে গত মাসে অপচয়ের হার বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি। তবে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এদিকে, সততার সঙ্গে এই হিসাব দ্রুত সংস্কার করা দরকার বলে মনে করেন এনবিআরের সাবেক এ চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ।

বলেন, অনেকদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে একটা রেট ঠিক করা আছে, কিন্তু এটা অনড় থাকা ঠিক না। এ জন্য বলছি উভয়পক্ষ আন্তরিক-সহযোগিতাপূর্ণ হওয়া দরকার নিজেদের স্বার্থে। আইন মানার ক্ষেত্রে, এর হচ্ছে আইনের আশ্রয় পাওয়ার ক্ষেত্রে, সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে।

ব্যবসায়ীদের দাবি, বর্তমানে নিট শিল্পে কাঁচামালের অপচয় ৩৮ থেকে ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত হয়।

এসএইচ-০৬/২৫/২১ (অনলাইন ডেস্ক)