এক পা হারিয়েও এভারেস্ট জয়

জীবনের প্রতি পদে কত রকমের সংকটের মুখোমুখিই তো হয়ে থাকে সবাই। কিন্তু সবাই সেই প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে পারে না। কিন্তু মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে এসে নিজের স্বপ্নকেই পূরণ করার মতো অদম্য শক্তি দেখিয়েছিলেন অরুনিমা সিনহা। অরুণিমা জনপ্রিয় পর্বতারোহী এবং জাতীয় ক্রীড়াবিদ। তার জন্ম ১৯৮৯ সালের ২০ জুলাই ভারতে। ২০১১ সাল।

চোখে আকাশ ছওয়ার স্বপ্ন আর কঠোর মনোবল নিয়ে নতুন চাকরির উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন অরুণিমা। কিন্তু কে জানত, তার জন্য অপেক্ষার করছে জীবনের সব থেকে খারাপ দিনটি।

লখনৌ থেকে দিল্লী শহরে যাচ্ছিলেন পদ্মাবতী এক্সপ্রেস ট্রেনে চড়ে, আনুমানিক রাত প্রায় ১ টার সময় কিছু দুর্বৃত্ত অপরাধী ট্রেনের কামরায় উঠে পড়ে আর তাকে একা দেখে তার গলায় থাকা সোনার চেইনটি ছিনিয়ে নিতে যায়।তিনি প্রতিবাদ করলে দুর্বৃত্তরা তাকে ট্রেনের দরজায় টেনে নিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলেদেন, সাথে সাথে অপর পাশের রেললাইনে ট্রেন চলে আসায় কিছু বুঝে ওটার পূর্বেই অরুণিমার বাম পা ট্রেনে কাঁটা পরে।

ট্রেনের ধাক্কায় তিনিও খুব আহত হয়ে পড়েন। এখানেই শেষ নয়, এই অবস্থায় তিনি সারারাত চিৎকার করে ছিলেন কারও সাহায্য পাওয়ার আসায় । সারা রাতে তার পাশদিয়ে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ টি ট্রেন চলে যায়। সকালে আশেপাশের গ্রামবাসীরা এগিয়ে আসেন তার সাহায্যে তাকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানো হয়, পরে দিল্লির উন্নত হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে তিনি প্রায় ৪ মাস ভর্তি ছিলেন। জাতীয় স্তরের ভলিবল খেলোয়াড়।
আরো পড়ুন: মঙ্গলের বুকেই হারাবার প্রস্তুতিতে এলিসা

মুহূর্তে জীবনে নেমে এসেছিল ঘোর অন্ধকার। যদিও লড়াইয়ের ময়দান থেকে সরে আসেননি। অস্ত্রোপচার করে নকল পা বসানোর পরেই অরুণিমা এভারেস্ট জয়ের সঙ্কল্প করেছিলেন। বহু লড়াইয়ের পর ২০১৩ সালের ২১ মে জয় করেছিলেন এভারেস্ট। প্রস্থেটিক পা নিয়ে তিনিই বিশ্বের প্রথম এভারেস্টজয়ী মহিলা। আর তার ছ’বছরের মধ্যেই সেই প্রস্থেটিক পা নিয়েই এখন মাউন্ট ভিনসনও জয় করে রেকর্ড করে ফেললেন অরুণিমা।

এভারেস্ট পর্বত জয়ের পরে অরুনিমা সিনহা তার লক্ষ্য নির্ধারণ করেন পৃথিবীর সবকটি মহাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতমালা গুলিকে বিজয় করার, 2019 সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে সর্বশেষ এন্টারটিকা মহাদেশের সর্বোচ্চ পর্বত ভিনসন স্তূপপর্বত জয়ের মাধ্যমে তিনি পৃথিবীর সাতটি মহাদেশের সব কটি সর্বোচ্চ পর্বত জয় করেন।

জাতীয় দলের খেলোয়াড় থাকা অবস্থায় ট্রেনে ভ্রমণকালে তার জীবনে ঘটে যাওয়া সব থেকে বড় ঘটনাটি ঘটেছিল, এই ঘটনার পরে তিনি তার জীবনকে যেভাবে পরিবর্তন করছেন এবং তার দৃঢ়তা এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে লক্ষ্যে পৌঁছে গিয়েছিলেন সেটি আধুনিক সমাজে এবং বিশ্বের কাছে খুব বড় একটি অনুপ্রেরণার বাস্তবিক কাহিনী হয়ে রয়েছে।

এসএইচ-১৪/১৩/২২ (অনলাইন ডেস্ক)