‘আকাশের টাইটানিকের’ পতন ঘটেছিল যেভাবে

৬ মে ১৯৩৭ সাল। সাধারণ দিনের মতোই সূর্য উঠে শুরু হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র নিউ জার্সির দিনটি। যে যার মতো কর্মব্যস্ততায় লেগে যায়। কয়েকদিন ধরে আবহাওয়া খারাপ থাকায় সূর্য অস্ত যাওয়ার পর তেমন কেউ অপ্রয়োজনে রাস্তায় ছিলেন না। ঘড়ির কাটায় সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিট।

ঠিক তখন হঠাৎ করে আকাশ হলুদ আলোয় উজ্জ্বল হয়ে উঠে। আলোর উৎস খুঁজতে উৎসুক মানুষ ঘরের বাইরে বেরিয়ে এল। কিন্তু এরপর তারা যা দেখল, তার জন্য কেউই মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিল না।

শহরের পূর্বদিকে অবস্থিত লেকহার্স্ট নৌ ঘাঁটি থেকে কিছুটা দূরে আকাশে ভাসমান এক আকাশযানের লেজের পাখায় দাউ দাউ করে জ্বলছিল অগ্নিশিখা। দমকা হাওয়ায় কয়েক সেকেন্ডেই আগুন লেজ থেকে মাঝ বরাবর ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলের কাছাকাছি থাকা মানুষজন শুনতে পাচ্ছিলেন অগ্নিশিখার ফুঁসে ওঠা আক্রোশ-ধ্বনি। পরক্ষণেই সেই আওয়াজ ছাপিয়ে ভেসে আসতে থাকে আকাশযানে আটকে পড়া যাত্রীদের আর্তচিৎকার। অনেকে প্রাণ বাঁচানোর উদ্দেশ্যে দরজা খুলে মাটিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

মাত্র ৩৪ সেকেন্ডের মাথায় পুরো জাহাজে আগুন ধরে যায়। নিউ জার্সির মাটিতে আঁছড়ে পড়ে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ যাত্রীবাহী আকাশযান ‘হিনডেনবার্গ’। ঘণ্টাখানেকের মাথায় পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে হিন্ডেনবার্গের করুণ পরিণতির কথা। প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক হার্বার্ট মরিসনের বর্ণনায় বেতারের সামনে বসে থাকা মানুষগুলোর চোখের সামনে ভেসে উঠে এক বীভৎস দুঃস্বপ্ন।

আশ্চর্যজনকভাবে এ বিমানের প্রথম উড়ানোর ৯৭ যাত্রীর মধ্যে মাত্র ৩৫ জন মারা যায়, বাকি ৬২ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান হয়, তারা সবাই বেঁচে যান। তবে এ হিন্ডেনবার্গ নামে হাইড্রোজেন চালিত এ বিমানকে আকাশের টাইটানিক বলা হয়ে থাকে, আর এর ঘটে যাওয়া ভয়ংকর দুর্ঘটনা আকাশের টাইটানিক ধ্বংসের ইতিহাস বলে পরিচিত। কারণ এ নাৎসি জার্মান বিমানের আকার ও তার সাথে ঘটে-যাওয়া দুর্ঘটনা টাইটানিক জাহাজের সাথে সত্যি কাকতালীয় অনেক মিল রয়েছে।

এ বিমানে প্রায় ৪০০ ডলার টিকিটের মাধ্যমে যাত্রীরা উপভোগ করতে পারতেন জাঁকজমকপূর্ণ যাত্রা। খাবার-দাবার থেকে শুরু করে শয়নকক্ষের আসবাবপত্রের মাঝেও যেন বিলাসিতার দাগ লেগে থাকতো। আর হিণ্ডেনবার্গের যাত্রা এতটাই আরামদায়ক হতো যে আকাশযান কখন ছেড়ে দিয়েছে তা অনেকে টেরই পেতো না। এর আগে অনেকেই ভারী বিমানে চড়ে আটলান্টিক পাড়ি জমিয়েছেন। কিন্তু হালকা আকাশযানে ভ্রমণ করার অনুভূতি ছিল সবকিছু থেকে আলাদা।

বিশাল আকার এ বিমানটি তৈরি করা হয়েছিল ১৯৩৬ সালে। আর এটি তৈরি করেছিল তৎকালীন জার্মানির নাৎসি বাহিনী তখন নাৎসি শাসনের প্রধান এডলফ হিটলার। এ বিমানের ভিতরে মাঝখানের ফাঁকা জায়গায় বসানো হয়েছিল ১৬টি বিশাল আকার হাইড্রোজেন গ্যাস বেলুন এ হাইড্রোজেন গ্যাস এটিকে আকাশে ভাসিয়ে রাখতো। টাইটানিকের সাথে এ বিমানের প্রধান কিছু মিল হলো এর বিশাল আকার যেটি এখন পর্যন্ত মানুষের তৈরি সবচেয়ে বড় বিমান। এটির দৈর্ঘ্য এতটাই বড় ছিল যে বর্তমান বোয়িং Boeing 747 বিমানের চারটির সমান প্রায়।

এসএইচ-০৯/১৪/২২ (অনলাইন ডেস্ক)