বুকে হাতি তুলেছিলেন যে পালোয়ান!

কলকাতার কয়েকজন নামজাদা পালোয়ানকে কুপোকাত করে সবার নজর কেড়ে নেয় এক কিশোর। যিনি পরবর্তীতে স্বাস্থ্য-সচেতন যুবকদের রোল মডেল হিসেবে জায়গা করে নিয়েছিলেন।

পরিচিতি পেয়েছিলেন ভীম ভবানী নামে। ভীম ভবানীর পুরো নাম ছিল ভবেন্দ্রমোহন সাহা। তিনি ছিলেন ভারতীয় কুস্তিগীর এবং ভারোত্তলক।

কুস্তিগীর বা পালোয়ান হিসেবে ভীম ভবানীর ছিল অভাবনীয় সব কৃতিত্ব। ভবেন্দ্র দুটি চলন্ত মোটরগাড়ি তার দুই হাত দিয়ে থামিয়ে দিতে পারতেন। সিমেন্টের পিপের ওপর ৫-৭ জন লোক বসিয়ে পিপের ধার দাঁতে চেপে শূণ্যে ঘোরাতেন। এছাড়াও বুকে ৪০ মণ পাথর চাপিয়ে তার ওপর ২০-২৫ জনকে বসিয়ে রাখতে পারতেন। এমনকি হাতিও তুলেছিলেন বুকের ওপর। তার দৈহিক শক্তিতে মুগ্ধ হয়ে তখনকার সময়ে জাপানের সম্রাট তাকে স্বর্ণপদক ও নগদ ৭৫০ টাকা পুরস্কারেও সম্মানিত করেছিলেন।

কিন্তু তার এই কুস্তিগীর বা পালোয়ানের যাত্রাটা শুরু হয়েছিল ভিন্ন ভাবে। কিশোর ভবেন্দ্র যখন ম্যালেরিয়ায় ভুগে দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন তখন তারই সমবয়সী এক ছেলের হাতে প্রচুর মার খেয়েছিলেন। সেই থেকে প্রবল অপমানিতবোধ নিয়ে ভবেন্দ্র দৈহিক শক্তি সঞ্চয়ের জন্য সচেষ্ট হয়ে উঠলেন। প্রথমে অতীন্দ্রকৃষ্ণ বসুর কাছে কুস্তি শিখলেন এরপর শিখেছেন ভারতপ্রসিদ্ধ কুস্তিগীর প্রফেসর রামমূর্তি নাইডুর কাছে। সার্কাসে কাজ করার জন্য মার কাছ থেকে অনুমতি না পাওয়ায় বাড়ি থেকে পালিয়ে রামমূর্তিকে গুরু পদে বরণ করে তার দলের সঙ্গে পাড়ি জমান রেঙ্গুনের উদ্দেশ্যে।

জাভায় এক ওলন্দাজ পালোয়ানকেও মাত্র তিন মিনিটের মধ্যে পরাজিত করেছিলেন ভবেন্দ্র। ভারতে ফিরে এসেও তিনি নানা জায়গায় তার শক্তি প্রদর্শন করেছিলেন। ভরতপুরের মহারাজের কথায় তিনি তিনটি চলন্ত মোটরগাড়ির পেছনে দড়ি বেধে সেই দড়ি আবার নিজের কোমরে বাধেন আর বাকি দুটি হাতে ধরে দাড়িয়ে ছিলেন। তার এই নৈপু্ণ্যতা মুগ্ধ করেছিল সকলকে। মুর্শিদাবাদের নবাব বাহাদুরকে খুশি করতে বুকের ওপর বুনো হাতিও তুলেছিলেন ভবেন্দ্র।

ভবেন্দ্রর এই ‘ভীম’ উপাধি আসে স্বদেশী মেলার সময় সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিপিনচন্দ্র পালের সামনে বীরত্ব প্রদর্শনের মাধ্যমে। অথচ ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে মাত্র ৩৩ বছর বয়সে নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন ভীম ভবানী।

এসএইচ-১৬/০৯/২২ (অনলাইন ডেস্ক)